ইস্পাত খাতে অস্থিরতা: বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, স্টিল ও অক্সিজেন কারখানা

অর্থনীতি

09 February, 2023, 03:35 pm
Last modified: 09 February, 2023, 08:32 pm
খাত নির্ভরশীল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন লিংকেজ ব্যবসায় সম্পৃক্ত আরো ৫০ হাজার মানুষের জীবিকা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

গভীর সংকটে দেশের ইস্পাত শিল্প খাত। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দরবৃদ্ধি, ডলার সংকটের ফলে আমদানি কমে যাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের বাজারও।

চার দশকে গড়ে ওঠা শিল্পটিকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ৮০ শতাংশ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, ইস্পাত ও অক্সিজেন কারখানা বন্ধ হয়েছে গত তিন বছরে। ফলে কাজ হারিয়েছেন তিন খাতের প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। এছাড়া এ খাতের ওপর নির্ভরশীল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন লিংকেজ ব্যবসায় সম্পৃক্ত আরো ৫০ হাজার মানুষের জীবিকা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

শিপব্রেকিং খাত

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকরা জানিয়েছেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আসে আরেকটি ধাক্কা। ফলে জাহাজভাঙা শিল্পের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ জাহাজের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।

এরপর ২০২২ সালের শেষদিকে কাঁচামালের দাম কিছুটা কমে আসে। তবে তখন দেশের ব্যাংক খাতে ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী স্ক্র্যাপ আমদানি করতে পারেনি ইয়ার্ড মালিকরা। ফলে কাঁচামাল সংকটে বেশিরভাগ ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) তথ্যমতে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলে ১৬০টি শিপ ইয়ার্ড রয়েছে। এরমধ্যে ২০১২ সালের পর থেকে বন্ধ হতে হতে ২০১৯ সালে এসে ইয়ার্ডের সংখ্যা ৯০টিতে নেমে আসে। ২০১২ সালের পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দামের উত্থান-পতন, চাহিদার চেয়ে বাড়তি আমদানি, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আবাসন ব্যবসার মন্দায় লোকসানে পড়ে এসব ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যায়।

করোনা-পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে প্রায় ৩০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় আরো ৪০ ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ২০ থেকে ২২টি ইয়ার্ড কোনোরকমে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বিএসবিএ'র হিসেব বলছে, প্রতিটি ইয়ার্ডে গড়ে ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করলে গত তিন বছরে সংকটের কারণে বন্ধ হওয়া প্রায় ৪০টি কারখানার প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এর আগে করোনা সংকটে কারখানা বন্ধ থাকায় চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক।

সম্প্রতি বন্ধ হওয়া ইয়ার্ডগুলো হলো: হাবিব শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, মজিদ শিপ ব্রেকিং, রহিম শিপ ব্রেকিং, লাকী শিপ ব্রেকিং, ক্রিস্টাল শিপ ব্রেকিং, প্রাইম শিপ ব্রেকিং, তানিয়া শিপ ব্রেকিং, রহমানিয়া শিপ ব্রেকিং, রতনপুর শিপ ব্রেকিং, ভাটিয়ারি শিপ ব্রেকিং, এস ট্রেডিং শিপ ব্রেকিং, এস এল শিপ ব্রেকিং, ক্রিস্টাল শিপ ব্রেকিং, প্যাসিফিক শিপ ব্রেকিং, ওডব্লিও শিপ ব্রেকিং, মাহিন শিপ ব্রেকিং, মাবিয়া শিপ ব্রেকিং, পাকিজা শিপ ব্রেকিং, মুক্তা শিপ ব্রেকিং, সিকু স্টিল শিপ ব্রেকিং, ঝুমা শিপ ব্রেকিং, সেভেন বি এসোসিয়েটস শিপ ব্রেকিং, এএনএম শিপ ব্রেকিং, শীতল শিপ ব্রেকিং, আল ছফা শিপ ব্রেকিং ও আরএ শিপ ব্রেকিং। 

লালবাগ শিপ ব্রেকিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম উদদৌলা বলেন, ডলার সংকটে ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের এলসি সুবিধা দিচ্ছে না কোনো ব্যাংক। যার ফলে গত জুনের পর থেকে বেশিরভাগ ইয়ার্ড মালিক স্ক্যাপ শিপ আমদানি করতে পারেনি। ফলে কাঁচামাল সংকটে ইয়ার্ড বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে শিপ ব্রেকিং, ইস্পাত ও অক্সিজেনসহ পুরো ইস্পাত খাতে আরো খারাপ অবস্থা তৈরি হবে।

বিএসবিএর সভাপতি আবু তাহের টিবিএসকে বলেন, 'ইস্পাত শিল্পের চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি না কাটলে কয়েক মাস পর কাঁচামালের তীব্র সংকট হতে পারে। গত বছরের শেষ কয়েক মাস বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম নিম্নমুখী ছিল। কিন্তু দেশে ডলার সংকটের কারণে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি উদ্যোক্তারা। গত দুমাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এক কথায়, উদ্যোক্তারা এখন দিশেহারা।'

