এসএমই খাতের উন্নয়নে স্থাপিত হবে ৫টি কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার

অর্থনীতি

02 July, 2022, 01:40 pm
Last modified: 02 July, 2022, 01:45 pm
সিএফসি এর জন্য একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে ১০টি পরামর্শকারী সংস্থার কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছে।  

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে দেশে প্রথমবারের মতো পাঁচটি কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। 

প্রাথমিকভাবে দেশের পাঁচটি শিল্প-ক্লাস্টারে এই ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপন করবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কাজ করা এসএমই ফাউন্ডেশন। এতে করে উদ্যোক্তারা কম মূল্যে সেবা নিতে পারবেন।

এই উদ্যোগের ফলে উদ্যোক্তাদের কস্ট অব প্রডাকশন, পণ্য বৈচিত্র্যায়ন ও পণ্যের মান উন্নয়ন হবে। এতে রপ্তানির বাস্কেট বাড়বে বলে মনে করছে ফাউন্ডেশন। 

উদ্যোক্তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ক্লাস্টারে দামি মেশিনারিজ ক্রয় করে স্থাপন করবে এসএমই ফাউন্ডেশন। 

এসএমই ফাউন্ডেশনের মতে, সারাদেশে সমজাতীয় পণ্য ও শিল্প মিলিয়ে ১৭৭টি ক্লাস্টার রয়েছে, এর সবই বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। ছোট পরিসরে এসব ক্লাস্টার গড়ে উঠলেও শিল্পের প্রসারে কাজ করছে ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনের মতে, উন্নত প্রযুক্তির অভাব উদ্যোক্তাদের পণ্য বৈচিত্র্যায়নে অন্যতম বাধা। পণ্যের মানোন্নয়ন ও বৈচিত্র্যায়নে কোনো গবেষণাও নেই। ফলে গতানুগতিক এক ধরনের পণ্যে আটকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত স্কিম ঘোষণার মাধ্যমে কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপনে ফান্ড দিলেও বাংলাদেশে সেই সুবিধা নেই।

নিজেদের সক্ষমতা না থাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সময় সরকারের কাছে কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টারের দাবি তুললেও সেটাতে এতদিন গুরুত্ব দেয়নি সরকার।

এদিকে এসএমই ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো ফান্ড না থাকায় তারাও উদ্যোক্তাদের সহায়ক কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার গড়ে তুলতে পারেনি। 

সিএফসি এর জন্য একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে ১০টি পরামর্শকারী সংস্থার কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছে।  

গত ৫ মে আগ্রহী কনসাল্টিং ফার্মের আবেদন জমা দেওয়া শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯ মে।

দীর্ঘদিন পর ও উদ্যোক্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিনিয়োগ কে করবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।

মূলত, ফিজিবিলিটি স্টাডির পরই সেটি চুড়ান্ত হবে। তবে ইতোমধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন এই কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপনে বিদেশি কয়েকটি দাতা সংস্থার সঙ্গে করেছে।

সে পাঁচটি ক্লাস্টারে সিএফসি গড়ে উঠবে সেগুলো হলো: বগুড়া লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস্টার; যশোর লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস্টার; সৈয়দপুর আরএমজি ক্লাস্টার, নীলফামারী; গোবিন্দগঞ্জ হোসিয়ারি ক্লাস্টার, গাইবান্ধা এবং পূর্ব মাতারবাড়ী লেদার ক্লাস্টার, চট্টগ্রাম।

ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, বগুড়া রেলওয়ে মার্কেট এলাকায় ১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু করে বগুড়া লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস্টার।

এই শিল্প ক্লাস্টারে এগ্রি মেশিনারিজ উৎপাদিত হয়, যা বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃষি যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ উত্পাদন ক্লাস্টার।

এখানে ৭৫টি ফাউন্ড্রি, ৬০০টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং ৫০০টি কৃষি-যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে ২৫ থেকে ৩০ হাজার লোক সরাসরি কর্মরত।
যশোর লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস্টারের সূচনা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে। এখন সেখানে ৪০০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সৈয়দপুরের আরএমজি ক্লাস্টারটি আশির দশকের গোড়ার দিকে মাত্র দুটি কারখানা নিয়ে শুরু হয়। এখন এই এলাকায় ৭০০টি কারখানা রয়েছে।

এই ক্লাস্টারে উদ্যোক্তারা উচ্চমানের জ্যাকেট, ট্রাউজার, শার্ট এবং থ্রি-কোয়ার্টার তৈরি করে। ২০০০ সালের শুরু থেকে ভারতের সেভেন সিস্টার্স, নেপাল এবং ভুটানে রপ্তানি করা হচ্ছে এসব।

গোবিন্দগঞ্জ হোসিয়ারি ক্লাস্টার ১৯৫০ এর দশকে শুরু হয়, এখন এটি হাজারেরও বেশি হোসিয়ারি কারখানাসহ একটি সম্পূর্ণ শিল্প ক্লাস্টার।
পূর্ব মাতারবাড়ী লেদার ক্লাস্টারটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। আশির দশকে শুরু হয় এটি।

এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্মেডা) সারাদেশে পাবলিক সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অধীনে ১৬টি সিএফসি তৈরি করেছে।

কিন্তু বিদ্যমান সুবিধায় উদ্যোক্তারা ছোট ছোট কাজে বড় প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয়, অনেক সময় ঠিকমতো সুবিধাও পান না তারা। এতে করে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি হয়।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি ড. মির্জা নুরুল গণি শোভন টিবিএসকে বলেন, "কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপিত হলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন, যা থেকে এখন তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। পণ্যের মান উন্নয়নে গবেষণা বা প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ সাপোর্ট না থাকায় এসএমই পণ্য বৈচিত্র্যায়ন হচ্ছে না।"

সম্ভাবনা থাকলেও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতির অভাবে এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য মান উন্নত করা যাচ্ছে না। কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টারের মাধ্যমে পণ্যের মান উন্নয়নের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে বলেও জানান তিনি।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.