২০২২ সালে আইপিও-তে খারাপ অবস্থানে ব্যাংক, সেরা পারফর্ম্যান্স বীমা প্রতিষ্ঠানের

অর্থনীতি

08 January, 2023, 10:30 am
Last modified: 08 January, 2023, 10:59 am
ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার ডিরেক্টর শাকিল রিজভী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০২২ সালের পুরোটা সময়জুড়ে ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক খবরের প্রভাব ছিল বেশি। আবার প্রচার হওয়া এ খবরগুলোর সত্যতা নিয়ে নীরব থেকেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া ব্যাংক দুটির শেয়ারে।"

ঋণ বিতরণে অনিয়ম এবং লিক্যুইডিটি ক্রাইসিস (তারল্য সংকট)-এর খবর দিয়ে ২০২২ সালের পুরো সময় জুড়েই ব্যাংকিং খাত আলোচনায় ছিল। এরই জেরে ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। যার প্রভাবে গত বছর তালিকাভুক্ত দুটি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে। 

কিন্তু সাধারণত স্টক এক্সচেঞ্জের সেকেন্ডারি মার্কেটে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। কারণ নতুন শেয়ারের লেনদেন থেকে বড় মুনাফা তোলেন বিনিয়োগকারীরা। এমনটিই ঘটছে বছরের পর বছর ধরে।

সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সের এক প্রতিদবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সেকেন্ডারি মার্কেটে ব্যাংক দুটির শেয়ার লেনদেন শুরুর প্রথম দিন থেকেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা যায়নি। এতে যারা ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও)- এর মাধ্যমে শেয়ার পেয়েছেন, বর্তমানে লোকসানে রয়েছেন তারা।

অথচ গত বছর তালিকাভুক্ত চারটি বীমা কোম্পানি এবং তিনটি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা করে বড় মুনাফা তু্লেছেন বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার ডিরেক্টর শাকিল রিজভী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০২২ সালের পুরোটা সময়জুড়ে ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক খবরের প্রভাব ছিল বেশি। আবার প্রচার হওয়া এ খবরগুলোর সত্যতা নিয়ে নীরব থেকেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া ব্যাংক দুটির শেয়ারে।"

তিনি আরো বলেন, নতুন কোম্পানির শেয়ারের উল্লম্ফন প্রায়ই দেখা যায়। বিশেষ করে লেনদেন শুরুর প্রথম কিছুদিন শেয়ারদরে বড় উল্লম্ফন ঘটে। এর কিছুদিন পরেই আবার শেয়ার দর পড়ে যায়। এতে বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হন। আবার শেয়ারবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই অস্বাভাবিক হারে শেয়ার দর বৃদ্ধিও ঠিক নয়।

২০২২ সালের নতুন শেয়ার

গত বছর ডিএসই এর সেকেন্ডারি মার্কেটে ৯টি কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই নয় কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ছেড়ে মোট ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।

এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক নিয়েছে যথাক্রমে ৪২৮ এবং ৪২৫ কোটি টাকা। এই দুটি ব্যাংক ১০ টাকা করে শেয়ার ছেড়েছিল।  

আর বাকী ৭টি কোম্পানির মধ্যে দুটি কোম্পানি জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট এবং নাভানা ফার্মা, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম নিয়ে শেয়ার ছেড়েছিল। এরমধ্যে জেএমআই হসপিটাল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২০ টাকা করে শেয়ার দিয়েছিল। আর এলিজিবল ইনভেস্টরদের কাছে শেয়ার বিক্রি করেছিল ২৫ টাকা দরে। কোম্পানিটি শেয়ার বাজার থেকে মোট ৭৫ কোটি টাকা তুলেছিল।

একইভাবে, নাভানা ফার্মা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৩.৮ টাকা দরে এবং এলিজিবল ইনভেস্টরদের কাছে ৩৪ টাকা দরে বিক্রি করে মোট ৭৫ কোটি টাকা তুলেছিল।

এছাড়া চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৫ কোটি টাকা, বিডি থাই ফুড ১৫ কোটি টাকা, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স ১৯.৪০ কোটি টাকা এবং ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ২০.৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। প্রত্যেক কোম্পানি ১০ টাকা ফেস ভ্যালু বা অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করেছিল।

