ইপিজেডে বিদেশি কোম্পানিগুলির জন্য সমান প্রণোদনার সুবিধা চান জাপানি রাষ্ট্রদূত

অর্থনীতি

18 August, 2022, 11:10 pm
Last modified: 18 August, 2022, 11:17 pm
ইতো নাওকি বলেছেন, এই বিষয়টির নিষ্পত্তি- বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে বৈষম্য দূর করতে– নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনার সুবিধা ইপিজেডভুক্ত শতভাগ বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানিগুলোকেও দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।

বর্তমানে শুধু স্থানীয় তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক কোম্পানি নতুন বাজারে রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা পাচ্ছে।

গত ১১ আগস্ট রাষ্ট্রদূত অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনকে লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছেন, এতে জাপানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ার পাশাপাশি– এদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগও বাড়বে।

এ ছাড়া, জাপানি কোম্পানিগুলো আরও শ্রমিক নিয়োগ, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো এবং দক্ষতা উন্নয়নে ব্যয় বাড়াতে পারবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারের যাতে ব্যয় না বাড়ে, সেজন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে বিদ্যমান ৫% নগদ প্রণোদনা কমিয়ে ২% নির্ধারণ করে তা দেশি-বিদেশি সব রপ্তানিকারকদের দিতে সুপারিশ করেছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত।

বর্তমানে ইপিজেড'গুলোতে তিন ধরনের কোম্পানি রয়েছে: শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো 'এ' ক্যাটাগরির; দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো 'বি' ক্যাটাগরি এবং শতভাগ দেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে 'সি' ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে সরকার যে ৪% নগদ সুবিধা দেয়, তা ইপিজেডের বাইরের কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ইপিজেড'ভুক্ত শুধু 'সি' ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে। 'এ' ও 'বি' ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো তা পায় না।

এ ছাড়া, যেকোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করলে ১% প্রণোদনা দেয় সরকার, যা আগে 'এ' ও 'বি' ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো পেতো না।

কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্প সুদে চলতি মূলধন সুবিধা (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) যোগান দিতে সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, শুরুতে 'এ' ও 'বি' ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো তা-ও পেতো না।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে বৈঠকে জাপানি বিনিয়োগকারীরা এসব বৈষম্য তুলে ধরে- তা সমাধানের প্রস্তাব করলে সরকার তা মেনে নেয়। কোভিড প্রণোদনা ও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১% নগদ প্রণোদনার সুবিধা এখন ইপিজেডভূক্ত সব ধরনের কোম্পানি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ– বেপজা'র তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত দেশের ইপিজেডগুলোতে 'এ' ক্যাটাগরির কোম্পানির সংখ্যা ৩৫৯টি; 'বি' ক্যাটাগরির কোম্পানি ১০০টি এবং সি ক্যাটাগরির কোম্পানি ২১৬টি।

বেপজার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের ৮টি ইপিজেড থেকে হওয়া রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়েছে ৬৪৯ কোটি ডলার।

বেপজার তথ্যানুসারে, ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোয় মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৫২০ কোটি ডলারের বেশি।

গত ১১ আগস্ট লেখা চিঠিতে ইতো নাউকি বলেছেন, 'পোশাক রপ্তানিমূল্যের ১% নগদ প্রণোদনার সুবিধা সকল ধরনের কোম্পানিকে দেওয়ার সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই'। তবে এখনও স্থানীয় ও বিদেশি কোম্পানির মধ্যে কিছু বৈষম্য রয়েছে। শুধুমাত্র 'সি' ক্যাটাগরির কোম্পানিই এপর্যন্ত বাড়তি ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনার সুবিধা পাচ্ছে।

'অতিরিক্ত এই ৪% নগদ প্রণোদনা 'এ' ও 'বি' ক্যাটাগরির কোম্পানিকে দেওয়া হলে, জাপানসহ নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়বে। এতে জাপানি কোম্পানিগুলোও এদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উৎসাহিত হবে। আর সেটাই প্রণোদনা নীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে আমি মনে করছি'।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন জাপানি রাষ্ট্রদূত।

ওই সময় আবদুর রউফ তালুকদার ইতো নাওকিকে জানান, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে) থেকে উত্তরণ হবে এবং তখন এ ধরনের প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব হবে না।

ওই আলোচনার সূত্র ধরে নাওকি ফাতিমা ইয়াসমিনকে লিখেছেন, 'এই পরিস্থিতিতে আমি প্রস্তাব করতে চাই– ধাপে ধাপে নগদ প্রণোদনা কমানো হলে– বৈষম্যহীনভাবে সরকার স্থানীয় ও বিদেশি সকল কোম্পানির জন্য ২% হারে তা নির্ধারণ করতে পারবে। 

"এই পদক্ষেপের মাধ্যমে 'সি' ক্যাটাগরির কোম্পানির জন্য নগদ প্রণোদনা ৫% থেকে কমিয়ে ২% করা যেতে পারে; আর সাময়িকভাবে 'এ' এবং 'বি' ক্যাটাগরির কোম্পানির জন্য তা বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা যেতে পারে। ২ শতাংশ প্রণোদনা পেলে জাপানি কোম্পানিগুলো তা আরও কর্মী নিয়োগ, বেতন বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবে"–  যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।

ইতো নাওকি উল্লেখ করেন, 'বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বিদেশি কোম্পানি–বিশেষত জাপানি কোম্পানিগুলোকে এদেশে আসতে উৎসাহিত করতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে'।

এবিষয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)- এর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নগদ প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ ধরনেরর বৈষম্য রাখা কোনোমতেই কাম্য নয়'। তিনি সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য এক রকম সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.