মহামারির সময় পেশা পরিবর্তন

অর্থনীতি

25 January, 2021, 02:00 pm
Last modified: 25 January, 2021, 02:06 pm
মহামারির কারণে সার্বিক অবস্থার পরিবর্তনে পুরনো পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।

মহামারির সময় চাকরি হারিয়ে ফেলা অনেকেরই পরবর্তীকালে চাকরির খোঁজে বেগ পেতে হবে- অর্থনীতিবিদদের এ পূর্বাভাস অনেকের জীবনে্রই বর্তমানের বাস্তব রূপ। এমনই একজন হলেন নাসির উদ্দিন। 

রাজধানীর টঙ্গীতে মজুমদার গার্মেন্টসে ফ্লোর ইনচার্জ হিসাবে চাকরি করতেন নাসির উদ্দিন। করোনা সংক্রমনের প্রথম দিকে কারখানা বন্ধ হলে গ্রামের বাড়ি বরিশাল চলে যান। কয়েকদিন পরে কারখানা চালু হলেও গণ পরিবহন বন্ধ থাকায় সঠিক সময়ে ফিরতে পারেননি তিনি। ফলে চাকরি হারিয়ে বেকারের তালিকায় নাম ওঠে তার।  

কয়েক জায়গায় চেষ্টা করে প্রত্যাশিত চাকরি না পেয়ে আগস্ট মাসে অংশিদারত্বের মাধ্যমে নিজেই টি-শার্ট কারখানা চালু করেন নাসির উদ্দিন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সাবেক তিন সহকর্মী ফারুক হোসেন, মোহাম্মদ সুজন ও রাকিব আহমেদকে সঙ্গী করে ১৫ জন কর্মী নিয়ে ছোট পরিসরে কারখানা চালু করেন তিনি।  

নাসির উদ্দিন দ্যা বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, ডিসেম্বর শেষে তার কারখানায় কর্মী সংখ্যা ২৫ জন ছাড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই তারা নতুন ও পুরাতন যন্ত্রপাতি কেনার কাজে ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। "টি-শার্ট তৈরি করে স্থানীয় মার্কেটে বিক্রির পাশাপাশি বড় প্রতিষ্ঠানের হয়ে সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করেছি।" বলেন তিনি। 

চলমান মহামারির মধ্যে চাকরি হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করে নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার এমন উদাহরণ শুধু নাসির ও তার সহকর্মীরাই নয়। তবে খুব কম মানুষই তাদের মতো ভাগ্যবান। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সাম্প্রতিক প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, মহামারির মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর- ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি ১০০ জনে চাকরি হারিয়েছেন ১৪ জন। গড়ে প্রতিটি কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ৮৬৬ থেকে কমে ৭৯০-তে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ৬০০টি কারখানাকে নমুনা হিসেবে ধরে এ গবেষণা চালানো হয়। 

করোনার কারণে তৈরি পোশাকের চেয়েও খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, চামড়া শিল্প, বেসরকারি কিন্ডার গার্ডেন, বড় কারখানার ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রি ও ক্ষুদ্র খামারীসহ বেশ কয়েকটি পেশার মানুষ। টিকে থাকতে পেশা পরিবর্তন করে নতুন করে উদ্যোক্তা হয়েছেন তাদের অনেকেই। আবার এক পেশা ছেড়ে আরেক পেশায় চাকরি নিয়েছেন কেউ কেউ। 

যতো বেশি মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন, ততো বেশি মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দারিদ্র্য সীমায় চলে আসছেন অধিক সংখ্যাক মানুষ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছেন। ২০১৮ সালেও এ হার ছিল ২১.৬ শতাংশ। মানুষের ভোগব্যয় কমে গেছে, দুই বছর আগের তুলনায় মানুষের আয় কমে যাওয়ার চিত্র প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এর মাধ্যমে। 

অনেকেই নতুন চাকরির সন্ধান পেয়েছেন, তবে মহামারির আগের সময়ের মতো একই পরিমাণ আয় করতে পারছেন না এখনো। নাসির উদ্দিন আগে মাসপ্রতি ৫০ হাজার টাকা আয় করতেন, বর্তমানে তার মাসপ্রতি আয় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার কারণে পরিবর্তীত চাহিদার কারণে মানুষ বাধ্য হয়েই পেশা পরিবর্তন করছে। পুরোনো ব্যবসা বা চাকরিতে জীবিকা নির্বাহ না হওয়ায় নতুন পেশায় যুক্ত হতে হচ্ছে। মানুষের এ পরিবর্তনের সঙ্গে সরকারের নীতি সহায়তা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উত্তরণকে ত্বরান্বিত করা দরকার বলে মনে করছেন তারা।  

