মেইড ইন বাংলাদেশ উইকে বিদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানাতে চায় বিজিএমইএ

অর্থনীতি

01 September, 2022, 03:55 pm
Last modified: 01 September, 2022, 03:58 pm
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৫.৪৭ শতাংশ বেশি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মন্দার আশঙ্কা এবং দেশে ডলার সংকট পরিস্থিতির মধ্যে রপ্তানি আয় বাড়াতে বাংলাদেশের অ্যাপারেল সেক্টরকে ভিন্নভাবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো আগামী ১২-১৮ নভেম্বর 'মেইড ইন বাংলাদেশ উইক' এর মেগা ইভেন্ট আয়োজন করছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। এই খাতের প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা যাতে ইভেন্টে যোগ দেন- এমনটাই চান স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা।

বাংলাদেশের প্রধান পোশাক আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং অস্ট্রেলিয়া।

আগামী ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেইড ইন বাংলাদেশ উইক এর অংশ হিসেবে এই সামিট উদ্বোধন করবেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে চিঠি পাঠিয়ে কূটনৈতিক মাধ্যমে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

মেইড ইন বাংলাদেশ উইক নামক এই সোর্সিং ইভেন্টটি এবারই প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধন করা তৃতীয় অ্যাপারেল সামিট এটি।

ফারুক হাসান চিঠিতে লিখেছেন, বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও পুরো আয়োজনকে আরও অর্থবহ করে তুলবে।

এছাড়া দেশগুলোতে বাংলাদেশ মিশনে বাণিজ্যিক কাউন্সেলরদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও শহরে অনুষ্ঠানটি প্রচার করার অনুরোধ জানান তিনি।

ফারুক হাসান বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি এই ইভেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামর্থ্য এবং সক্ষমতা উপস্থাপন করতে আমরা সক্ষম হব। আমাদের পোশাক শিল্প টেকসইতা এবং উৎকর্ষের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসাথে উন্নত অবকাঠামো এবং একটি ভাল ব্যবসায়িক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে নিজেকে প্রস্তুত করছে দেশ।"

বিজিএমইএ-এর মতে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রমিকদের সুস্থতা এবং পরিবেশগত টেকসইতা নিশ্চিত করতে পোশাক শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এ শিল্প এখন সুযোগ, প্রবৃদ্ধি এবং শ্রেষ্ঠত্বের নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসরণে নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছে।

বিজিএমইএ বলেছে, তারা সাপ্লাই চেইনের মূল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সহযোগিতায় বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের মধ্যে একটি স্থিতিস্থাপক ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চায়। পোশাক শিল্পকে একত্রিত করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে এবং বৃহত্তর স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে একটি কৌশলগত বন্ধন তৈরির চেতনা নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে এই ইভেন্টের। বিজিএমইএ এই ইভেন্টের মাধ্যমে একটি টেকসই, স্থিতিস্থাপক, আধুনিক, ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত সাপ্লাই চেইন গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায়।

থার্ড অ্যাপারেল সামিট ছাড়াও মেগা ইভেন্টে ঢাকা অ্যাপারেল এক্সপো, সাসটেইনেবল ডিজাইন অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড, সাসটেইনেবিলিটি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, মেইড ইন বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড, এনআরবি অ্যাওয়ার্ড, ফ্যাশন রানওয়ে শো, কালচারাল শো-এর মতো বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া প্রকাশিত হবে Bangladesh's Heritage Book, 101 Good Practices in the RMG Industry book এবং Colours of Bangladesh booklet.

বিজিএমইএ সভাপতি যোগ করেন, "সবভাবেই আমরা বাংলাদেশকে ভিন্ন আলোয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি।"

শিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশি ক্রেতারা নিজেরাই বাংলাদেশকে একটি ভাল সোর্সিং গন্তব্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে আমদানি বাড়ানোর কথা বলছেন বিধায় তারা সামনে এ শিল্পের উজ্জ্বল দিন দেখছেন।

তাছাড়া, বিশ্ব পোশাক রপ্তানি বাজারে ইতোমধ্যেই চীনের আধিপত্য কমতে শুরু করেছে।

বিজিএমইএর ভাইস-প্রেসিডেন্ট মো. শহীদুল্লাহ আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের ব্র্যান্ডিং না থাকায় এখানকার রপ্তানিকারকরা একটি পণ্যের জন্য সর্বোচ্চ ৭ ডলার পান, এমনকি তুরস্ক থেকেও রপ্তানিকারকরা ৮ থেকে ৮.৫ ডলারে বিক্রি করতে পারেন।

"আমাদের অগ্রগতি এবং উচ্চ-মূল্যের পোশাক তৈরির ক্ষমতা ক্রেতাদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হলে আমরাও দামের দিক থেকে ভালো অবস্থানে থাকতে পারি," বলেন তিনি।

তিনি উল্লেখ করেন, তারা এখন আমাদের পোশাক খাতের বাস্তব চিত্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে চায়।

২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৫.৪৭ শতাংশ বেশি।

ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের মধ্যে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি যখন কমছে, তখন এখাতে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পেছনে দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান ঘিরে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বন্দ্বও ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফলে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে জ্বালানীর দর বাড়ার কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিলেও আগামী দিনগুলোতেও এসব বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছে বিজিএমইএ।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.