সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে ২ হাজারের বেশি চালকলের 

অর্থনীতি

19 November, 2021, 01:35 pm
Last modified: 19 November, 2021, 01:43 pm
চাল সরবরাহে ব্যর্থ চালকল মালিকদের লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মত কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়।

সংগ্রহ মূল্য বাড়ানোর পরও অনেক চালকল মালিক সরকারের সঙ্গে চাল দেওয়ার চুক্তি করেনি। অনেক মিল মালিক আবার চুক্তি করেও সরকারের গুদামে চাল দেয়নি। এ ধরনের ২ হাজারের বেশি মিল মালিকের লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এই নির্দেশনায়, ২০২১ সালের বোরো সংগ্রহ মৌসুমে চাল সরবরাহে ব্যর্থ চালকল মালিকদের লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মত কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়, অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ মৌসুমে চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি এমন মিল মালিকদের লাইসেন্স বাতিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মিলগুলো যাতে চলতে না পারে সেজন্য তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে খাদ্য অধিদপ্তর বিদ্যুৎ বিভাগকে মিলগুলোর তালিকা সহ একটি চিঠি দিচ্ছে, যাতে তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে অটোমেটিক এবং হাস্কিং মিলের সংখ্যা ১৯ হাজার। এর মধ্যে গত বোরো মৌসুমে চুক্তি করেছিল ১৭ হাজার মিল। বাকি দুই হাজার মিল মালিক যারা চুক্তি করেনি তাদের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ হলেও অনেক মিল মালিক চুক্তি করেও সরকারের খাদ্য গুদামে চাল দেয়নি। এ তালিকায় অটোমেটিক রাইস মিল রয়েছে ৩টি এবং হাস্কিং মিল রয়েছে ১৭৮টি। এদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে বলেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

যেসব মিল মালিক চুক্তি করেও চাল দেয়নি তাদের লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি জামানত বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়েছে।

যেসব চালকল মালিক চুক্তির পরিমাণের ৮০ ভাগ চাল সরবরাহ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে যারা ৮০ ভাগের কম চাল সরবরাহ করেছে তাদের জামানত আনুপাতিক হারে বাজেয়াপ্ত করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মিলারদের আমরা অনেকভাবেই নির্দেশনা দিয়েছি। যারা কথা শুনেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।" 

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২০ সালের বোরো মৌসুমে ৫৬ শতাংশ চাল দিয়েছিল মিলাররা। তাদের যুক্তি ছিল ধানের দাম বেশি। বেশি খরচ হওয়ায় চালের দাম বাড়ানোর দাবি করেছিল সরকার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই দাম বাড়ানো হয়নি।  

তবে ২০২১ এর বোরো মৌসুমে সরকারি সংগ্রহ মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হয়। এ সময় ধানের সংগ্রহ মূল্য ১ টাকা বাড়িয়ে ২৭ টাকা এবং সিদ্ধ চালের সংগ্রহ মূল্য তিন টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তারপরও শুরুর দিকে মিলাররা চাল দিতে গড়িমসি করে। সরকারের সংগ্রহ কম থাকায় মজুত তলানিতে নেমে আসে। 

এই সুযোগে চাল ব্যবসায়ীরা দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং দাম বাড়িয়ে দেয়। এ পরিস্থিতিতে সরকার ১৭ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। 

খাদ্যসচিব নাজমানারা খানুম বলেন, "ব্যবসায়ীরা মৌসুমেও ক্রাইসিসের কথা বলে চালের দাম বাড়ায়। আসলে তারা বিভিন্নভাবে চাল মজুত করে রেখেছিল। এই পরিস্থিতিতে যখন শুল্ক কমিয়ে আমদানির অনুমতি দেয়া হলো, তখন কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাদের মজুত করা চালগুলো বাজারে ছেড়ে দিল, দামও কিছুটা কমলো।"

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আইন অনুযায়ী চালকলের মালিকরা প্রতি মৌসুমে সরকারের খাদ্য গুদামে বাধ্যতামূলকভাবে চাল প্রদান করবে। দীর্ঘদিন ধরে এটি আইনে থাকলেও বাস্তবায়ন ছিল না। তবে এখন আর ছাড় দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী টিবিএসকে বলেন, "খাদ্য মন্ত্রণালয় আমাদেরকে হঠাৎ করেই চাল দেয়া বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনাও করেনি। এটা আমাদের ওপর একটা বড় চাপ তৈরি করছে, কারণ আমাদের সক্ষমতাও বিবেচনা করতে হবে।"

উল্লেখ্য, গত বোরো মৌসুমে সরকার ১০ লাখ সিদ্ধ চাল ও ১ লাখ আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের পরও ১৫ দিন সময় বৃদ্ধি করে ১০ লাখ ৬০ হাজার ৪৬০ মে. টন সিদ্ধ চাল, ৮৫ হাজার ৫০৩ মে. টন আতপ চাল ও সাড়ে ছয় লাখ টন ধানের বিপরীতে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৪৫ টন ধান সংগ্রহ করে। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হলেও অনেক মিলার চুক্তি করেও কোন চাল সংগ্রহ করেনি।

তবে প্রথম দিকে সংগ্রহ কম হওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চাপে পড়ে। যে কারণে সরকারিভাবে চাল আমদানি করে মজুত বৃদ্ধি করে। বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৩ লাখ টন চাল ও ২.২৫ লাখ টন গম মজুদ রয়েছে।
  
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.