২০২০ সালের সেরা ও দুর্বল পেনশন ব্যবস্থা

অর্থনীতি

টিবিএস ডেস্ক
20 October, 2020, 09:30 pm
Last modified: 21 October, 2020, 03:37 am
মোট ৩৯টি দেশের পেনশন খাতকে জরিপের আওতায় আনা হয়। শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে খুবই খারাপ অবস্থা জাপানের। 'ডি' গ্রেড পেয়ে দেশটি ৩২তম স্থান লাভ করেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অবসরভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে নেদারল্যান্ড এবং ডেনমার্কে। সাম্প্রতিক এক জরিপের ভিত্তিতে একথা জানা গেছে। কোভিড অতিমারির ধাক্কায় যখন নানা দেশের অর্থনীতি পর্যদুস্ত তার মাঝেও এই দুই দেশের প্রাক্তন কর্মীরা তুলনামূলক বেশি আর্থিক সুরক্ষা পাচ্ছেন।  

আজ মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) মার্সার সিএএফএ ইনস্টিটিউড তাদের 'গ্লোবাল পেনশন ইনডেক্স' শীর্ষক তালিকাটি প্রকাশিত করে। এবছরও তাতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে আলোচিত দেশ দুটি। সমীক্ষা প্রতিবেদনে গভীর সঙ্কটের মধ্যেও ঘাবড়ে না গিয়ে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সুবিধা দেওয়া অব্যাহত রাখায় দেশ দুটির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।   

 

তথ্যচিত্র: ব্লুমবার্গ

কোভিড সৃষ্ট মন্দার কারণে তালিকায় থাকা অর্ধেকের বেশি বা ২০টি দেশের অবস্থান আগের চাইতে নিচে নেমে আসে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে ভাতা তহবিলে কর্মক্ষম থাকা ব্যক্তিদের অনুদান যেমন কমেছে, ঠিক তেমন কমেছে এতে বিনিয়োগের বিনিময়ে দেওয়া মুনাফার পরিমাণ। পৃথিবীর নানা দেশের সরকারি দেনা বৃদ্ধি যার আরেকটি বড় কারণ।
 
''আগামীদিনে অবসরভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে-তা প্রায় নিশ্চিত। অর্থাৎ, স্বাভাবিক সময়ে অবসরে যেতে পারবেন না অনেকেই। দীর্ঘদিন কাজ করে তারপর অবসর নেওয়ার পর তাদের তুলনামূলক নিম্ন মানের জীবন-যাপন করতে হবে,'' বলছিলেন মার্সার প্রতিবেদনের লেখক ডেভিড নক্স।   

সরকারের আর্থিক সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে নাগরিক সুবিধার পরিধি কমবে। বিশেষ করে, অবসরভোগীরা চাপের মুখে পড়বেন, বলেই তিনি জানিয়েছেন। 

'ব্যক্তিগত সঞ্চয় এবং বেসরকারি তহবিলে বিনিয়োগের উপর নির্ভরতা এর ফলে দিনে দিনে আরও বাড়তে থাকবে,' তিনি যোগ করেন। 

উদাহরণস্বরূপ; অস্ট্রিয়া এবং ইতালির কথা বলেন নক্স। দেশদুটিতে বেসরকারি তহবিলে বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে করা হয়নি। নাগরিকদের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ও অবসরকালে আদর্শ জীবন-যাপনের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে দেশদুটির পেনশন ব্যবস্থা তীব্র চাপের সম্মুখীন হবে, বলে তিনি জানিয়েছেন। অস্ট্রিয়া আর ইতালির পেনশন খাতকে এজন্য 'সি' গ্রেড দেওয়া হয়েছে। উভয়ে তালিকায় যথাক্রমে ২৮ ও ২৯তম স্থান লাভ করে।  

তথ্যচিত্র: ব্লুমবার্গ

মোট ৩৯টি দেশের পেনশন খাতকে জরিপের আওতায় আনা হয়। শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে খুবই খারাপ অবস্থা জাপানের। 'ডি' গ্রেড পেয়ে দেশটি ৩২তম স্থান লাভ করেছে। কোনো দেশের পেনসন খাতে বড় ধরনের দুর্বলতা বা ঘাটতি থাকলেই তাকে ডি গ্রেড দিয়ে থাকে মার্সার সিএফএ ইনস্টিটিউড। 

জাপানে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যাই বেশি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাদের আয়ুষ্কাল। এজন্য সরকারি ভাতার বয়স বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। 

অবসরভাতা ব্যবস্থায় একেবারে নিচের দিকে স্থান পেয়েছে থাইল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা। বেসরকারি ভাতার যথাযথ পরিচালনা নীতি এবিং দারিদ্র্য কবলিত সাবেক কর্মীদের আরও বেশি সহায়তা দিতে দেশদুটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

র‍্যাঙ্কিংটি প্রস্তুত করা হয়, একটি দেশের সরকারি ও বেসরকারি পেনশন খাতের প্রায় ৫০ ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। অবসর গ্রহণকারী উন্নত মানের আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন কিনা, তা টেকসই কিনা এবং সামাজিকভাবে তা সন্তোষজনক কিনা- এমন নানা বিষয় এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয়।  

এগিয়ে ও পিছিয়ে থাকা দেশগুলো:

বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের র‍্যাঙ্কিং তালিকায় ১৮ তম স্থান অধিকার করে ''সি প্লাস' গ্রেডভুক্ত হয়ে। দেশটির পেনশন খাতে কিছু ভালো সুবিধা আছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তারপরও 'বেশকিছু ঘাটতি রয়ে গেছে যা পূরণ করাটা জরুরি।''

বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের অবসর ভাতাভোগীদের দেওয়া ভাতা বাড়ানো এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় শক্তিশালী আরও বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

নেদারল্যান্ডে বেশিরভাগ কর্মী অবসর গ্রহণের পর পূর্ব-নির্ধারিত বেশকিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। পেনশন হার নির্ধারণ করা হয়, কর্মক্ষম অবস্থায় করা গড় আয় এবং সার্বজনীন সরকারি ভাতা নীতির মাধ্যমে। 

এমন ব্যবস্থায় কর্মজীবন থেকে সরে আসার পর কোনো ব্যক্তি তার পূর্ব আয়ের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভাতা পান। বিকশিত অর্থনীতিগুলোর জোট অর্গানাইজেশন  ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সূত্রে এতথ্য জানায় মার্সার। 

জাপান এবং যুক্তরাজ্যের চাইতে এটি অনেক উন্নত এক ব্যবস্থা। কারণ ওই দেশগুলোতে অবসর গ্রহণকারীকে তার পূর্ব আয়ের মাত্র ৩৭ ও ২৮ শতাংশ ভাতা দেওয়া হয়।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.