কারখানার মালিকদের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশীয় বাজারে প্রতি টন মেল্টিং স্ক্র্যাপ ৬৫ হাজার টাকা, প্লেট ৭৩ হাজার টাকা এবং বিলেট ৭৮ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে মেল্টিং স্ক্র্যাপ সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টাকা, প্লেট ৫৮ হাজার টাকা এবং বিলেট ৬৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি টন স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ থেকে ৪৯০ ডলারের মধ্যে। যা গত নভেম্বরে ছিল সর্বোচ্চ ৪৩০ ডলার। যা গত জুন মাসে ছিল ৫৯১ ডলার।

ইস্পাত খাত

ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, মহামারি কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে গত দুই বছর বিশ্ববাজারে ইস্পাতের কাঁচামালের দাম ছিল বাড়তি। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে কাঁচামালের দাম আরো বেড়ে যায়। এতে রডের দাম অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।

গত বছরের শেষার্ধে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম স্বাভাবিক হলে রডের দামও কিছুটা কমে আসে। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও একই সময়ে দেশে ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় কমেনি। পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। জ্বালানি সংকটে দৈনিক এক বেলা করে উৎপাদন বন্ধ রাখে বেশিরভাগ কারখানা। বিরতিহীন উৎপাদন করতে না পারায় খরচও বেড়ে যায়। এরপর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সরকার। যার প্রভাবে রডের উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে যায়।

খাতসংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত দুই বছরে রডের উৎপাদন খরচ অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচের সাথে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় না হওয়ায় ইতোমধ্যে ৮৬ শতাংশ কারখানার রড উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।

এইচএম স্টিলের পরিচালক সারওয়ার আলম টিবিএসকে বলেন, 'রডের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বিক্রয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা যাচ্ছে না। ফলে অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান কোনোভাবে উৎপাদন চালু রাখতে কারখানা ও শ্রমিকদের বেতন এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো টিকে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোরও ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন কমিয়ে ফেলেছে।'

চিটাগাং স্টিল রি-রোলিং মিলস ওনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এম মনজুর আলম বলেন, 'চট্টগ্রামে অটো (৭৫ গ্রেড), সেমি অটো (৬০ গ্রেড) ও ম্যানুয়ালসহ (৪০ গ্রেড) প্রায় ৫০টি ইস্পাত কারখানা ছিল। এরমধ্যে ৪৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় করতে না পারায়। ফলে বেকার হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।'

শীতলপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজিম উদ্দিন বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে ৬০ গ্রেড ও সাধারণ ৪০ গ্রেডের রডের চাহিদা কমে গেছে। দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে রডের দাম। এজন্য নির্মাণ শিল্পেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। বর্তমানে শুধু উচ্চবিত্ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রকল্পের জন্য রড কেনাবেচা হচ্ছে।

সেমি অটো কারখানাগুলো মধ্যে সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে পেনিনসুলা স্টিল, এসএল স্টিল, নাজিয়া স্টিল, বিএম স্টিল, ইউনিভার্সেল স্টিল, বলাকা স্টিল ও আম্বিয়া স্টিল।

এর আগে গত দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম), এহসান রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, রাইজিং স্টিল, এম কে স্টিল বিল্ডার্স লিমিটেড, ইসলাম স্টিলস লিমিটেড, ইউনিক স্টিল, খলিল স্টিল, ভাটিয়ারি স্টিল, মজিদ স্টিল, মানতি স্টিল, ব্রাদার্স ইস্পাত, আম্বিয়া স্টিল, হিলভিউ স্টিল, সুপার স্টিল, শফিউল আলম স্টিল, দিনার স্টিল ও এম টি স্টিলস লিমেটেড।

কোনোভাবে উৎপাদন চালু রেখেছে এইচএম স্টিল, গোল্ডেন স্টিল, কেআর স্টিল, বায়েজিদ স্টিল, এশিয়া স্টিল, শীতলপুর স্টিল ও সীমা স্টিল।

দেশের শীর্ষ রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের ডিএমডি তপন সেন গুপ্ত বলেন, 'করোনার পর থেকে ইস্পাত খাতে নানামুখী সংকট চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন মেল্টিং স্ক্র্যাপের দাম ঠেকে ৭৫০ ডলারে। ডেফার্ড এলসির মাধ্যমে আমদানি করা এসব কাঁচামালের পেমেন্ট গুনতে হয়েছে ডলারপ্রতি ১১৫ টাকায়। অর্থাৎ ৮০ হাজার টাকায় কাঁচামাল আমদানি করে ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য খরচ যোগ করে প্রতি টন রড উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু রড বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৩ হাজার টাকার মধ্যে। এখনো প্রতিটন রডে ৮-১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

