লকডাউনে ব্যবসায় আরও উন্নতি করছে অ্যামাজন, ফেসবুক ও অ্যাপল

অর্থনীতি

টিবিএস ডেস্ক
02 August, 2020, 04:40 pm
Last modified: 02 August, 2020, 04:44 pm
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে আমাজনের বিক্রি বেড়েছে ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, অ্যাপলের আইফোন ও অন্যান্য হার্ডওয়্যার বিক্রির হারও বেড়েছে। আর বিক্রির পাশাপাশি ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম- হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামে মানুষের অন্তর্ভুক্তি ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

করোনভাইরাস সংকটের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ খারাপের দিকে গেলেও শীর্ষস্থানীয় টেক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায় আরও উন্নতি করছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে আমাজনের বিক্রি বেড়েছে ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, অ্যাপলের আইফোন ও অন্যান্য হার্ডওয়্যার বিক্রির হারও বেড়েছে। আর বিক্রির পাশাপাশি ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম- হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামে মানুষের অন্তর্ভুক্তি ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও অ্যামাজন, ফেসবুক ও অ্যাপলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

তাদের বিরুদ্ধে বাজারে নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে খবরে জানানো হয়। তাই গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের ডেকে 'শক্ত কথা' বলেছেন আইনপ্রণেতারা।

মার্কিন আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ, এই বড় কোম্পানিগুলো নিজেদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখছে। তারা এই বড় কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যৎ ও ছোট কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যৎ পথরেখা দেখে এসব কথা বলেছেন।

মহামারির মধ্যে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অবস্থা আরও ভালো হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মহামারির মধ্যে মানুষ আরও বেশি অনলাইননির্ভর হয়ে যাওয়ায় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসম্যান ডেভিড সিসিলিন।

তিনি বলেন, 'করোনা মহামারির আগেই এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের অর্থনীতিতে শীর্ষে অবস্থানে উঠেছিল। এখন কোভিডের পর তাদের আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠারই কথা।'

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে আমাজনের বিক্রি যে কেবল ৪০ শতাংশ বেড়েছে তা-ই নয়, এই প্রান্তিকে তার যে প্রবৃদ্ধি, সেটা বার্ষিক হিসাবেও সর্বোচ্চ। এই সময়ে মুনাফা ২৬০ কোটি ডলার থেকে এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে ৫২০ কোটি ডলারে উঠেছে।

১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরই অ্যামাজানের সর্বোচ্চ ৫০০ কোটি ডলার মুনাফা হয়েছে।

মুডির ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লি ও'শিয়া অ্যামাজনের ব্যবসার উত্থানের বিষয়ে বলেন, কঠিন পরিস্থিতিতে সব দিক থেকে এপ্রিল-জুনের এই সময়ের প্রান্তিকটি বেশ ব্যতিক্রম।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রয় ৩০ জুন পর্যন্ত তিন মাসে ৪০ শতাংশ  বেড়ে ৮৮.৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে  যা বছরের পর বছর ধরে এটির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি। 

২০১৯ সালে একই সময়ের জন্য মুনাফা ২.৬বিলিয়ন ডলার থেকে ৫.২ বিলিয়ন ডলারে বেড়েছে।

এই সময়ে আমাজন বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ৭৫ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা গুদামের সক্ষমতা বাড়ানোরও চেষ্টা করছে। এর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ব্রায়ান অলসভস্কি বলেন, 'আমরা আমাদের জায়গা ছাড়িয়ে গেছি।' আর অ্যাপল বলেছে, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তাদের রাজস্ব ১১ শতাংশ বেড়েছে।

লকডাউনে আইপ্যাডগুলোর মতো ডিভাইসের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দ্বিগুণ অঙ্কের লাভ হয়েছে।মুনাফা এক বছর আগের একই সময়ের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১১.২৫ বিলিয়ন ডলার করেছে।

