বেসরকারি ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্টের প্রস্তাব নাকচ করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থনীতি

01 November, 2022, 10:00 am
Last modified: 01 November, 2022, 10:32 am
হোয়াইট কলার ওয়েজ আর্নারদের ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্সে ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা করে রেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতোদিন তারা রেমিট্যান্স পাঠালে ৯৯ টাকা রেট পেতেন।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর করা রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্ট দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে নিজেদের উদ্যোগেই ডলার সংগ্রহ করে পেমেন্ট নিশ্চিত করার জন্য বলেছে দেশের আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারক এই প্রতিষ্ঠান।

সোমবার অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে বৈঠকে এসব কথাই হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) টিবিএসকে নিশ্চিত করেছেন। 

এছাড়া সভায় হোয়াইট কলার ওয়েজ আর্নারদের ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্সে ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা করে রেট দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এতোদিন তারা রেমিট্যান্স পাঠালে ৯৯ টাকা রেট পেতেন।

সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এলসি পেমেন্ট করার জন্য ডলার সাপোর্ট চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। রিজার্ভের অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।

পরে ব্যাংকাররা কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে ডলার নেওয়ার প্রস্তাব করে। ব্যাংকগুলো বলেছে, তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রেখে ডলার নিতে চায়। এতে বাজারে ডলার সংকট কিছুটা হলেও কাটবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রস্তাবও নাকচ করে দেয়।

গত কয়েকদিন ধরেই রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্টের দাবি জানিয়ে আসছিল ব্যাংকগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলছেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্ট পাওয়ার কোনো আশা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজেরাই নিজেদের এলসির পেমেন্টের জন্য ডলারের ব্যবস্থা করবে।' 

অবশ্য সরকারি ব্যাংকগুলোকে আগের মতো রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আরএফ হোসেন। 

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য ডলার সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। এসব এলসির বড় অংশই সরকারি ব্যাংকগুলোতে খোলা হয় বলে মূলত এই সাপোর্টটা এসব ব্যাংকই পাচ্ছে। এটি চলমান থাকবে।

সভায় কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রতি দুই-তিন সপ্তাহ পর পর আমরা একটা মতবিনিময় সভার আয়োজন করি।'

'কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের এক্সচেঞ্জ হাউজ বিদেশে খোলার জন্য সহজতর করে দিয়েছে। রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য মার্কেটিং এফোর্ট যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর আরোপ করা ফি ওয়েভ করে দেওয়া যায় কিনা, সেটা নিয়েও আলাপ হয়েছে।'

হোয়াইট কলার ওয়েজ আর্নাররা ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা করে পাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-আইনজীবীরা তাদের ইনকাম এক্সচেঞ্জ হাউজের বদলে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর কারণে এক্সপোর্ট প্রসিডের সমান ৯৯ টাকা রেট পেতেন। অন্যদিকে এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে পাঠানো রেমিটাররা পেতেন ১০৭ টাকা রেট। এখন থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য তারা অন্য সাধারণ ওয়েজ আর্নার্সদের মতো রেট পাবেন।'  

'জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডলার পেমেন্টের কিছুটা চাপ থাকতে পারে, এরপর থেকে এটি কমে যাবে বলে ধারণা করছি। ডলারের রেট এখনই বদলানোর কোনো চিন্তা নেই।'

'আমাদের ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্সটা বাড়াতে হবে। মার্কেটিংটা বাড়াতে হবে। সভায় রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন প্রডাক্টের কনসেপ্ট নিয়েও আলোচনা হয়েছে। রেমিটারদের জন্য পেনশনের মতো কোনো ফান্ডও তৈরি করা যায় কিনা, এটা নিয়েও আমরা ভাবছি।'

রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডে ডলারের রেট বাড়ানোর বিষয়ে কোনো কথা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, 'আমাদের পরিকল্পনা আছে ধীরে ধীরে আমরা এই দুইটি রেটের ব্যবধান কমিয়ে নিয়ে আসবো। যখন রেট দুইটি প্রথমবার ঘোষণা করা হয়েছিল, সে তুলনায় কিন্তু এখন এই দুইটি রেটের ব্যবধান কমে এসেছে। এই ব্যবধান তো আর এক ধাক্কায় কমিয়ে ফেলা যায় না, ধাপে ধাপে কমাতে হবে। আগামী তিন-ছয় মাসের মধ্যে এই দুইটি রেটই একরকম করে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।' 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.