৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি আইএমএফ, প্রথম কিস্তি ফেব্রুয়ারিতে

অর্থনীতি

09 November, 2022, 11:30 pm
Last modified: 10 November, 2022, 02:20 pm
এই ঋণ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত কিস্তিতে বিতরণ করা হবে। ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৪৭.৭৮ মিলিয়ন ডলার আসবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বাকি সবগুলো কিস্তিতে ৬৫৯.১৮ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বাংলাদেশ সরকার ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ঋণটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। 

বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, 'আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই ঋণ পাচ্ছি। মোট ৪.৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া হবে।'

তিনি আরও জানান, 'এই ঋণ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত কিস্তিতে বিতরণ করা হবে। ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৪৭.৭৮ মিলিয়ন ডলার আসবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বাকি সবগুলো কিস্তিতে ৬৫৯.১৮ মিলিয়ন ডলার করে দেওয়া হবে।

'ঋণের সুদের হার এটি ম্যাচিউরিটির সময় বাজারের হারের ওপর নির্ভর করবে। অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ হার প্রায় ২.২ শতাংশ হতে পারে।'

আইএমএফ নন-পারফর্মিং ঋণ কমাতে এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। 

তবে সরকারি ভর্তুকি নিয়ে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি কিছু বলেনি বলে জানান কামাল। 

এদিকে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশকে ঋণসহায়তা করার বিষয়ে আইএমএফের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ সমঝোতায় পৌঁছেছে। বর্ধিত ঋণ-সুবিধা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল–সুবিধার (ইএফএফ) আওতায় ৩.২ বিলিয়ন ডলার এবং রেজিলিয়েন্স সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হবে। এ ঋণ দেওয়া হবে ৪২ মাসের মেয়াদে।

আইএমএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এবং নানা ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টিকারী উপাদান ঠেকাতে নতুন এ ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে সহায়তা দিতে কাঠামোগত পরিবর্তনেও জোর দেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার জোরদার এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, 'ভ্যাট আদায়ের জন্য আমরা ইএফডি মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ যাবত ৬ হাজার ৭৩২টি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আগামী বছরে আরও ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে এবং পরবর্তী ৪ বছরে ২ লক্ষ ৪০ হাজার মেশিন স্থাপিত হবে।'

মুস্তফা কামাল বলেন, সামনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলে দেশের অভ্যন্তরেও যেন তা একইভাবে কমানো যায়, তার জন্য জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সাথে সময়ে সময়ে সমন্বয় করা হবে। এছাড়া টাকার বিনিময় হার ধীরে ধীরে বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে; সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং সেদিকে লক্ষ রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে; দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়নের পরিকল্পনা করা হবে, যার মধ্যে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়টিও থাকবে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সফরকারি আইএমএফের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী রাহুল আনন্দ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও হুমকিতে আছে। ২০৩১ সালের মধ্যে নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে থেকে মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে অবকাঠামো সমস্যার সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে এবং জলবায়ু স্থিতিশীলতা আনতে হবে/ 

প্রধান পাঁচ উপাদান

আইএমএফ বলেছে এই, কর্মসূচিতে পাঁচটি মূল উপাদান থাকবে।

প্রথমটি হলো, রাজস্ব বাড়াতে হবে এবং যৌক্তিক ব্যয় ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশেষ করে প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। যারা নাজুক অবস্থায় থাকবে, সেসব খাত লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিতে হবে।

দ্বিতীয়টি হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং মুদ্রানীতির কাঠামোকে আধুনিকীকরণ করা, যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

তৃতীয় উপাদান হলো, তদারকি জোরদার, সরকার ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের আওতা বৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা।

চতুর্থটি হলো, বাণিজ্য ও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মানব দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ানো।

পঞ্চম ও সর্বশেষ এজেন্ডা হলো, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা, উন্নত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং জলবায়ু অর্থায়ন বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।

আইএমএফ দল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অন্যান্য সরকারি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।

বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, দ্বিপাক্ষিক দাতা, থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সাথেও দেখা করে দলটি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের রিজার্ভ হুমকির মুখে পড়ায়, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দেশ ডলার ঘাটতির দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ায় সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল। 