এ বিষয়ে শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে আরো ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ানো প্রয়োজন।

২০২২ সালে আইপিও-তে খারাপ অবস্থানে ছিল ব্যাংক

২০২২ সালে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আইপিও ১০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন নিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ছিল। অন্যদিকে, ইউনিয়ন ব্যাংকের নেতিবাচক রিটার্ন ছিল ৭ শতাংশ।

তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আইপিও নিয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইউনিয়ন ব্যাংক; সেখানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক নভেম্বরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইপিও নিয়ে বাজারে প্রবেশ করে।

এই ব্যাংক দুটির শেয়ার বর্তমানে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। তাই এই দুটির শেয়ার দর আর কমতে পারেনি।

নিয়মের বাইরে বেশ কয়েকটি বড় ঋণ দেওয়ায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক গত বছর থেকে আলোচনায় রয়েছে। এমনকি লিক্যুইডিটি ক্রাইসিসের কারণে ব্যাংক দুটি সিআরআর (ক্যাপিটাল রিজার্ভ রেশিও) বজায় রাখতেও ব্যর্থ হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ইউনিয়ন ব্যাংককে ১ হাজার ৪৬৫ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ৭০০ কোটি টাকা বিশেষ ধার দিয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় পত্রিকায়।

এ বিষয়ে ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, নেগেটিভ প্রভাবের কারণে এ দুটি ব্যাংকের শেয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
 
সিটি ব্যাংক ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এরশাদ হোসেন বলেন, অর্থবাজারের সংকটই এই ব্যাংক দুটির শেযার দর পতনের জন্য দায়ী।

২০২২ সালে সেরা আইপিও পারফর্ম্যান্স বীমা প্রতিষ্ঠানের

২০২২ সালের অক্টোবরে তালিকাভুক্ত হয় চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। গত বছর এই প্রতিষ্ঠানের আইপিও পারফর্ম্যান্স ছিল শীর্ষে, তালিকাভুক্তির পর থেকে এর রিটার্নের হার ৫০০ শতাংশের বেশি।

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরে রয়েছে বিডি থাই ফুড (৪০০ শতাংশ), মেঘনা ইন্স্যুরেন্স (৩২৮ শতাংশ), ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স (২৭৩ শতাংশ), জেএমআই হাসপাতাল (২৬৭ শতাংশ), নাভানা ফার্মা (২২৬ শতাংশ) এবং ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স (১৮১ শতাংশ)।

শহিদুল ইসলাম বলেন, এই কোম্পানিগুলোর আইপিও'র আকার ছোট; অর্থাৎ শেয়ার সংখ্যা কম। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম জল্পনা-কল্পনার ভিত্তিতে বাড়লেও বড় আইপিওর ক্ষেত্রে এ ধরনের বিষয় সহজে কাজ করে না। 

এদিকে শাকিল রিজভী বলেন, আইপিও শেয়ার লেনদেনের প্রথম কিছুদিন ৪০০ থেকে ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এরপরেই আবার শেয়ার দর কমে যায়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসান বেশি হয়। বর্তমান শেযারবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটে যে সংকট, তার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ। এ ধরনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজর বাড়াতে হবে।

২০১৯ সালের আগে নতুন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে প্রথম তিনদিন কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। অর্থাৎ, প্রথম তিনদিন শেয়ার দর বৃদ্ধি বা হ্রাসে কোনো সীমা ছিল না। আর এই সুযোগ ব্যবহার করে আশঙ্কাজনক হারে কারসাজি বৃদ্ধি পেলে ২০১৯ সালে বিএসইসি প্রথম দুই দিন ৫০ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার বেঁধে দেয়। অর্থাৎ, শেয়ার ছাড়ার প্রথম দুইদিনে এর দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ হারে বাড়তে বা কমতে পারবে। 

এরপরও কারসাজি না থামলে বিএসইসি ২০২১ সালের মে মাসে আইপিও শেয়ারের লেনদেনের প্রথম দিন থেকেই ১০ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার বেঁধে দেয়। ফলে এখন আইপিও শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করতে সময় লাগছে বেশি। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.