দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩৬ বিলিয়নের ঘরে

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
22 September, 2022, 10:45 am
Last modified: 22 September, 2022, 11:10 am
গত মঙ্গলবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেদিনে একই রেটে ১১০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলমান ডলার সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে ৩৬ বিলিয়নের ঘরে নেমেছে।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার বিক্রির পর রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬.৯৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, বুধবার ৯৬ টাকা দরে সরকারি আমদানি বাবদ বিল পরিশোধের জন্য এই ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে গত মঙ্গলবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেদিনে একই রেটে ১১০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে পরিমাণে রয়েছে তার থেকে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ঋণ সহ বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া ৮ বিলিয়ন অর্থ বাদ দিলে দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লেও আমদানির ব্যয়ের তুলনায় এখনও কম। প্রতিনিয়তই সরকারি বিভিন্ন নিত্যপণ্য আমদানি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে যার কারণে রিজার্ভ কমতির দিকে।  

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৭.০৬ বিলিয়ন ডলারে নামে।

২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি বিল পরিশোধের জন্য ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকায় রিজার্ভের পরিমাণ কমছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ বড় ধরনের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে। ব্যাংকগুলোর কাছে এই সময়ে ৭.৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের এই সময়ে ৩ বিলিয়নের বেশি বিক্রি করেছে।

রপ্তানির তুলনায় আমদানির ব্যয় ও পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে দেশের ইতিহাসে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩৩.২৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ঘাটতিও সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

যদিও চলতি অর্থবছরে শুরু থেকে আমদানি ব্যয় কমে আসায় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে কিছুটা দেশের ডলার মার্কেট স্বাভাবিক অবস্থানে রয়েছে। এখন ডলারের দাম নির্ধারণ হচ্ছে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে এলসি পেমেন্ট হয়েছে ৫.৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের মাসের ৭.৪২ বিলিয়ন ডলার থেকে কমেছে।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের গত দুইমাস যাবৎ রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ছে। এই দুই মাসে দুই বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি সেপ্টেম্বরের ১৫ দিনে ১ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, "এটি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাজারে ডলারের ঘাটতি থাকায় রিজার্ভ থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভ কমে আসছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আমদানি কমছে। তবে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে। ফলে ডলারের চাহিদাও কিছুটা কমছে। সামনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।"

বুধবার ব্যাংকগুলোর ডলার মার্কেটের অবস্থা

বুধবার ব্যাংকগুলোর ডলার মার্কেটের চিত্র অনুযায়ী দেখা যায় ৫৫টি ব্যাংকের ডলার কেনার গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১০২ টাকা ২৬ পয়সা। ব্যাংকগুলো সর্বনিম্ন ৯৯ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা ৭৭ পয়সা দরে ডলার কিনেছে।

এলসি সেটেলমেন্টে তারা সর্বোচ্চ ১ টাকা প্রফিট রেখে ডলার বিক্রি করেছে। এছাড়া আগের সিদ্ধান্ত মতোই ব্যাংকগুলো এক্সপোর্ট প্রসিড এনক্যাশ করেছে ৯৯ টাকায় এবং রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে ১০৮ টাকায়।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, দেশের আমদানি কমে আসায় পেমেন্টের চাপও আগের তুলনায় কম। এসব কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমতির দিকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেটের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো ১০১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১০২ টাকা ৫৬ পয়সা দরে নিজেদের মধ্যে ডলার লেনদেন করেছে।

এছাড়া খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা রেটে। ব্যবসায়ীরা ১১৪ টাকায় ডলার কিনে এ দামে বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন। আগের তুলনায় ডলারের যোগান কিছুটা বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.