৯০ শতাংশ পোশাক শিল্প শ্রমিকের উপস্থিতিতে ফের কর্মব্যস্ত শিল্পাঞ্চল

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
02 August, 2021, 11:20 am
Last modified: 02 August, 2021, 02:32 pm
শিল্পাঞ্চল পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সবগুলো রপ্তানিমুখী কারখানা ইতোমধ্যে চালু হয়েছে।

রপ্তানিমুখী কারখানা চালুর সরকারি ঘোষণায় মাত্র একদিনের ব্যবধানে কারখানা চালু হওয়ার পর কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে শিল্পাঞ্চল।

ঈদে বাড়ি যাওয়া শ্রমিকদের দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে কর্মস্থলে ফেরা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বয়হীনতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই ফের ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা।

শিল্পাঞ্চল পুলিশসূত্র জানিয়েছে, রপ্তানিমুখী প্রায় সব কারখানাই রোববার চালু হয়েছে।

এদিকে, কঠোর লকডাউনের মধ্যে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

আজও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মানুষকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

"রোববার থেকে গার্মেন্টস চালু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। কিন্তু, তারা স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে," মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে গতকাল এমবিবিএস প্রথম বর্ষের (২০২০-২১) ক্লাস শুরুর অভিষেক আয়োজনে অংশগ্রহণের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জাহিদ মালেক।

রপ্তানিমুখী কারখানার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্ট। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কারখানা খোলার প্রথম দিন ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিক নেতাদের বক্তব্যও তাই।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কারখানাগুলোতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিত ছিলো।"

কোনো কোনো কারখানায় ৯৫ শতাংশ শ্রমিকও উপস্থিত ছিলো বলে জানান তিনি। "আশা করছি, ৫ তারিখের পর লকডাউন শিথিল হলে পুরোদমে কাজ শুরু করা যাবে," বলেন তিনি।

সংগঠনর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংগঠনের সদস্যভুক্ত কারখানায় ৯০ শতাংশ শ্রমিকই উপস্থিত ছিলেন।

বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সক্রিয় কারখানার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দুই হাজার। অন্যদিকে অপর সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টারর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত কারখানার মধ্যে চলমান আট শতাধিক কারখানা রয়েছে।

বিকেএমইএ'র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লাহ অ্যাপারেলসে'র সিইও ফজলে শামীম এহসান জানান, তার নিজের কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি ৮৭ শতাংশ।

তিনি বলেন, সংগঠনের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ‍পুরোদমে শ্রমিকের উপস্থিতিতে কাজ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

তবে, অন্যান্য খাতের কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি ৮০ শতাংশেরও কম ছিলো। অন্যতম বড় হোম টেক্সটাইল রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিকসের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন)  রাশেদ মোশাররফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তাদের কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিলো ৮০ শতাংশের নিচে।

শ্রমিক নেতা ও ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, কারখানাগুলোতে প্রায় ৯০ শতাংশ শ্রমিকই উপস্থিত ছিলেন। আগের মতই শ্রমিকরা হাত ধোয়াসহ মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি তারা জেনেছেন। এছাড়া, কোথাও অসন্তোষের কোন খবর তিনি পান নি।

গত ১৪ জুলাই দেশব্যাপী লকডাউন শেষ হওয়ার পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফের লকডাউনের ঘোষণা দেয় সরকার। লকডাউনে জরুরি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা বাদে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। এতে ঈদের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ ১৮ থেকে ২০ দিনের জন্য বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় উদ্বেগ তৈরি হয় রপ্তানিমুখী শিল্প মালিকদের মধ্যে। এতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, পণ্য বিমানে পাঠানোর মত আার্থিক লোকসানের বিষয় তুলে এ নিয়ে শুরু থেকেই সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করেন পোশাক শিল্প মালিকরা।

এর মধ্যে ঈদ উদযাপন করতে দলে দলে বাড়ি যান শ্রমিকরা। শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, কেবল পোশাক খাতের শ্রমিকই ঢাকা ছেড়েছে ২০ লাখের বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা হুট করেই শুক্রবার রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ১ আগস্ট রোববার  থেকে চালু হবে বলে ঘোষণা আসে। অন্যদিকে, দেশজুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন। শ্রমিকরা কীভাবে কর্মস্থলে ফিরবে, তার কোনও সমাধান দেওয়া হয়নি।

শনিবার ভোর থেকেই পোশাক খাতসহ অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকরা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, অটো রিকশা, রিকশা আর পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলের পথে রওনা দেন।

বৃষ্টির মধ্যে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে অসহনীয় দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে শ্রমিকদের কর্মস্থলে আসার চিত্র সাধারণ মানুষকে ব্যথিত করে। এ নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন কারখানার সংখ্যা সাত হাজার ৪৯১টি, যেখানে শ্রমিক সংখ্যা ৩৯ লাখের কিছু বেশি।

এর মধ্যে, তৈরি পোশাক খাতের কারখানার সংখ্যা তিন হাজার ৪৪৫টি। এর বাইরে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত ৩৯৯টি কারখানাও রয়েছে, যারা রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে অন্যান্য খাতের রপ্তানিমুখী কারখানার সংখ্যা শিল্পাঞ্চল পুলিশের হিসাবে আলাদাভাবে দেওয়া নেই।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব কারখানাই গতকাল চালু হয়েছে। এছাড়া লকডাউনের আওতা বহির্ভূত অন্যান্য কারখানাও চালু ছিলো।"

তবে লকডাউনে বন্ধের আওতায় থাকা কোন কারখানা চালুর খবর তিনি জানেন না বলে জানান।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.