ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
05 November, 2022, 09:35 am
Last modified: 06 November, 2022, 11:54 am
ঘূর্ণিঝড়ের সময় চাক্তাইয়ের ৯০ শতাংশ এবং খাতুনগঞ্জের ৫০ শতাংশ দোকান ও গুদামে পানি ঢুকেছিল। যার ফলে দোকান ও গুদামে থাকা পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলা, চাল, ডাল, গমসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য ভিজে যায়।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের প্রধান ভোগ্যপণ্যের বাজার বৃহত্তর খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্যবসায়ীরা। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের সময় চাক্তাইয়ের ৯০ শতাংশ এবং খাতুনগঞ্জের ৫০ শতাংশ দোকান ও গুদামে পানি ঢুকেছিল। যার ফলে দোকান ও গুদামে থাকা পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলা, চাল, ডাল, গমসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য ভিজে যায়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির এক সভায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এই দাবি করেন। এসময় তারা খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে তা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানান।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, নির্মাণাধীন চাক্তাই ও রাজাখালী খালের স্লুইচ গেইট চালু না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের বড় অংশ তলিয়ে গিয়েছিল। ফলে বৃষ্টি ছাড়াই নিচু এলাকার দোকান ও গুদামে জোয়ারের পানি ঢুকছে। এতে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, এদিকে নির্মাণাধীন স্লুইস গেটের কারণে খাতুনগঞ্জের বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কারণ স্লুইসগেটগুলোতে নৌযান চলাচলের জন্য যে রাস্তা রাখা হয়েছে তা খুবই ছোট। যে কারণে বড় নৌযান ভেতরে ঢুকতে না পেরে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে।

একসময় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ৯০ শতাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য হতো নৌপথে। কালের পরিক্রমায় নৌপথের ব্যবসা নেমে এসেছে মাত্র ১০ শতাংশে। কিন্তু খালগুলোর মুখে নির্মাণাধীন সরু স্লুইস গেটের কারণে বাজারে নৌযান প্রবেশ করতে না পারায় তাও এখন সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল, ভোলা, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপসহ দীপ অঞ্চলগুলোতে পণ্য পরিবহনে বেশি সমস্যা হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেলের কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে দাবি করে সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, 'ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি ও সীতাকুণ্ডের দারোগাহাটের ওজন স্কেলের কারণে ৬ চাকার ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে ১৩ টনের বেশি পণ্য আনা যাচ্ছে না। দেশের আর কোথাও ওজন স্কেল না থাকায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই চট্টগ্রামেই ইস্পাত, সিমেন্ট, রড, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙাসহ বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ও কোরবানিগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজারের পাশাপাশি পাহাড়তলীতে চালের পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হচ্ছে। তাই প্রতিবন্ধক এই ওজন স্কেল প্রত্যাহার করা জরুরি।'

চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে প্রায়ই উঠছে জোয়ারের পানি। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে বাজারের প্রতিটি দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে শত কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে— এমনটাই দাবি ব্যবসায়ীদের। তাই খাতুনগঞ্জে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে গত ৩১ অক্টোবর পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। কমিটিকে দুইদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের রাতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতার পানি চাক্তাই খাল ধরে প্রবেশ করতে শুরু করে। সেদিন রাত ৯টার দিকে খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ শুরু হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুরো এলাকা তলিয়ে যায়। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.