মিথ্যা তথ্য দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনলে জেল, জরিমানা
মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্র কিনলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে 'সরকারি ঋণ বিল-২০২১' তোলা হয়েছে সংসদে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার এই বিল সংসদে উত্থাপন করেন।
তবে বিলটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, এই আইন দ্বারা সরকার অর্থ সংগ্রহ করে। কিন্তু সরকার কি সংবিধান অনুযায়ী ঋণ গ্রহণ করতে পারে? এবং এজন্য একটা আইন করতে পারে? ঋণের টার্গেট কত? সরকার বাজেট দিয়ে ট্যাক্সের মাধ্যমে মানুষের থেকে পয়সা নেয়। ট্যাক্সের টাকা কোথায় যায়?"
তিনি অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন এমন কিছু নিয়ে না আসতে যাতে দেশের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পায়।
এর উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানের ঋণ আইনটি ১৯৪৪ সালে বৃটিশ আমলে করা। তাই বর্তমান অবস্থায় প্রয়োজনের নিরিখে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন আবশ্যক।
পরে তিনি বিলটি ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এ আইনের খসড়া অনুমোদন পায়। টেকসই ঋণ নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঋণ কৌশলপত্র তৈরি, ঋণের ঝুঁকি নিরূপণ এবং সরকারের দায়ের হিসাবকে আরও প্রসারিত করা এবং সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক করার উদ্দেশ্যে আইনটি করা হয়েছে। এতে ৪০টি ধারা রয়েছে।
বিলটি অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নিজের বা কারো পক্ষে সরকারি সিকিউরিটি বা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতায় ইস্যু করা সার্টিফিকেটের স্বত্ব অর্জনের জন্য মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। বর্তমান আইনে কোনো জরিমানা সুনির্দিষ্ট করা ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংক বা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মিথ্যা তথ্য সম্পর্কিত সংঘটিত অপরাধ আমলে নিতে পারবে না বলে উল্লেখ আছে এই বিলে।
কোনো সরকারি সিকিউরিটি বা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের সার্টিফিকেটের মেয়াদ পূর্তির পর আসল ও মুনাফা দিয়ে দেওয়া হলে এ বিষয়ে সরকারের আর কোনো দায় থাকবে না।
সরকারি সিকিউরিটির ধারক কোনো প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হলে বা অবসায়ন হলে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিযুক্ত প্রশাসক সিকিউরিটির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার সরকারি সিকিউরিটি নিয়ম মেনে হস্তান্তর করার পর ওই ব্যক্তিকে সিকিউরিটির আসল বা সুদের বিষয়ে দায়ী করা যাবে না।
সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে অর্থায়ন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত বা দেশি বা বিদেশি মুদ্রায় গৃহীত সুদ বা মুনাফা যুক্ত বা সুদ বা মুনাফা মুক্ত যে কোনো প্রকারের ঋণ ও বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে পারবে।
সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরকার যে ঋণ নেবে তার যথাযথ গ্যারান্টি এই বিলের মাধ্যমে থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
খসড়া আইনে সরকারি ঋণ অফিসগুলোর ভূমিকা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। শরিয়াভিত্তিক সরকারি সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিধানাবলীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বাভাবিক ডিপোজিট ব্যবস্থার পাশাপাশি শরিয়াভিত্তিক ডিপোজিট ব্যবস্থা 'সুকুক' নামে শুরু করা 'বন্ড' এই আইনের অধীনে আনা হয়েছে।
এছাড়াও এইদিন, বিরোধী দলীয় নেতা একজন মন্ত্রীর সমপরিমাণ বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা পাবেন এমন বিধান করে 'বিরোধী দলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১' বিল পাস হয়েছে।
পাশাপাশি বিরোধী দলীয় উপনেতা একজন প্রতিমন্ত্রীর সমান বেতন, ভাতা, ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।
সামরিক শাসনামলে ১৯৭৯ সালে করা সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতার পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার সংক্রান্ত আইনটি বাতিল করে নতুন এই আইন পাসের প্রস্তাব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বিলটি গত ৩ সেপ্টেম্বর সংসদে তোলা হয়েছিল এবং সেদিনই যাচাইয়ের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী বিল-২০২১
এছাড়াও, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এদিন সংসদে 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বিল-২০২১' পাস করা হয়েছে।
নতুন আইনে শুধুমাত্র জাতির পিতার পরিবারের সদস্য ও ভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য বিধান বিদ্যমান 'স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স অর্ডিন্যান্স,১৯৮৬' এর মতোই।
বিলটিতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের সংজ্ঞায় তার দুই কন্যা এবং তাদের সন্তানাদি ও ক্ষেত্রমতো ওই সন্তানাদির স্বামী বা স্ত্রী এবং তাদের সন্তানাদির কথা বলা হয়েছে।