কোনো কঠিন শর্ত নেই

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অনেকের ধারণা ছিল, বাংলাদেশ ঋণটি পাবে না, পেলেও আইএমএফ অনেক কঠিন শর্ত দেবে। কিন্তু তেমনটি হয়নি। 

'আমাদের যেসব কাজ করা প্রয়োজন, আইএমএফ সেসব শর্তই দিয়েছে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানো এবং এনবিআরের রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করছিলাম। আইএমএফও এ দুটি কাজ করতে বলেছে। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য আমরা আগে থেকেই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এটা করব,' বলেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে যদি আইএমএফ বলে যে সবকিছু ঠিক আছে, তাহলে কোনো দেশ সে বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারে না। 

কর অব্যাহতি না দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি, তবে আইএমএফকে বোঝানো হয়েছে যে, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে কর অব্যাহতি দিতে হবে। নাহলে দেশের দরিদ্র মানুষ বাঁচবে না।

২০১২ সালের ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অনেক দেরি করেছে বলে উল্লেখ করেছে আইএমএফ। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি পৃথিবীর সবদেশেই বাড়তি। আইএমএফও এ বিষয়ে একমত।

ব্যাংকঋণের সুদের সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ক্যাপ তুলে দিলে সুদহার আগের মতো ১৮-২০ শতাংশ হয়ে যাবে, যা কারও কাম্য নয়। 

রিজার্ভের হিসাবে ইডিএফ-এর ঋণ যুক্ত করার কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইডিএফের ঋণ সরকারের এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হয়। তাই একয়ে রিজার্ভে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু আইএমএফ এটি বাদ দিয়ে হিসাব করতে বলেছে।

তিনি বলেন, রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন খাতে কত খরচ হয়েছে এবং নেট রিজার্ভ কত আছে, তা দেখিয়ে রিজার্ভ হিসাব করা হবে। 'আমরা পুরোটাই ডিসক্লোজ করবো, কিছুই লুকাব না,' বলেন তিনি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার জানান, চারটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে আইএমএফ এর ঋণ সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্যগুলো হলো—বৈদেশিক খাত স্থিতিশীল করা, আর্থিক খাত স্থিতিশীল করা, এলডিসি উত্তরণ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা।

খেলাপি ঋণ নিয়ে শর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবায়ন সম্পর্কে গভর্নর বলেন, 'আমরা মোট রিজার্ভ দেখাই। আইএমএফ নেট রিজার্ভ দেখাতে বলেছে। আমরা দুটিই দেখানোর কথা বলেছি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় যেতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।' 

ইডিএফের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাইলেই এটি ১২০ দিনের মধ্যে লিকুইড করা যায়। 

রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো জানিয়েছে যে তারা কোনো ফি নেবে না। শ্রমিকরা যাতে ছুটির দিনেও রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন দেশে ছুটির দিনেও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো খোলা থাকবে। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তি পাওয়ার আগে কী কী করতে হবে এবং ছয় মাস পরপর প্রতিটি ছাড় রিলিজ করার আগে কোন ধরনের বাস্তবায়ন করতে হবে, সে বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা আইএমএফ কেউ কিছু বলেনি। 

তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে চাপ চলছে এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে, সেটি মোকাবেলায় কখন, কী ধরনের কর্মসূচি আইএমএফের কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়ন হবে, সে সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি। 

এসব না জেনে মন্তব্য করা কঠিন বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার বড় কোনো অঙ্ক নয়, তবু এ ঋণ সাহায্য করবে।

'প্রতি বছর ব্যালান্স অভ পেমেন্টে ৫-৬ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি হলে এবং তা মেটাতে আইএমএফ থেকে ১-১.৫ বিলিয়ন ডলার জোগান পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া গেল,' বলেন তিনি। 

আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা ভালো যে সংকট শুরুর আগেই সরকার তা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সময়মতো আইএমএফ থেকে ঋণের নিশ্চয়তা পেয়েছে।

