সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী কেন সবচেয়ে বেশি বেতন পান?
মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। পশ্চিমে মালাক্কা প্রণালী, পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত নৌপথ। আয়তন ৭২৫.৭০ বর্গকিলোমিটার।
অথচ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চাইতেও বেশি বেতন পান সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তিন মাসের প্রতি প্রান্তিকে এক লাখ মার্কিন ডলার বেতন পান। ফলে তার বার্ষিক বেতন ৪ লাখ মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের গড় মাথাপিছু আয়ের চাইতে তার বেতন ৭ গুণের মতো বেশি।
ট্রাম্পের বেতন ঢের বেশি শোনালেও তার চাইতেও বেশি বেতন পান আরও তিনজন। সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সিমোনেত্তা সোমারুগা, দ্বিতীয় স্থানে স্বশাসিত হংকং- এর শীর্ষ নির্বাহী কেরি ল্যাম এবং সবার শীর্ষে আছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েন লুং।
কোভিড-১৯ হানা দেওয়ার আগে তার আনুষ্ঠানিক বেতন ছিল প্রায় ২২ লাখ মার্কিন ডলার। মহামারির প্রেক্ষিতে নিজের বেতন কমিয়েছেন শিয়েন। এরপরও বার্ষিক ১৬ লাখ মার্কিন ডলার বেতন নিয়ে তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয়কারী রাষ্ট্রনেতা।
২০০৪ সালে পূর্বসুরী গোহ চক টং- এর পদে দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। তখন থেকে এপর্যন্ত তিনি বেতন-ভাতা বাবদ আয় করেছেন ২৫.৭৬ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি ডলার সম-পরিমাণ অর্থ।
এই বেতনের কারণ অবশ্য একেবারে অন্যায় কিছু নয়। সিঙ্গাপুর এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতার পর সিঙ্গাপুরবাসীর জিডিপি অনুসারে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ১৩৩গুণ বেড়েছে। জীবনযাত্রার মান যেমন উন্নত, তেমনি খরচটাও নেহাত কম নয়।
আবার আর্থিক ব্যবসা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা এবং জাহাজ ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র সিঙ্গাপুর। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সদর দপ্তর স্থাপনে বিপুল কর রেয়াত ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে থাকে দেশটি। এবং দেশটিতে রয়েছে আবাসন জায়গা বা জমির চরম সঙ্কট। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের বেতনে এর প্রভাব পড়ে।
কর্মদক্ষতা অনুসারে সিঙ্গাপুরের অন্যান্য কর্মীর মতো পারফরম্যান্স বোনাস পান না প্রধানমন্ত্রী শিয়েন। কিন্তু, তিনি একটি জাতীয় বোনাস পান। সরকারি সকল কর্মকর্তাই অবশ্য পদ-মর্যাদা অনুসারে এ ভাতা পেয়ে থাকেন।
সিঙ্গাপুরের প্রতিবেশী দেশ এশিয়ার আরেক আর্থিক ব্যবসা কেন্দ্র, চীনের স্বশাসিত ভূখণ্ড হংকং। প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশটি পরিচালনা করে একটি নির্বাহী পরিষদ। এর প্রধান নির্বাহী পদে আছেন কেরি ল্যাম। তার বার্ষিক বেতন পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার। তবে হংকং এর চাইতে সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু জিডিপি ১০৭ গুণ বেশি।
নিকটতম প্রতিবেশী মালয়েশিয়ার চাইতে ৪২ এবং চীনের চাইতে ৯৮গুণ বেশি। এসব তথ্য ২০১৯ সালের আঞ্চলিক জিডিপি'র হিসাব অনুসারে জানা যায়।
আর এই অব্যাহত জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার জাতীয় বোনাসও বাড়ায়। দেশটির সরকারি সূত্র অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শিয়েন জাতীয় বোনাস কত পান তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেনি।
তবে অর্থনীতির বিকাশ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এর আগে সিঙ্গাপুর সরকারের মন্ত্রীরা ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল নাগাদ ৫ বছরে ৩ থেকে ৪ মাসের সমান বেতন বোনাস হিসাবে পেয়েছিলেন।