যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
তবে, সর্বশেষ জুলাই মাসে ঈদের ছুটি ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশে আরোপিত লকডাউনে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই সময়ে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী অন্যান্য দেশ বিশেষত চীন, ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।
তবে, তৈরি পোশাকে বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা কম।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) সর্বশেষ প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারা বিশ্ব থেকে দেশটির পোশাক আমদানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ।
২০২০ সালের শুরুতে মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াবহতায় বিপর্যয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দেশটির আমদানি রপ্তানিও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।
ওটেক্সার তথ্য বলছে, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমে যায় ৩০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ থেকে তাদের পোশাক আমদানি কমে প্রায় ২০ শতাংশ।
তবে, চলতি বছর দেশটিতে ব্যাপকভাবে মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া শুরু হলে কমতে শুরু করে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে বেশিরভাগ রাজ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করায় মানুষের কেনাকাটাও বেড়েছে।
ফলে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটির পোশাক আমদানিতে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। যার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশও।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, তাদের হাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেরও প্রচুর ক্রয়াদেশ রয়েছে। আগামী মাসগুলোতেও ভালো রপ্তানির আশা করছেন তারা।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের হাতে প্রচুর অর্ডার আছে, আগামী মাসগুলোতেও রপ্তানি বাড়বে। কেবল যুক্তরাষ্ট্রে নয়, অন্যান্য বাজারেও রপ্তানি বাড়বে। ঈদ ও লকডাউনের কারনে কারখানা বন্ধ না থাকলে জুলাইয়েও পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেতো।"
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিকারক নারায়নগঞ্জের ফতুল্লাহ অ্যাপারেলসের সিইও ফজলে শামীম এহসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দেশটিতে আগামী দিনে পোশাক রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, বড় রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় সেখানে কিছু কিছু শিল্পাঞ্চল বন্ধ রয়েছে। ফলে শর্ট টার্মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।"
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাও আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় বাড়ানোর আভাস দিয়েছেন বলে সম্প্রতি দেশটির এক জরিপে প্রকাশ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলোর ওপর '২০২১ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি' নামে একটি জরিপ পরিচালনা করে ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএফআইএ), যা গত জুলাইয়ে প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের বিশ্বব্যাপী প্রতি ইউনিট পোশাক ক্রয়ে দর পড়ে গড়ে ২.৬ ডলার, যেখানে বাংলাদেশ থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দাম পড়ে গড়ে ২.৫ ডলার।
ওটেক্সা'র হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববাজার থেকে পোশাক আমদানি করেছে ৩৫.৩৮ বিলিয়ন ডলারের। এর আগের বছর ২০২০ সালে এই আমদানির পরিমাণ ছিলো ২৭.৮৭ বিলিয়ন ডলার।
দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে ৩.১৩ বিলিয়ন ডলারের। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারক হিসেবে যথারীতি রয়েছে চীন।
ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই অবস্থান ধরে রেখেছে ভিয়েতনাম। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
অবশ্য অর্থের অঙ্কে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি বেশি হলেও আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের তুলনায় বেশি হারে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান এবং কোরিয়া।