ডলার বিক্রির রেট আরো ১ টাকা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 

অর্থনীতি

07 December, 2022, 10:05 am
Last modified: 07 December, 2022, 11:28 am
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১০ বার ডলারের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর ১ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত সোমবার ডলারের রেট ৯৮ থেকে বাড়িয়ে ৯৯ টাকা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত নভেম্বরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট ১ টাকা বাড়িয়ে ৯৮ টাকা করা হয়েছিল। গত ১২ অক্টোবর ডলারের রেট ৯৬ থেকে বাড়িয়ে ৯৭ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৯৮ টাকা করে ডলার সংগ্রহ করেছিলাম। তবে সোমবার সেটি বাড়িয়ে ৯৯ করা হয়েছে। মঙ্গলবার এই রেটে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে।'

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১০ বার ডলারের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার নতুন দামে ৯৮ মিলিয়ন বিক্রি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর কাছে ৬৭ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ মাসে রিজার্ভ থেকে ৬.৬০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩.৯৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির এই রেটটিকে বলছে 'বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট'। যে ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে সেটিকে বলা হচ্ছে বাজারের সঙ্গে 'এডজাস্টমেন্ট'। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেলিং রেট বাড়লে সেটিকে 'টাকার অবমূল্যায়ন' বলে ধরা হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে দাম বাড়িয়ে দেয় সেটি একরকম মুদ্রার অবমূল্যায়নই।

এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতো সেটিকে 'ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট' নামে অভিহিত করা হতো। স্বাভাবিক অবস্থায় এই দামেই ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ডলার কেনাবেচা করতো। তবে, চলমান ডলার সংকটের কারণে বাজারে ডলারের দাম অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এই রেটটি একরকম অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে লেনদেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।

চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ডলারের ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট ছিল ৮৫.৮০ টাকা। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছিল ৯৫ টাকা রেটে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত রেটে ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে ডলার কেনাবেচার বাধ্যবাধকতাটি তুলে দিলে সচল হয় ইন্টারব্যাংক লেনদেন।

পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেদের ডলার বিক্রির দামের বদলে ইন্টারব্যাংক লেনদেনে ডলারের দামের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন রেট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে থাকে। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী দামে ডলার বিক্রি করছে, সেটি আর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে না। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে সর্বনিম্ন ১০২.৬৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা রেটে ডলার কেনাবেচা করছে।

বাফেদার করা ৫৭টি ব্যাংকের ডলার কেনার ওয়েটেড অ্যাভারেজ রেট বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ব্যাংকগুলো সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০৬.৫০ টাকা করে ডলার কিনেছে। কেনার এই রেট থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা মুনাফা যোগ করে এলসি সেটেলমেন্টে ডলার বিক্রি করতে পারে ব্যাংকগুলো।

এছাড়া বর্তমান বাজারে ডলারের আরো কয়েকটি রেট চালু আছে। বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক্সপোর্ট প্রসিডের ডলার ভাঙানোর ক্ষেত্রে ১০০ টাকা এবং রেমিট্যান্সের ডলারে ১০৭ টাকা রেট দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.