'এতে আমাদের অর্থনৈতিক টেনশন কিছুটা কমবে। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার কী কী শর্ত পালন করবে, তা না জেনে এই মুহূর্তে বলা যাবে না যে টেনশন পুরোপুরি কমবে কি না। 

'এই বছর হয়তো জিডিপি কমবে, কিন্তু আইএমএফ কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে মূল্যস্ফীতির চাপ ও ডলারের অস্থিরতা কিছুটা কমে আসবে,' জানান তিনি।

'বাংলাদেশ কখনও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি' 

ঋণ পরিশোধের বিষয়ে বাংলাদেশের সামর্থ্যের ওপর আস্থা ব্যক্ত করে আইএমএফ বলে, এ কর্মসূচির অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল রিজার্ভের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

অর্থ বিভাগের এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বলেন, বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি ধারণা করেছিল যে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাবে।

তিনি বলেন, 'মহামারী চলাকালে রিজার্ভ বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু সেটা একবারের জন্য। কারণ ওই সময় আনুষ্ঠানিক চ্যানেলই টাকা পাঠানোর একমাত্র উপায় ছিল এবং প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে রপ্তানি দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছিল। [অন্যান্য দেশে] প্রচুর বাণিজ্য বিমুখ হওয়ায় রপ্তানিও বেড়েছে। আমদানিও কম ছিল। এর ফলে রিজার্ভ কৃত্রিমভাবে বেড়ে যায়।'

রাহুল আনন্দ বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায়—বাংলাদেশ প্রায় সব জিনিসই আমদানি করে—সবকিছুর মূল্যই বেড়ে যায়। এর ফলে রিজার্ভ কমতে থাকে।

তবে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্বের সব দেশই মূল্যস্ফীতি ও ও রিজার্ভ নিয়ে চাপে রয়েছে উল্লেখ করে রাহুল আনন্দ বলেন, 'বাংলাদেশ বরাবরই আইএমএফের খুব ভালো অংশীদার। বাংলাদেশ কখনোই কোনো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। এবং নির্বাচনের কারণে এই ফ্রন্টে কোনো পরিবর্তন আসবে বলে আমাদের মনে হয় না।'

ইডিএফ গঠন এবং রিজার্ভের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমরা জিনিসগুলোকে কীভাবে হিসাব করি, সে বিষয়ে আইএমএফের কাছে একটি ম্যানুয়াল আছে—ব্যালান্স অভ পেমেন্ট ম্যানুয়াল। গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভে কোন আইটেমগুলো থাকতে হবে, সে বিষয়ে এটি আমাদের নির্দেশনা দেয়। আর কিছু মানদণ্ড আছে...মোদ্দা কথা হলো, রিজার্ভ থাকা উচিত এবং ভারমুক্ত থাকা উচিত। প্রয়োজনের মুহূর্তে যেন এটি ব্যবহার করা যায়। আমাদের দৃষ্টিতে, ইডিএফ গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভের হিসাবে আসে না।'

বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এটি কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি পরিস্থিতি, অর্থনীতি এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এরকম অনিশ্চিত সময়ে এটা বলা কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করে তিনি আবারও বাংলাদেশের ঋণের সঙ্গে জিডিপি অনুপাতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এটি টেকসই হওয়ার পথে নেই।

রাহুল আনন্দ জোর দিয়ে বলেন যে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করা হয়নি এবং আইএমএফ সরকারের বিশ্বস্ত উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছে।

'স্পষ্ট করে বলি: এটি কর্তৃপক্ষের কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মালিক তারা, সহায়তা করবে আইএমএফ।'

আইএমএফ কর্মসূচি হলো কর্তৃপক্ষকে স্বল্প মেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সাহায্য করা, আর্থিক সীমাবদ্ধতা শিথিল করা এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে সফলভাবে উত্তরণের জন্য দীর্ঘতর কাঠামোগত সংস্কারের ভিত্তি তৈরি করা এবং মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করা।

সবশেষে তিনি বলেন যে ঋণটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি এবং আইএমএফের ব্যবস্থাপনা দল ও নির্বাহী পরিচালকদের অনুমোদন লাগবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.