সরকার দাম কমালেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল

অর্থনীতি

20 July, 2022, 01:00 pm
Last modified: 20 July, 2022, 01:03 pm
নতুন দাম অনুযায়ী পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হওয়ার কথা ৯১০ টাকা, কিন্তু সোমবারও তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৯৬০ টাকায়

আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগত দাম কমায় দেশিয় বাজারে খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম কমিয়েছে সরকার। গত রোববার সমন্বয় করা এই দাম গতকাল সোমবার থেকেই বাজারে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও ঘোষণার দুইদিন পর এখনো আগের বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। 

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ঘোষণা দিলেও কম দামের বোতল ও প্যাকেটজাত ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো এখানো সরবরাহ শুরু করেনি। তাই বাড়তি দামে কেনা ভোজ্যতেল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। 

ভোজ্যতেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ঘোষিত নতুন দামে ভোজ্যতেল বোতলজাত শুরু হয়েছে। বাজারে থাকা বোতলগুলোর গায়েও নতুন দামের লেবেল লাগানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় দুই-এক দিন সময় লাগছে। 

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি বাজারের মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে রূপচাঁদা, পুষ্টি, ফ্রেশ, তীর, ও বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯৯ টাকায়। 

দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে ফ্রেশ ও তীর ৩৯৮ টাকা, রূপচাঁদা, পুষ্টি ও বসুন্ধরা ৩৯৬ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। 

পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে তীর ও রূপচাঁদা ৯৯৭ টাকা, পুষ্টি, ফ্রেশ ও রূপচাঁদা ৯৯৭ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। 

গত রোববার ১৪ টাকা কমিয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ৭০ টাকা কমিয়ে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯১০ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ৬ টাকা কমিয়ে ১৫২ টাকা করা হয়। 

ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার থেকেই বাজারে সরকারের নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ বর্তমানে বিক্রি হওয়া পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম গত ৬ জুন নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি।

চট্টগ্রাম নগরীর এস এস খালেদ রোড এলাকার মুদি দোকান জান্নাত স্টোরের স্বত্বাধিকারী নুরুল আবছার বলেন, "এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি কম দামের বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করেনি। সোমবারও তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনেছি ৯৬০ টাকা দামে।"

"অথচ নতুন দাম অনুযায়ী, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হওয়ার কথা ৯১০ টাকা। এখনো আগের বাড়তি দামে তেল কিনতে হচ্ছে বলে আমরাও আগের দামেই বিক্রি করছি," বলেন তিনি। 

নগরীর সিরাজুদ্দৌল্লা রোডের বাসিন্দা নুসরাত জাহান বলেন, "আজ (মঙ্গলবার) সকালে মুমিন রোডের একটি মুদি দোকানে ৫ লিটার রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের দাম চেয়েছে ৯৯৭ টাকা। কম দামে না দেওয়ায় পরে এক লিটার ফ্রেশ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল কিনেছি। তাও আগের দামে, ১৯৯ টাকায়।" 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বলেন, তারা মঙ্গলবারও একটি ভোজ্যতেল বোতলজাতকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানা পরিদর্শন করেছেন। 

তিনি বলেন, "কারখানাটি ভোজ্যতেলের বোতলজাত কাজ বন্ধ রেখেছে। ঢাকা থেকে দাম কমানোর নির্দেশনা তাদের হাতে পৌঁছালে সরকার ঘোষিত নতুন দামে তারা তেল বোতলজাত শুরু করবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।"

"খুচরা পর্যায়ে আগের বর্ধিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। খুব শিগগিরই খুচরা পর্যায়ে অভিযান শুরু করবো," যোগ করেন ফয়েজ উল্লাহ।

সনাক-টিআইবি'র চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, "গত দুই দিনে কোথাও ভোজ্যতেলের দাম এক টাকাও কমে নি। ভোক্তাদের কাছে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, তাদের আগের বাড়তি দামে কেনা পণ্য। অথচ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার আগেই কিংবা বাজেট দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের আগেই বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় এসব ব্যবসায়ীরা।"

মূলত তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর দূর্বলতার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, "সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিপণনের জন্য আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। খুব শিগগিরিই ভোক্তারা কম দামের ভোজ্যতেল বাজারে পাবে। এমনকি বাজারে থাকা আগের বাড়তি দামের বোতলেও কম দামের নতুল লেবেল লাগানো হবে।" 

আন্তর্জাতিক বাজার ও পাইকারি পর্যায়ে কমে আসায় গত রোববার সরকার ভোজ্যতেলের এই দাম নির্ধারণ করে। এর আগে গত ২৬ জুন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা কমিয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। 

তার আগে ৯ জুন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য নির্ধারণ করা হয় ২০৫ টাকা।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.