চলতি বছর বিদেশে ১১ লাখ কর্মসংস্থানের রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা 

অর্থনীতি

05 December, 2022, 06:35 pm
Last modified: 05 December, 2022, 06:42 pm
জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা এই প্রবণতার জন্য- মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু হওয়া এবং জ্বালানি তেলের চড়া দামের সুবাদে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিগুলো চাঙ্গা থাকার কথা বলছেন। এছাড়া, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে পারছেন বলেও জানান তারা। 

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাবস্থায় বাংলাদেশমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও– চলতি বছর বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি– সাম্প্রতিক রেকর্ডগুলো ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-র তথ্যমতে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে গিয়েছেন ১০.২৪ লাখ বাংলাদেশি কর্মী। ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৯৩ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। করোনা মহামারি পূর্বের  সময়ে মাসিক গড় ছিল প্রায় ৬০-৭০ হাজার। 

বিএমইটি মহাপরিচালক মো: শহীদুল আলম জানান, শুধু নভেম্বরেই ৭৬ হাজারের বেশি কর্মী বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী এই ধারা অব্যাহত থাকলে, ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ১১ লাখে পৌঁছানোর রেকর্ড করবে। 

জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা এই প্রবণতার জন্য- মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু হওয়া এবং জ্বালানি তেলের চড়া দামের সুবাদে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিগুলো চাঙ্গা থাকার কথা বলছেন। এছাড়া, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে পারছেন বলেও জানান তারা। 

তারা আরও জানান, সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের কোটা ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৪০% করার ঘটনাও- জনশক্তি রপ্তানির রেকর্ড প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। 

এর আগে ২০১৭ সালে বার্ষিক ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান। কিন্তু, পরের বছরগুলিতে তা পতনের দিকে যেতে থাকে। আর ২০২০ সালে মহামারিজনিত বিধিনিষেধের ফলে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২.১৭ লাখে।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বেশিরভাগ কর্মী অদক্ষ ও স্বল্প-দক্ষতার হওয়ায়–মানসম্পন্ন জনশক্তি রপ্তানি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষ কর্মী পাঠানো গেলে রেমিট্যান্সও বাড়তো।  

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-র মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, 'কোভিডের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় শ্রমিক চাহিদা বাড়ায়– বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক কর্মী পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও নতুন কর্মীরা যাচ্ছে'। 

তথ্যচিত্র: টিবিএস

তবে মালয়েশিয়ায় এখনও প্রত্যাশিত সংখ্যায় কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গত ছয় মাসে মালয়েশিয়ায় আমরা দুই লাখের বেশি কর্মী পাঠানোর আশা করেছিলাম। কিন্তু, এপর্যন্ত গেছে মাত্র ২৫ হাজার। দেশটিতে কর্মী পাঠানোর দায়িত্ব পাওয়া ২৫ সংস্থা যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না'।

'পাশাপাশি পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতেও আমাদের দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত'- যোগ করেন তিনি।  

প্রবাসী বাংলাদেশিদের শীর্ষ গন্তব্য সৌদি আরব, অক্টোবরে মোট বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ৫৭ শতাংশ হয়েছে সৌদিতে। এরপর ছিল ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও জর্ডান। 

ফোর- সাইট ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী শাহাদাৎ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সৌদি আরব ও ওমানে বেশিরভাগ শ্রমিক গেছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নির্মাণ কর্মী ও গৃহস্থালি কর্মী হিসেবে, তাদের মাসিক বেতন ২৫-৩০ হাজার টাকা। এছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনেকে নিরাপত্তা রক্ষী ও ড্রাইভার হিসেবে গেছে, তাদের মাসিক বেতন ৩৫-৪০ হাজার টাকা।" 

এছাড়া কিছু দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী বিভিন্ন দেশে প্লাম্বার এবং রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারের ইলেকট্রিশিয়ান বা টেকনিশিয়ান হিসেবে গেছে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ হাজারের বেশি কর্মী পাঠানোর রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বিওইএসএল)। কোরিয়ান এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) এর আওতায় এসব কর্মী পাঠানো হয়। এতে করে তারা উচ্চ বেতন, শ্রম অধিকারসহ অন্যান্য সুবিধা পাবে।

ইউরোপীয় গন্তব্যগুলির মধ্যে– ইতালি চলতি বছরে ৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।

সরকারি তথ্যানুসারে, ১৯৭৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশির।

তবে এখনও আন্তর্জাতিক জনশক্তি বাজারে বাংলাদেশ স্বল্প-দক্ষ (বা অদক্ষ) কর্মী উৎস হিসেবেই পরিচিত।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)-র তথ্যমতে, ২০২১ সালে বিদেশে যাওয়া ৭৪ শতাংশ শ্রমিকই ছিল অদক্ষ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সম্প্রতি টিবিএসকে বলেছিলেন, "প্রবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া মানেই অদক্ষ শ্রমিক পাঠানো নিরুৎসাহিত করা নয়। কারণ অদক্ষ কর্মীদের মাধ্যমে তুলনামূলক বেশি আয় দেশে আসে"।

তবে অনেক প্রবাসী কর্মী অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল বা হুন্ডির মাধ্যমে আয় পাঠানোর দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ায়–  বাংলাদেশমুখী প্রবাসী আয় প্রবাহ (আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে) ব্যাপকভাবে কমেছে।

নভেম্বরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা (আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে) ১৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান, যা আগের মাসের চেয়ে কমেছে ৫.৪৮ শতাংশ। বছরওয়ারি হিসাবে এই পতন ২৬ শতাংশ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা গেছে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, 'ব্যাংকের জন্য ডলারের একক দর নির্ধারণই রেমিট্যান্সে এই পতনের অন্যতম কারণ'। বিদেশে চাকরিরত দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ডলারের দরে তারতম্যের দিকটিও উল্লেখ করেন তিনি।

যেমন বিদেশি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করা দক্ষ কর্মীরা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে– প্রতি ডলারের বিনিময় দর ১০৭ টাকা পান। অন্যদিকে, অদক্ষ শ্রমিকরা যাদের বেতন হয় ব্যাংকের চেকে, পান মাত্র ৯৯ টাকা।

জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের খুব সীমিত সংখ্যক কর্মী দক্ষ এবং প্রবাসে ভালো চাকরি করে। এরা মোট প্রবাসী কর্মীর মাত্র ১০ শতাংশ। অন্যদিকে, বাকি ৯০ শতাংশই হলেন শ্রমিক। 

 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.