১০৯ টাকায় এলসি নিষ্পত্তি করছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
30 August, 2022, 11:10 am
Last modified: 30 August, 2022, 11:16 am
ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগের কাছে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচায় অনেক সতর্ক হয়ে গেছে

ইমপোর্ট লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) সেটেলমেন্টে ডলার আবার তেজি হতে শুরু করেছে। সোমবার ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করেছে এলসি সেটেলমেন্টে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা রেটে এলসি সেটেলমেন্ট করেছিল ব্যাংকগুলো।

সোমবার বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকই এলসি সেটেলমেন্টে ডলারের রেট নিয়েছে ১০৫-১০৬ টাকার মধ্যে। এছাড়া এমন ব্যাংকও আছে যারা ১০৪ টাকার কম রেট নিয়েছে। 

রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমরা চাহিদামতো ডলার পাচ্ছি না। প্রতিদিন আমরা যে পরিমাণ চাহিদার কথা জানাচ্ছি, তার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না।" 

"কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের যে ডলার দিচ্ছে সেগুলো আমরা নির্ধারিত ৯৫.০৫ টাকা রেটেই বিক্রি করছি। তবে আমাদের পেমেন্ট অনেক বেশি করতে হয়। ফলে আমাদের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। তাদের কাছে থেকে ১১১ টাকারও বেশি রেট দিয়ে ডলার কিনলে স্বাভাবিকভাবেই বেশি দাম দিয়েই আমাদের ডলার বিক্রি করতে হবে," বলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯৫ টাকা আন্তঃব্যাংক বিনিময় হারে ডলার বিক্রি করছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর কাছে। সোমবার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ১৬৪ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ২.২১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। 

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলার কেনাবেচা থেকে করা লাভ নিয়ে প্রতিনিয়ত ইন্সপেকশন করে যাচ্ছে। 

ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগের কাছে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাস্তির ভয়ে ডলার কেনাবেচায় অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। এতে মার্কেটে চাপ থাকলেও রেট খুব বেশি বাড়ানো হচ্ছে না।

চতুর্থ প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, "কাস্টমারদের সঙ্গে ডলারের দাম নিয়ে আমাদের এখন তর্ক করতে হচ্ছে। এলসি সেটেলমেন্টে রেট কমাতে আমরা এক্সপোর্টারদের কাছে থেকে এক্সপোর্ট পেমেন্ট এনক্যাশ করার ক্ষেত্রে রেট কিছুটা কম দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে মার্কেট এখন কিছুটা ইমব্যালেন্সের দিকে যাচ্ছে।"

"এর প্রধান কারণ এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বেশি রেট দিতে হচ্ছে। পেমেন্টের চাপ থাকায় গত বৃহষ্পতিবার ১১০.৭৫ টাকা রেটে হাউজগুলো থেকে কিছু ডলার কিনেছিলাম। রোববার ও সোমবার দাম আরো বেড়ে যাওয়ায় এখান থেকে আমি কোনো ডলার কিনতে পারিনি। এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে ডলার কিনতে এখন সর্বোচ্চ ১১২ টাকা রেট দিতে হচ্ছে," যোগ করেন তিনি।

অবশ্য এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোও দাম দিয়েই রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে। সোমবার বেশ কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউজের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা গেছে, মানিগ্রাম ১০৮.৯০ টাকা, স্মল ওয়ার্ল্ড ১১০.৫০ টাকা এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ১০৬.৯১ টাকা দিয়ে প্রবাসীদের কাছে থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। 

গত বৃহস্পতিবার ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন একই রেটে ডলার কিনলেও মানিগ্রাম ১০৩.৯৫ এবং স্মল ওয়ার্ল্ড ১০৯.৪১ টাকা রেটে ডলার কিনেছিল। সে হিসাবে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর ডলার সংগ্রহে খরচ বেড়েছে।

ব্যাংকগুলো এখন এক্সপোর্ট পেমেন্ট এনক্যাশ ও নিজস্ব রেমিট্যান্স থেকে পাওয়া ডলার দিয়েই আপাতত চলার চেষ্টা করছে। খুব বাধ্য না হলে এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে বেশি দামে ডলার নিতে চাইছে না। এছাড়া এলসি সেটেলমেন্টের চাপও আগের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। বাড়ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা। 

ডলার সংকটের কারণে গত ৮ আগস্ট এলসি সেটেলমেন্ট রেট সর্বোচ্চ ১১২ টাকায় পৌঁছায়। ওইদিনই ডলার কেনাবেচা থেকে মাত্রাতিরিক্ত প্রফিট করায় পাঁচটি দেশি ও একটি বিদেশি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের অপসারণ করে ব্যাংকের হিউমেন রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সিদ্ধান্তের কারণে ডলারের দামে লাগাম লেগেছিল। 

খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১১ টাকা

ব্যাংকের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে খোলা বাজারে ডলারের দাম। সোমবার দেশের মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ১১১ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তারা ১০৯ টাকায় ডলার বিক্রি করেছিল।

একটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, মানি চেঞ্জার এসোসিয়েশন থেকে সোমবার ডলার কেনার দাম ১০৮.২৫ টাকা এবং বিক্রির দাম ১০৯.৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বাজারে এই দামে কেনাবেচা হয়েছে কম। অনেকেই নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি রেটে ডলার কেনাবেচা করেছেন।  

অনিয়মের অভিযোগে ৫টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া নানা অভিযোগে ৪২টি মানি চেঞ্জারকে সতর্কও করে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে আসার পর এবার অর্থ পাচার বা হুন্ডিতে কোনো মানিচেঞ্জারের সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-(বিএফআইইউ)। 

২৮টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করেছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কাজ করা এ ইউনিট।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.