শেয়ার কারসাজিতে হিরু ও তার সহযোগীদের ১০.৮৯ কোটি টাকা জরিমানা

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
12 September, 2022, 11:05 am
Last modified: 12 September, 2022, 11:08 am
অথচ এই জরিমানা আদায়কৃত লাভের মাত্র ২৩ শতাংশ।
ইনফোগ্রাফ: টিবিএস

সাতটি কোম্পানির শেয়ার কারচুপির দায়ে শেয়ারবাজারের বিতর্কিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের মোট ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসির মতে, সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে তারা ৪৬.৮৭ কোটি টাকা লাভ করেছে।  

অথচ এই জরিমানা আদায়কৃত লাভের মাত্র ২৩ শতাংশ।

হিরু এবং তার সহযোগীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে 'আনরিয়েলাইজড গেইন' বা অবাস্তব লাভ হিসেবে ৬১ কোটি টাকা রয়েছে।

তবে হোল্ডিং বিক্রি হয়ে গেলে 'আনরিয়েলাইজড গেইন' 'রিয়েলাইজড গেইনে' পরিণত হয়। 

বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীরা গত বছরের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ধারাবাহিক লেনদেনের মাধ্যমে সাতটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার দখল করে। এ কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

কোম্পানি সাতটি হলো- বিডিকম অনলাইন, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন শু, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এবং ঢাকা ইন্স্যুরেন্স। 

বিএসইসি জানায়, হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ, শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান এবং তার কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিং, ডিআইটি কো-অপারেটিভ, এবং দেশ আইডিয়াল ট্রাস্টের বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কারসাজির মাধ্যমে সাতটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। 

চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত কমিশন সভায় কারসাজিকারীদের ওপর জরিমানা করা হয়।

এছাড়াও, তাদের বিরুদ্ধে আরও নয়টি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আবুল খায়েরের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

কারচুপির বিষয়ে বিএসইসির নোটিশের লিখিত জবাবে আবুল খায়ের বলেন, "আমরা কারসাজির জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করিনি। কিছু অবমূল্যায়িত শেয়ারে নতুন বিনিয়োগ করা হয়েছে। এবং নতুন বিনিয়োগের কারণে শেয়ারের দাম ও লেনদেনের পরিমাণ উভয়ই বেড়েছে।"

সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকলে, এ ব্যাপারে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ ফার্ম এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২১ সালে হিরুর পুরো পরিবার একসঙ্গে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করে। বাজারে সব ধরনের কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হিরু ও তার সহযোগীরা। তাদের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়েছেন।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক তাকে এবং তার সহযোগীদের নামমাত্র জরিমানা করেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এতে কারসাজিকারকরা আরও উৎসাহী হবে।

তাদের মতে, কারসাজিকারীদের জন্য জরিমানা যথেষ্ট হয়নি। বরং তাদের বিরুদ্ধে ফাউল প্লেয়ের বিচার হওয়া উচিত।

আবুল খায়ের সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। ৩১তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি এই পদে যোগদান করেন।

২০২০ সালের আগে তিনি স্টক মার্কেটে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিলেন। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বীমা, শেয়ারের দাম, বিশেষ করে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের অস্বাভাবিক উল্লম্ফনের পরে তার নাম প্রথম সামনে আসে।

হিরু মূলত সমবায় বিভাগের তহবিল স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করেছিলেন। এরমাধ্যমে তিনি প্রচুর আয় করেছেন বলে জানা গেছে।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.