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার কারণে মানুষের কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি ও প্রতিবন্ধকতা আসার কারণে গ্রাহকদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কৌশলী হয়ে মানুষ নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছে। তবে বিপুল পরিমাণ মানুষ এখনো কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে।  

বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার হিসেবে দেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন ৬ কোটি ৮২ লাখ মানুষ। করোনার কারণে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। সরকার ঘোষিত লকডাউনে (২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত) ৬৬ দিনে এসব মানুষ কাজ হারান। তবে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত কর্মহীন লোকের সংখ্যা ১৪ লাখ। তবে অর্থনীতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে নতুন নতুন পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন এসব মানুষ। 

পরিচ্ছন্নতা প্রতিষ্ঠান, অ্যাপ ও গেমস, মেডিকেল ব্যবসা, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র, স্বাস্থ্য-সুরক্ষাসামগ্রী, ডেলিভারি সার্ভিস, লরি ড্রাইভার, টেলিমেডিসিন সেবা, শরীরচর্চার সরঞ্জাম বেচাকেনাসহ নতুন নতুন খাতে যুক্ত হয়েছে মানুষ। 

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি খাতে ধস 

করোনার সময়ে সবচেয়ে বেশি পেশা পরিবর্তন ঘটেছে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি খাতে। এ খাতের ৯০ শতাংশ উদ্যোক্তা কোনো না কোনো পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

জহিরুল আলম ভূইঞা ২০০১ সালে তার ট্রাভেল এজেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠান 'ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড লজিস্টিকস' পর্যটকদের ভিসা ও টিকিট প্রক্রিয়া, বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হোটেল বুকিং ইত্যাদি পরিষেবা দিয়ে থাকে। 

মহামারির কারণে পর্যটন খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বর্তমানে জহিরুল খাদ্য সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছেন। 

"গত বছর জুনেই যখন বুঝতে পারলাম, করোনা সঙ্কট আরও দীর্ঘায়িত হবে, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম আমার ব্যবসা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তখনই আমি বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন মাধ্যমে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেই।" 

শুধু তিনিই নন, এ খাতের অনেক ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, হজ্জ ও উমরাহ অ্যাজেন্সির মালিকরাও এধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছেন। বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর'স অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় ৭০০ সদস্য আছেন, এরমধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কাজ করছে। 

দেশে নিবন্ধিত ৪ হাজার ট্রাভেল এজেন্সি আছে, প্রতিষ্ঠানগুলো বিমানের টিকিট কেটে দেয়ার পরিষেবা দিয়ে থাকে। এরমধ্যে ১২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের হজ্জ ও উমরাহ'র লাইসেন্স আছে। 

নতুন পেশায় কিন্ডারগার্টেনের ৮ লাখ শিক্ষক

ঢাকার আদাবরের পপুলার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা তামান্না ইসলাম এখন রাস্তার পাশে ফল বিক্রি করেন। 

তিনি জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না, তার স্বামীরও চাকরি চলে যাওয়ায় অতিকষ্টে দিন যাপন করছেন তারা। 

"আমার স্কুল বন্ধ করে দিতে হয়েচ্ছে, কীভাবে খুলবো তাও জানিনা। আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে এ ভাইরাস। এখন আমি টিকে থাকতেই হিমশিম খাচ্ছি।" দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন তামান্না ইসলাম। 

মেহেরপুরের রোড মডেল কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা মশিউর রহমান সুরুজ তার পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য বর্তমানে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিস্কুট বিক্রি করছেন। 

