ডলার কেনাবেচার গ্যাপ সর্বোচ্চ ১ টাকা করার প্রস্তাব বিকেএমইএ’র
রপ্তানি আয় নগদায়ন এবং আমদানি দায় মেটানোর ক্ষেত্রে ডলার রেটের ব্যবধান ১ টাকায় নামিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিকেএমইএ।
এছাড়া, রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ডলার রেট রেমিটেন্সের ডলার রেটের সমান বা ১০৮ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। ডলার রেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন ও বাফেদার পাশাপাশি বিকেএমইএ এবং বিজিএমইএ'র মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার কথা বলেছে বিকেএমইএ।
চিঠিতে বিকেএমইএ বলেছে, "বর্তমানে রপ্তানি আয় নগদায়নে ডলার প্রতি ৯৯ টাকা পান রপ্তানিকারকরা। অন্যদিকে, ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় মেটাতে ১০৫-১০৬ টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে তাদের।"
এতে বলা হয়েছে, "বর্তমানে বেশিরভাগ রপ্তানি মূল্য ডেফার্ড হয়ে যাচ্ছে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৬০ থেকে ১৮০ দিনের সময়সীমায় পৌঁছে যায়। অন্যদিকে ব্যাক টু ব্যাক এলসি'র মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানির দেনা পরিশোধ করতে হচ্ছে ৯০-১২০ দিনের মধ্যে।"
আমদানি দেনা পরিশোধের জন্য ডলার রেট ১০৪.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ব্যাংকগুলো ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি বা অন্য যেকোন আমদানির দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০৫ টাকা থেকে ১০৬ টাকা হিসেবে ডলার ক্রয় করে আমদানি দায় পরিশোধ করছে।
অপরদিকে রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকরা সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা রেট পাচ্ছে। ডলার কনভার্সনের এই প্রক্রিয়াতে রপ্তানিকারকরা বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
চিঠিতে বলা হয়, এতে বছর শেষে রপ্তানিকারকরা বড় ধরনের মূলধন সংকটে পড়বে, যা সমন্বয় করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না।
এক্ষেত্রে আগের মতো ইডিএফ এর মাধ্যমে ব্যাক টু ব্যাক এলসি এর দেনা পরিশোধ সমন্বয় করার সুযোগ চেয়েছে বিকেএমএই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রপ্তানি আয় নগদায়ন ও আমদানি দায় মেটানোর ক্ষেত্রে ডলার রেটে বড় ধরনের পার্থক্য থাকার কারণে একটি মাঝারি মানের নিটওয়্যার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এত বিপুল পরিমাণ লোকসান কোনভাবেই সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। এ কারণেই ডলার কেনা-বেচার ব্যবধান ১ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে সরকারকে চিঠি দিয়েছি।"
তিনি বলেন, "ইউক্রেন যুদ্ধের আগে যখন ডলার রেট ৮৩-৮৪ টাকা ছিল, তখন ডলার কেনা-বেচার ব্যবধান ছিল ৫০ পয়সার মতো। এখন সেটি সর্বোচ্চ ১ টাকা হতে পারে। এর বেশি ব্যবধান কোনমতেই কাম্য নয়।"
বর্তমানে প্রবাসীদের পাঠানোর রেমিটেন্সে ডলারের বিপরীতে ১০৮ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রেও একই রেট চেয়ে বিকেএমইএ বলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয়- দুটোই সমানভাবে অবদান রাখে।
রেমিটেন্সে সরকার ঘোষিত ২.৫% নগদ প্রণোদনা যোগ করে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১০.৭০ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে, রপ্তানি আয় নগদায়নে মিলছে ৯৯ টাকা।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় নগদায়নে সৃষ্ট ডলারের ক্ষেত্রে এধরনের বৈষম্যমূলক বিনিময় হার কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ডলারের বিনিময় মূল্যও একই হওয়া উচিৎ।"