অ্যাপল বলছে, এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাস সংকটের আর্থিক প্রভাব সত্ত্বেও স্বল্পমূল্যের আইফোন এসই প্রকাশের ফলে বিক্রয় বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রনিক্স জায়ান্টকে আরও ভালো অবস্থানে রাখতে সহায়তা করেছে।

পিপি ফোরসাইটের প্রযুক্তি বিশ্লেষক পাওলো পেস্কাটোর বলেন, গত কয়েকমাস ব্যবহারকারীরা ঘরে বসে বিভিন্ন জায়গায় যোগযোগ করছিল। তাই তাদের উন্নতমানের ডিভাইস ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হচ্ছিল। 

ফেসবুকে, রাজস্ব ১১% বৃদ্ধি পেয়েছে- যা অন্যান্য প্রান্তিকের তুলনায় কম। তবু তারা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কারণ ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য কোম্পানিতে ফিরতে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা এই প্রান্তিকে ৫.২ বিলিয়নে পৌঁছেছে।

হতাশা ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটি স্পাইক দ্বারা সহায়তা করেছিল। যা প্রতিষ্ঠানকে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে, হার্গ্রিভেস ল্যানসডাউনের ইক্যুইটি বিশ্লেষক সোফি লন্ড-ইয়েটস এমনটাই বলেন।

সংস্থাটি বলেছে, জুনে গড়ে ২.৪ বিলিয়ন মানুষ তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং ম্যাসেজিং অ্যাপগুলোতে সক্রিয় ছিল। যা গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি ছিল। এর মধ্যে ফেসবুকের প্রায় ১.৭৯ বিলিয়ন দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ও রয়েছেন, প্রতি বছরের চেয়ে ১২ শতাংশের  বেশি।

লকডাউন হ্রাস পাওয়ায় ফেসবুক বলেছে, লকডাউন কমতে শুরু করায় ফেসবুক ব্যবহারাকারীর সংখ্যা আগামি কয়েক মাসের মধ্যে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।

মিসেস লান্ড-ইয়েটস বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে এই প্রথমবার নয়, এমন পরিস্থিতিতে ফেসবুক আগেও পড়েছিল।

সার্চ জায়ান্ট গুগল বলেছে, এক বছর আগে থেকে আয় ২ শতাংশ কমে আয়ের পরিমাণ ৩৮.৩ বিলিয়ন ডলার হয়। কারণ ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপন ব্যয় হ্রাস পেয়েছিল।

২০০৪ সালে গুগল যখন পাবলিক লিমিটেড তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর থেকে এটাই প্রথম ত্রৈমাসিক আয়ের অবনতি ছিল। লাভ ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।

ই-মার্কেটার প্রধান বিশ্লেষক নিকোল প্রেরিন বলেন, আমরা আশা করেছি এপ্রিল ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজারে কেন্দ্রে পরিণত হবে। মে ও জুনের প্রবৃদ্ধি ফিরে আসবে। এর থেকে বলা যায়- যা অনুমান করা হয়েছিল তার থেকে পৃবৃদ্ধি আরও উন্নতির দিকে গিয়েছে।

এদিকে ২০১৬ সালে বিলিওনিয়ারদের মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। আর চলতি বছরে এসে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় ট্রিলিয়ন ডলারে।

বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির মধ্যে ৭ জনই প্রযুক্তিখাতের। যাদের মোট অর্থের পরিমাণ ৬৬ হাহার ৬০০ কোটি ডলার। এরমধ্যে প্রযুক্তিখাতের বাইরে বিলিওনিয়ারদের শীর্ষে থাকা একমাত্র ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেট। মহামারিতে তিনিও লোকসানের মুখে পড়েছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, মার্কিন শীর্ষস্থানীয় টেক প্রতিষ্ঠান ফেসবুক, অ্যাপল, অ্যামাজান, অ্যালফাবেট ও মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৩০ শতাংশ।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.