শুধু তামান্না ইসলাম ও মশিউর রহমান-ই নন, দেশজুড়ে কিন্দারগার্টেনের সার্বিক চিত্র অনেকটা এরকমই। শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতারা অতিকষ্টে দিন যাপন করছেন। অনেকেই স্কুলকে মুদি দোকানে রূপান্তর করেছেন, বা অন্যান্য ব্যবসা শুরু করেছেন। অনেক শিক্ষকই পেশা পরিবর্তন করে দোকানের বিক্রেতা, শ্রমিক ও নৌকার মাঝি হিসবে কাজ করছেন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নার্সারি স্কুলসহ দেশজুড়ে প্রায় ৫৫ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ছিলেন প্রায় ৮ লাখ শিক্ষক। দেশজুড়ে কিন্দারগার্টেনগুলো মারাত্মক অর্থাভাবের মুখে পড়েছে, এবং শিক্ষকদের বেতনও পরিশোধ করতে পারছে না।সমস্যার কোনো সমাধান না পেয়ে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ই স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।  

ই-কমার্স খাতের বিকাশ 

মহামারির মধ্যে নতুন করে বিকাশ ঘটেছে ই-কমার্স, ফুড কোর্ট ও ডেলিভারি সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি পেশার।    

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে ২০১৮ সালে মানিকগঞ্জে ১০টি গরু ও প্রায় দুই হাজার মুরগি নিয়ে খামার স্থাপন করে উদ্যোক্তা হন ইব্রাহিম হোসেন। ঋণের টাকায় ২০২০ সাল নাগাদ খামারের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়। 

তবে মার্চে করোনা সংক্রমনের পরই দুধ বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।মুরগি ও ডিমের ক্রেতা হারাতে থাকেন। খামারে কর্মীদের খরচ ও ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সব বিক্রি করে দিয়ে এখন খাবারের দোকানের ব্যবসা করছেন।  

সাভারে 'ফুড হ্যাভেন' নামে একটি আউটলেটও চালু করেছেন। ফুড পান্ডা, ইভ্যালিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ই-কমার্সের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করছেন ইব্রাহিম। ফেইজবুক পেইজ খুলে নিজের কর্মীদের দিয়ে বাসায় রুটি, পরোটাও পৌছে দিচ্ছেন তিনি। বিক্রির ৭০ শতাংশই ই-কমার্সের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় বলে জানিয়েছেন ইব্রাহিম হোসেন। 

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, "করোনাকালে ই-কমার্স খাতে বিপ্লব হয়ে গেছে। অনলাইনে বিক্রির প্রবৃদ্ধি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে।" 

"আমাদের সংগঠনের সদস্য ১২০০ হলেও করোনার  সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০০০ হাজার ছাড়িয়েছে। তাছাড়া ফেসবুকের মাধ্যমে ৫ লাখের বেশি উদ্যোক্তা ই-কমার্স উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।" বলেন তিনি। 

অন্যান্য খাতে পরিবর্তিত পেশা

কয়েক বছর ধরেই ব্যাগ, বেল্টসহ চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও রপ্তানি করেন মোহাম্মদপুরের তাসলিমা খাতুন। করোনার আসার পরই কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পেরে এবং মজুদপণ্য বিক্রি করতে না পেরে তার কারখানার উৎপাদন আটকে যায় ।   

কয়েকদিন চিন্তার পর কাপড়ের মাস্ক বানানো শুরু করেন তাসলিমা। পরবর্তীতে মাস্কের সঙ্গে থ্রি-পিস ও শিশুদের জামা বানিয়ে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে হোম ডেলিভারি শুরু করেন।  

১৪-১৫ জন নারী কর্মী নিয়ে গড়ে উঠা তাসলিমার চামড়াজাত পণ্যের কারখানা প্রথম দিকে বন্ধ থাকলেও ব্যবসা পরিবর্তন করে এখন কর্মী সংখ্যা বাড়িয়েছেন তিনি। নারী কর্মীদের পাশাপাশি হোম ডেলিভারির জন্য নিয়োগ দিয়েছেন ৫ জন নতুন কর্মী।  

তাসলিমা খাতুন বলেন, "চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কর্মীদের বসে থাকতে হয়নি, তাদের রোজগারের ব্যবস্থা করেছি। নতুন চিন্তায় ব্যবসা বেড়েছে।" 

নতুন পরিস্থিতির কারণে তাসলিমা খাতুনের মতোই ব্যবসা পরিবর্তন করে অন্যান্য খাতে যুক্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ৯৩ হাজার উদ্যোক্তার অনেকেই। অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় পেশা পরিবর্তন করে নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন কাকড়া, কুচিয়া, চিংড়ি খামারীসহ অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিকারকরা।    

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.