কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে দেশে এগ্রি ল্যাব তৈরি করতে আগ্রহী জার্মান প্রতিষ্ঠান

অর্থনীতি

02 October, 2022, 02:40 pm
Last modified: 02 October, 2022, 02:47 pm
ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ না হওয়ায় ইউরোপে চিংড়ি রপ্তানি এবং চীনে কুঁচিয়া ও কাকড়া রপ্তানি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সৌদি আরবে মিঠা পানির মাছ রপ্তানি এখনও বন্ধ রয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত রাশিয়াও বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানি বন্ধ রেখেছিল।

রপ্তানির জন্য নির্ধারিত কৃষি সামগ্রীর পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশে একটি কৃষি গবেষণাগার স্থাপন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জার্মান প্রতিষ্ঠান কোটারম্যান জিএমবিএইচ। কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠানটির পাঠানো এক চিঠি থেকে জানা গেছে এই তথ্য।

বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী মাসে কোটারম্যান জিএমবিএইচের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাককে লেখা একটি চিঠিতে জানিয়েছেন কোম্পানিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজিম ডয়োহান।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে প্রস্তাবনার সঙ্গে জার্মান অর্থায়নের সুবিধাও থাকতে পারে।

জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গত আগস্ট মাসে জার্মান কোম্পানিটি পরিদর্শন করেছেন। কোম্পানিটির বিনিয়োগ প্রস্তাবনাকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছেন তিনি।  

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'আমাদের ওয়েল মেইনটেইনড ও ওয়ার্ল্ড রিকগনাইজড টেস্টিং ল্যাব থাকলে ইউরোপসহ বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্য রপ্তানির বড় সুযোগ উন্মুক্ত হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় এ ধরনের একটি টেস্টিং ল্যাব করতে চায়। জার্মান কোম্পানিটিকে আমার কাছে ওয়ার্ল্ড ক্লাস মনে হয়েছে।'

জার্মানির হ্যানিগসেনে অবস্থিত কোটারম্যান জিএমবিএইচ কর্পোরেশন বিশ্বজুড়েই আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার স্থাপনে বিশেষভাবে দক্ষ। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটির গবেষণাগার স্থাপনে ৭০ বছরের বেশি দক্ষতা রয়েছে।

বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটারম্যান জিএমবিএইচ জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং ভারতে সফলভাবে পরীক্ষাগার স্থাপন করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ল্যাবের জন্যও উপকরণ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ সেবা বিভাগের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষি রপ্তানির জন্য সার্টিফিকেট প্রদান করে। মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য রপ্তানির জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন হালাল সার্টিফিকেট ইস্যু করে। এর বাইরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) উৎপাদন পর্যায়ে বাংলাদেশি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ১৮১টি পণ্যের মানপত্র দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ রপ্তানিযোগ্য খাদ্যপণ্যের মান নির্ধারণ সনদ জারি করলেও এর কোনো ল্যাব নেই। এই সংস্থাগুলোর কোনোটিরই 'মানুষের জন্য উপযুক্ত' শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এর ফলে বাংলাদেশি কৃষি সামগ্রী ইউরোপ ও মার্কিন বাজারে খুব বেশি জায়গা করে নিতে পারেনি।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে চাষের বাইরে প্রাকৃতিক মাছ ও সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়। এছাড়া চাষকৃত মাছে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম।

তবে ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ না হওয়ায় ইউরোপে চিংড়ি রপ্তানি এবং চীনে কুঁচিয়া ও কাকড়া রপ্তানি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সৌদি আরবে মিঠা পানির মাছ রপ্তানি এখনও বন্ধ রয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত রাশিয়াও বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানি বন্ধ রেখেছিল।

বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ শোয়েব হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বাংলাদেশের পণ্যে আমাদের সনদ থাকলেও ইউরোপে রপ্তানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে রেনডম বেসিসে টেস্ট করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই সেখানে এসব পণ্য টেস্টে উত্তীর্ণ হতে পারে না। ফলে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ইউরোপে বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি সে তুলনায় বাড়ছে না।'

বাংলাদেশে টেস্টিং ফ্যাসিলিটির পাশাপাশি দক্ষ জনবলও বাড়ানো দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুস সাত্তার মন্ডল বলেন, আমদানিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী সার্টিফিকেট প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করা আবশ্যক।

'অনেক বিদেশি ক্রেতা এখন সেচ কাজে ব্যবহৃত পানির গুণমানও জানতে চায়। তাই রপ্তানি বাড়াতে একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেশন প্রয়োজন,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত স্বাস্থ্য সনদ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের মাত্র ০.৫ শতাংশ দখল করতে পারলে কৃষি ও খাদ্য রপ্তানি প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে।

গত অর্থবছরে, বাংলাদেশ কৃষি রপ্তানি থেকে ১.১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানির ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.