চলমান প্রকল্পের অধীনে বাজেট সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান বিশ্বব্যাংককে

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
20 September, 2022, 10:00 am
Last modified: 20 September, 2022, 10:05 am
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে বাজেট সহায়তা নেওয়া হলে নতুন করে ‘টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশন’ বা শর্তসমূহ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বিশ্বব্যাংক যে শর্তই দিক না কেনো, তা যদি চলমান দুটি বাজেট সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে ঋণ প্রক্রিয়া সহজ হবে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের বাংলাদেশ সফরের  প্রথম দিনে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সরকারের সঙ্গে বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে বাজেট সহায়তা সংক্রান্ত আলোচনা। এ সময়, একসঙ্গে অনেকগুলো বাজেট সহায়তার পরিবর্তে, এখন যে দুটি বাজেট সহায়তার আলোচনা চলছে, সেগুলোর আকার বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা। 

বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বাংলাদেশকে চলতি অর্থবছরের 'বাংলাদেশ সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স' ক্রেডিট স্কিম থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়াও, 'বাংলাদেশ গ্রিন, রেজিলিয়েন্ট অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট' প্রোগ্রাম থেকে আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বিষয়ে আলোচনা চলছে।

গত জুনের শেষে দিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট  জ্বালানি ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের কাছে আরও ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ। ইআরডির মাধ্যমে  এ সংক্রান্ত চিঠি বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়। 

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে বাজেট সহায়তা নেওয়া হলে নতুন করে 'টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশন' বা শর্তসমূহ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বিশ্বব্যাংক যে শর্তই দিক না কেনো, তা যদি চলমান দুটি বাজেট সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে ঋণ প্রক্রিয়া সহজ হবে।

বৈঠকে ইআরডির প্রস্তাবে তাৎক্ষনিক কোনো সম্মতি না জানালেও ইআরডি আশা করছে, এই বিষয়ে  দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিশ্ববাংকের জবাব পাওয়া যাবে। 

কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রথম দিনের বৈঠকে বাজেট সহায়তা ছাড়াও প্রাথমিক ঋণ বিতরণের গতি বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

সভায় বিশ্বব্যাংকের  ভাইস প্রেসিডেন্ট তাদের অর্থায়নের চলমান প্রকল্পে  অর্থছাড় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অর্থছাড়ে যে জটিলতা রয়েছে, তা নিরসনে বাস্তবায়ন সংস্থা ও বিশ্বব্যাংককে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। 

ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান।

এদিকে, সোমবার বিশ্বব্যাংকের অন্য একটি প্রতিনিধি দল পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের  ইকুইটেবল গ্রোথ, ফিনান্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনস (ইএফআই)-এর আঞ্চলিক পরিচালক  ম্যাথিউ ভার্গিস। 

বৈঠকে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা এবং দৃষ্টিভঙ্গি, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের প্রধান সংস্কারের ক্ষেত্র এবং সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সংবাদিকদের বলেন, "বাজেট সহায়তা দেওয়ার আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে বিশ্বব্যাংক। এর অংশ হিবেবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।"

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডলার বাজেট সহায়তা  চূড়ান্ত করার আগে বিশ্বব্যাংক বেশ কিছু বিষয় জানতে চেয়েছে। এরমধ্যে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, রিজার্ভের অবস্থা, মূল্যস্ফীতি, ভ্যাট আইন সংসষ্কার, সিপিটিইউকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি করার অগ্রগতি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, "আমাদের বিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে কমে গেছে এটি একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমাদের রপ্তানি বাড়ছে ২৫ শতাংশ হারে। আমদানি বাড়ছে ২৩ শতাংশ হারে। গত এক মাসে রেমিটেন্স এসেছে ২ বিলিয়ন ডলার। ফলে আমরা এখন স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি।" 

বাহ্যিক প্রভাবের কারণে মুদ্রাস্ফীতি বাড়লেও এই চাপ শীঘ্রই কমবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, "আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখার জন্য আমাদের বাজেট সহায়তা প্রয়োজন। আমাদের প্রচুর বিদেশি ঋণ এবং সরাসরি বিনিয়োগ প্রয়োজন।"

তিনি জানান, সবুজ প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনার চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। 

"তবে, ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা এখনও প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে," যোগ করেন তিনি। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.