সয়াবিনের দাম স্থির থাকলেও কিছুটা কমেছে পাম অয়েলের দাম

অর্থনীতি

29 May, 2021, 09:15 am
Last modified: 29 May, 2021, 09:21 am
ভোজ্যতেলের বাজার নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের বুকিং দরের উপর। গত ৭-৮ মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরণের ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

দীর্ঘদিন পর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে কিছুটা কমেছে পাম অয়েলের বাজার। গত ৪-৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েলের দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪২৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৪৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম মণে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছিল। তবে আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং দর আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এতে আগামী সপ্তাহ থেকে দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তারা। 

বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পাম অয়েলের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রুপের বে ফিশিং পাম অয়েল মণপ্রতি ৪২৫০ টাকা, এস আলম ৪২৪০ টাকা এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েল ৪২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মেসার্স ইসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গেল সপ্তাহের শেষ দিকে এসে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পাম অয়েলের দাম মণে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এর আগে দীর্ঘদিন ঊর্ধ্বমুখী থেকে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি পর্যন্ত পণ্যটির দাম মণে ৪৪৫০ টাকায় পৌঁছে। যা পাম অয়েলের বাজারে দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমলেও একই সময়ে বাজার স্থির রয়েছে পাম সুপার অয়েলের। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ পাম সুপার অয়েল ৪৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত একমাস ধরে একই দামে বিক্রি হয়ে আসছে।  

পাম সুপারের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রপের প্রতিমণ বে ফিশিং ৪৫০০ টাকা, এস আলম ৪৪৯০ টাকা এবং অন্যান্য গ্রুপের (মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা) পাম সুপার ৪৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

পাম সুপারের মতো গত একমাস ধরে স্থির রয়েছে সয়াবিন তেলের বাজার। বর্তমানে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৭০০ টাকা দরে। যা দীর্ঘদিন ধরে একই দামে বিক্রি হয়ে আসছিল। 

ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা টিবিএসকে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের বুকিং দরের উপর। গত ৭-৮ মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরণের ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে দেশীয় বাজারেও এই সময় ধরে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েই চলেছে। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে মালেশিয়াতে পাম অয়েলের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছিল। এতে দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দাম কিছুটা কমে যায়। তবে গত সপ্তাহ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম আবারো ঊর্ধ্বমুখী। হয়েছে। এতে দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত মাসের শেষ সময় পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজার বিশেষ করে মালেশিয়াতে প্রতিটন পাম অয়েলের বুুকিং দর ছিল ৪১০০ রিঙ্গিত। যা চলতি মাসের শুরুর দিকে ৩৮০০ রিঙ্গিতে নেমে যায়। ফলে দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম কিছুটা কমে আসে। তবে গত দুই সপ্তাহে আবারো বেড়ে বর্তমানে প্রতিটন পাম অয়েল ১৪০০ রিঙ্গিত বুকিং চলছে মালেশিয়াতে। 

ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে ২০১৯ সালের সেপ্টম্বর থেকে পাম অয়েলের বাজার বাড়তে শুরু করে। ওই সময় প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ২৪২৮ রিঙ্গিতে। দফায় দফায় বেড়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪১১৬ রিঙ্গিতে। এরপর পণ্যটির দাম আস্তে আস্তে কমে গত মাসে (এপ্রিল) ৩৭০০ রিঙ্গিতে পৌঁছে। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে পণ্যটির দাম ৪৪০০ রিঙ্গিতে পৌছলেও মাসের মাঝামাঝিতে পণ্যটির দাম ৩৮০০ রিঙ্গিতে নেমে এখন আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বর্তমানে ৪১০০ রিঙ্গিতে পাম অয়েল বিকিকিনি হচ্ছে মালেশিয়াতে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস'র তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের গেল নয় মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫২১ মেট্রিক টন। গত অর্থ বছরের একই সময়ে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৯০ হাজার ২৪৭ মেট্রিক টন। গত অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৩ মেট্রিক টন। চলতি বছরের একই সময়ে সয়াবিন আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। 

এদিকে খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরো এক দফা দাম বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে তেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বৃহস্পতিবার সংগঠনটি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল আগের চেয়ে ৯ টাকা বৃদ্ধি করে ১৫৩ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেয়। যা এতদিন ১৪৪ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছিল।  

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে ৭২৮ টাকায়। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১২৯ টাকা ও পাম সুপার তেল ১১২ টাকা দরে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। এ দফায় পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি এক টাকা কমানো হয়েছে।  
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.