লকডাউনে বিপাকে চট্টগ্রামের ৩,৫০০ দুগ্ধ খামারি

অর্থনীতি

16 April, 2021, 11:10 am
Last modified: 16 April, 2021, 11:15 am
বিক্রি ও দাম কমেছে ৪০ শতাংশ

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার দুগ্ধ খামারি মো: আমিন। তার খামারে প্রতিদিন দুধ উৎপাদিত হয় ৬৪০ লিটার। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই কমতে থাকে দুধ বিক্রি। গত ১১ এপ্রিল অবিক্রিত থেকে গেছে ২৩০ লিটার দুধ। প্রতি লিটার ৬৫ টাকার দুধ বিক্রি করতে হয়েছে ৪০ টাকায়। পটিয়া উপজেলা ডেইরি ফার্মার এসোসিয়েশনের সভাপতি মো: আমিনের এক সপ্তাহে ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ টাকা।

চট্টগ্রামে খামারিদের উৎপাদিত দুধের বড় গ্রাহক মিষ্টির দোকান, বেকারী, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন দোকান। গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রথম দফার ১ সপ্তাহের লকডাউনে দুধ বিক্রি কমতে শুরু করে। ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনে বন্ধ রয়েছে বিক্রি। তাই চট্টগ্রামের ৩৫০০ খামারে প্রতিদিন উৎপাদন হওয়া ১০ লাখ লিটার দুধ কোথায় বিক্রি করবেন এমন চিন্তুা সব খামারির। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত ডেইরি খামার আছে প্রায় ৩,৫০০ টি। ডেইরি খামার থেকে প্রতিদিন ৪ লাখ লিটার এবং পারিবারিকভাবে পালন করা গাভী থেকে ৬ লাখ সহ ১০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। শহরে এসব দুধ ৬০-৬৫ টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। 

ডেইরি ফার্ম উদ্যোক্তারা জানান, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বন্ধ রাখার সুযোগ থাকলেও এই সেক্টরে সেই সুযোগ নেই। একদিকে দুধ বিক্রি বন্ধ, অন্যদিকে পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উভয় দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ডেইরি শিল্পোদ্যোক্তারা।  

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, "গত লকডাউনে মিষ্টির দোকান চালু রাখা সম্ভব হয়েছিল। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এবারের লকডাউনে মিষ্টির দোকান খোলা রাখা না গেলে অন্য সেক্টরগুলোর মতো ডেইরি সেক্টরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ছোট পরিসরে গড়ে উঠা দুগ্ধ খামারগুলো আশেপাশে কিছু দুধ বিক্রি করতে পারলেও বাণিজ্যিকভাবে গড়া খামারগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে"।   

চট্টগ্রাম জেলা ডেইরি ফার্মার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মালিক মোহাম্মদ ওমর টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে দুধ বিক্রির পরিমাণ এবং দুধের দাম ৪০ ভাগ কমে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রামের খামারিরা। যানবাহনের অভাবে তারা শহরে দুধ সরবরাহ করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকায়ও দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামের খামারিরা"। 

তিনি আরো বলেন, "বিভিন্ন উপজেলার খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই দুধ দিয়ে ঘি তৈরী করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাজারে ঘিয়ের চাহিদা না বাড়ায় উল্টো বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। গত বছর করোনার শুরুতে আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের প্রণোদনা পায়নি খামারিরা। পশুখাদ্যের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। এমন পরিস্থিতিতে খামারিরা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে"। 

এদিকে গত ৫ এপ্রিল থেকে ১ সপ্তাহের লকডাউন শুরু হলে অনেকে মিষ্টি কারখানার উৎপাদন কমিয়ে দেয়। উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধও করে দিয়েছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। ফলে খামারীরা তাদের খামারের দুধ অন্যত্র কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। 

চট্টগ্রামের মিষ্টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টসের জেনারেল ম্যানেজার এম এ সবুর বলেন, "স্বাভাবিক সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানে মিষ্টি উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই হাজার লিটার দুধের চাহিদা ছিল। লকডাউনের শুরুতে আমরা মিষ্টি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। তাই আপাতত আমরা দুধ সরবরাহ নেওয়া বন্ধ রেখেছি"।  

জমজম সুইটস এন্ড বেকস এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বলেন, "চট্টগ্রাম এবং খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় আমাদের ২৩টি শো রুমে মিষ্টি এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য প্রতিদিন ১২০০ লিটার দুধ কেনা হত। গত ৩ দিন ধরে এই পরিমাণ নেমে এসেছে ৬০০ লিটারে। ১৪ এপ্রিল থেকে উৎপাদনই বন্ধ"।

মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: শ্যামল কুমার পোদ্দার বলেন, "মিরসরাইয়ে দুগ্ধ খামারের সংখ্যা প্রায় ৩০০টি। এছাড়া আরো প্রায় ২৫ হাজার কৃষক দুগ্ধপ্রদানকারী গাভী পালন করেন। উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ১৪ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। গত বছর লকডাউনকালীন সময়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন বাজারে পিক আপের মাধ্যমে ভ্রাম্যমান পন্থায় দুধ বিক্রি করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। এবারের লকডাউনেও একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে খামারিদের। সাপ্লাই চেইন বজায় রাখতে প্রয়োজনে চট্টগ্রাম শহর থেকে গাড়ি এনে খামারিদের সহযোগিতা করা হবে"।  
 

 
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.