'কিন্তু লোকসানের কারণে আমরা যদি কারখানা বন্ধ রাখি তাহলে এই লোকসান আরো বাড়বে। কারণ প্রতিটি কারখানার বা কোম্পানির স্থায়ী স্টাফদের বেতন ও হাউজ রেন্টসহ প্রতি মাসে বহু টাকা ফিক্সড কস্ট রয়েছে। তাছাড়া কারখানা বন্ধ করলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। তাই লোকসান দিয়ে হলেও কারাখানার উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।'

বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনিভার্সেল স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুত সংকট ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্য়ন্ত দুটি কারখানায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। লোকসান টানতে না পেরে জুলাইয়ের পর থেকে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছি। এতে কারখানা দুটির প্রায় ৩০০ শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে।

'এরপরও স্থায়ী স্টাফদের বেতন, কারখানার ভাড়া ও গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল মিলে দুটি কারখানায় এখনো প্রতিমাসে ২৮ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারখানা বন্ধ থাকায় ব্যাংক ঋণের কিস্তিও দিতে পারছি না। যেখানে প্রতিমাসে ২০ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক সুদ যোগ হচ্ছে।'

চিটাগাং স্টিল রি-রোলিং মিলস ওনার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের তথ্যমতে, সব কারখানা সচল থাকলে চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩২ লাখ টন এমএস রড উৎপাদন হয়। প্রায় ৮৬ শতাংশ কারখানা বন্ধ থাকায় এখন প্রতিদিন রড উৎপাদন নেমেছে ১০-১৫ লাখ মেট্রিক টনে।

বর্তমানে বাজারে ৭৫ গ্রেডের (টিএমটি) বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এমএস রড ৯২-৯৪ হাজার টাকা এবং সেমি অটো মিলের ৬০ গ্রেডের রড ৮৯-৯১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

অক্সিজেন খাত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কেআর অক্সিজেন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৭০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদন করে। মূলত জাহাজ ভাঙার কাজে এসব অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অক্সিজেনের চাহিদা কমে গেছে। এছাড়াও উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে কারখানা অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র ৫-৭টি সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদিত হচ্ছে। এতে মাসে ৩৫-৪০ লাখ টাকা লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি। কারখানাটির শ্রমিকসংখ্যাও ১৫০ থেকে ৮৫ জনে নেমে এসেছে।

কেআর গ্রুপের চেয়ারম্যান সেকান্দার হোসেন টিংকু টিবিএসকে জানান, 'কারখানায় মাত্র ৩৫-৪০ জন কর্মী রয়েছে। কর্মীদের বেতন ও গ্যাস-বিদ্যুৎসহ মাসে কারখানা ব্যয় অন্তত ৫০ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৪০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে উৎপাদন কমায়। তাই আগামী মাস থেকে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

চার মাস আগে বন্ধ হয়ে গেছে ব্রাদার্স অক্সিজেন লিমিটেড। সে কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদন হতো।

চট্টগ্রামে শিপ ব্রেকিং খাতকে কেন্দ্র করে বহু ইস্পাত ও অক্সিজেন কারখানা গড়ে উঠেছিল। এরমধ্যে শিপ ব্রেকিং থেকে প্রাপ্ত স্ক্র্যাপ দিয়ে ইস্পাত কারখানা তৈরি হতো। শিপ ব্রেকিং করার কাজে অক্সিজেন ব্যবহার করা হতো।

মূলত ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিল শিপ ব্রেকিং খাতের রমরমা ব্যবসা। এরপর আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে স্ক্র্যাপের দামের উত্থান-পতনের কারণে অনেক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মালিক লোকসানে পড়েন। এরপর ধীরে ধীরে এই তিন খাতে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তী সময়ে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিপ ব্রেকিং ও ইস্পাত খাতে কিছুটা গতি ফিরলেও এই সময়ে ছোট ছোট উদ্যোগগুলো তেমন সুবিধা করতে পারেনি। বরং বড় উদ্যোক্তারাই বেশি লাভবান হয়েছেন। বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজ ও ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন বড় উদ্যোক্তারা। এই সময়ে সংকটে পড়েন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডকে ঘিরে একসময় চট্টগ্রামে প্রায় ১৫টি অক্সিজেন কারখানা গড়ে উঠলেও গত দুই বছরে আটটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

গত দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো হলো: রিগ্যাল অক্সিজেন লিমিটেড, এআরএল অক্সিজেন লিমিটেড, এসএল অক্সিজেন লিমিটেড, ফয়জুন অক্সিজেন লিমিটেড ও রাইজিং অক্সিজেন লিমিটেড।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.