রপ্তানি হচ্ছে গরুর পিজল ও ওমাসম

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
21 October, 2020, 11:55 am
Last modified: 21 October, 2020, 12:01 pm
বর্তমানে চট্টগ্রামের ১০ জনসহ সারাদেশের ৪০ জন ব্যবসায়ী গরুর ওমাসম ও পিজল রপ্তানি করছেন। এসব পণ্য রপ্তানি করে বর্তমানে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই খাতের রপ্তানিকারকরা।

কোন কিছুই এখন আর ফেলনা নয়। এক সময় গরু জবাইয়ের পর নাড়ি-ভুড়ি (ওমাসম) ও পেনিস (পিজল) উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেয়া হতো। কিন্তু গরুর এসব উচ্ছিষ্ট রপ্তানি করে এখন বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে দেশের তরুণ উদ্যোক্তারা। কোরিয়া, চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এসব পণ্য। এই পণ্য দুটি রপ্তানি করে বর্তমানে প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

গরুর তৃতীয় পাকস্থলীর স্থানীয় নাম সাতপাল্লা। যার ইংরেজি নাম ওমাসম। আর পেনিসকে বলা হয় পিজল। গরু জবাইয়ের পর এক সময় নদী খালে ফেলে দেয়া হতো এসব উচ্ছিষ্ঠ। যা পরিবেশও দূষণ করতো। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব পণ্যের কদর রয়েছে জেনে এখন নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে এসব পণ্য।

বর্তমানে চট্টগ্রামের ১০ জনসহ সারাদেশের ৪০ জন ব্যবসায়ী গরুর ওমাসম ও পিজল রপ্তানি করছেন। এসব পণ্য রপ্তানি করে বর্তমানে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই খাতের রপ্তানিকারকরা।

গরু জবাইয়ের পর কসাইয়ের কাছ থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পিজল ও ওমাসম সংগ্রহ করে। জবাইয়ের দুই ঘন্টার মধ্যে লবন দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয় ওমাসম ও পিজল। পরে তা নিয়ে যাওয়া হয় আড়তদারদের কাছে। আড়তদাররা এসব পিজল ও ওমাসম আরো সুন্দরভাবে প্রক্রিয়াজাত করে তা বিক্রি করে রপ্তানিকারকের কাছে। রপ্তানিকারকরা এই রকম কয়েকজন আড়তদারের কাছ থেকে কিনে তা বিক্রয় উপযোগী করে কোল্ড স্টোরেজে রেখে দেয়। এভাবে কিনতে কিনতে পুরো এক কন্টেইনার হলে তা তখন বিদেশে ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেয়।

আড়তদাররা কসাই বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতি পিস কাঁচা (লবনযুক্ত) পিজল কিনেন ৫০-৭০ টাকা দামে। যা পক্রিয়াজাত শেষে কেজি হিসেবে রপ্তানিকারকের কাছে বিক্রি করেন ৫৫০-৬৫০ টাকা দামে। আড়তদার থেকে রপ্তানিকারক পর্যায়ে প্রতিকেজি প্রক্রিয়াজাত ওমাসম বিক্রি হয় ৫০০-৬৫০ টাকা দামে। প্রক্রিয়াজাত ছাড় প্রতিকেজি কাঁচা (লবনযুক্ত) ওমাসম বিক্রি হয় ৪০০-৪৫০ টাকায়।

রপ্তানির পর বিশ্ব বাজারে প্রতি টন ওমাসম বিক্রি হয় ৬০০০ থেকে ৭০০০ ডলারের মধ্যে (৫-৬ লাখ টাকায়)। রপ্তানি শেষে প্রতিটন পিজল বিক্রি হয় ৬৮০০ থেকে ৭৫০০ ডলারে (৬ থেকে ৭ লাখ টাকা)।

সংগ্রহ থেকে রপ্তানি পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৫০ টি আড়তে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক ওমাসম ও পিজল প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে যুক্ত রয়েছে। সারাদেশে এই খাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামে ১০ জনসহ সারাদেশে ৪০ জন রপ্তানিকারক এই পণ্য দুটি দেশের বাইরে রপ্তানি করে থাকেন। 

চট্টগ্রামের পিজল ও ওমাসম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কারমেন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আরাফাত হোসেন টিবিএসকে বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওমাসম ও পিজল সংগ্রহ করেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। এসব পণ্যগুলো বিক্রি করা হয় আড়তাদারদের কাছে। তাদের কাছ থেকে কিনে নেয় রপ্তানিকারকরা। এরপর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। যা দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে বর্তমানে।

রপ্তানিকারকদের তথ্যমতে, বিশ্বে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে ওমাসম ও পিজলের। চীনে রপ্তানি দিয়ে শুরু হলেও এখন চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কোরিয়াতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওমাসম ও পিজল। উইরোপের দেশগুলোর বাজার ধরার চিন্তা করছে এখন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।

এই খাতে একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা কাজ করে আয় করতে পারেন ৪০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।  

চট্টগ্রাম ওমাসম আড়ৎদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইউনুস বলেন, এটি একটি সম্ভাবনাময়ী খাত। এক সময় এই ওমাসম ও পিজল নদী খাল বিলে ফেলে দেয়া হতো। এতে পরিবেশ নষ্ট হতো। এখন এই পণ্য দুটিই হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম পণ্য। এই খাতের সম্ভবনাকে আরো বিস্তৃত করতে উদ্যোক্তাদের নগদ প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

রপ্তানি হওয়া গরুর এসব নাড়ি ভুড়ি ও পিজল দিয়ে বিদেশে তৈরি হয় দামি স্যুাপ ও সালাদ। বিশেষ করে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এসব পণ্যের বেশ কদর রয়েছে।  

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, চামড়া শিল্পে ধস নামায় গত কয়েক বছর ধরে চামড়া খাতের বহু ব্যবসায়ী ওমাসম এবং পিজল নিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে এই খাততে আরো এগিয়ে নিতে সরকারের নগদ সহায়তা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

এই খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে প্রতিদিন যেই পরিমান গরু জবাই হয় তার অর্ধেক ওমাসম এবং পিজল মাত্র রপ্তানির আওতায় এসেছে। এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে এসব পণ্য এখনো ফেলে দেয়া হয়। বিশেষ করে কোরবানিতে জবাইকৃত গরুর একশ ভাগের মাত্র দশভাগ ওমাসম-পিজল সংগ্রহ করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। বাকি ৯০ শতাংশ ওমাসম ও পিজল সংগ্রহের বাইরে থেকে যায়। জবাইকৃত গরুর শতভাগ ওমাসম ও পিজল সংরক্ষণ ও রপ্তানি করা গেলে দেশে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে বলে জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। এজন্য দেশের প্রতিটি প্রান্তে এই ব্যবসার বিস্তার করতে হবে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের পাশাপাশি নগদ সহায়তা দেয়া দরকার বলে মনে করে এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.