বড় লোকসানের পর ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় পর্যটন করপোরেশন 

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
09 October, 2021, 12:10 pm
Last modified: 09 October, 2021, 04:00 pm
গত বছরের মার্চে কোভিডের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত দুই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির করপূর্ব লোকসান ২০.৬৩ কোটি টাকা।

মহামারির কারণে আয় কমে যাওয়ায় জমানো অর্থ ভেঙ্গে ব্যয় নির্বাহের কারণে আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি)। 

দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটক কমে যাওয়ায় গত দুইবছর বড় লোকসান হয়েছে সরকারি এই সংস্থাটির।

সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির দ্বাদশ বৈঠকে পর্যটন করপোরেশনের সংকটের কথা তুলে ধরা হয়। সভায় উপস্থাপিত আর্থিক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মহামারিতে সংস্থাটির আয় কমেছে প্রায় ৩৭ শতাংশ।

গত বছরের মার্চে কোভিডের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত দুই অর্থবছরে করপূর্ব লোকসান ২০.৬৩ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আয়কর ও অন্যান্য কর প্রদানের পর সংস্থাটির এই লোকসান আরও বাড়বে। সরকারি নির্ভরতায় নয়, আগের জমানো সঞ্চয় থেকে ঘাটতি মিটিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া বলেন, "জমানো অর্থ ভেঙ্গে ব্যয় নির্বাহে কিছুটা আর্থিক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর লোকসান হলেও সরকারের জন্য আমরা একদম বোঝা হইনি।"

সংসদীয় কমিটির সভায় কর্পোরেশনের অধীনে পরিচালিত হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁর সার্বিক পরিস্থিতি ও আর্থিক বিষয়াদি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের ক্ষয়-ক্ষতি, উত্তরণে গৃহীত ব্যবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়।

পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের জন্য 'ডেডিকেটেড ক্যাসিনোসহ' বিনোদন উপযোগী ব্যবস্থা রেখে স্থাপনা নির্মাণের জন্য সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

লোকসানের বিষয়ে মো. হান্নান মিয়া বলেন, মহামারিতে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে, কোভিড দুর্যোগের কারণে আমাদেরও দুর্যোগময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও স্বাভাবিক সময়ে ভালো মুনাফা হয়েছে। মহামারি পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরাও ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় আছি।"

তিনি বলেন, "ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ কমে আসায় অর্থনীতি সচল হচ্ছে, পর্যটন স্পটও খুলে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবো আমরা।"

স্বাধীনতার পরপরই, রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যটন করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯৭৩ সালে প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই সংস্থাটিকে দ্বৈত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে- একটি হচ্ছে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন এবং সারাদেশে পর্যটকদের জন্য সুবিধাদি সৃষ্টি ও তা পরিচালনা করা।

পর্যটন করপোরেশনের অধীন সারাদেশে ৪৯টি বাণিজ্যিক ইউনিট ও স্থাপনা রয়েছে। যার মধ্যে ২৩টি হোটেল ও মোটেল এবং ৭টি রেস্তোরাঁ।

দুইটি পিকনিক স্পট, তিনটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান (ট্যুরস ও রেন্ট-এ-কার এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট), ১১টি বার, সুইমিং পুল ও এমিউজমেন্ট পার্ক রয়েছে। এছাড়াও করপোরেশন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্কমুক্ত পণ্য বিক্রি করে। হোটেল-মোটেল ও রেস্তো্রাঁ, পিকনিক স্পট, বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, সুইমিংপুল ও এমিউজমেন্ট পার্কসহ ৩৮টি স্থাপনা নিজেই পরিচালনা করে পর্যটন করপোরেশন। 

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, মংলা, কক্সবাজার ও রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত ১১টি বার পরিচালনা করছে বেসরকারি উদ্যোক্তারা। যার থেকে ভাড়া পায় করপোরেশন।

আয় ব্যয়ের হিসাব ও লোকসান

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত স্থাপনা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে মহামারি শুরুর আগে টানা তিন বছর একশ কোটি টাকার বেশি আয় করেছিল করপোরেশন।

২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে পরবর্তী তিন বছর ১০০ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। কোভিডের ঠিক আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ছিল ১১৩.৪৭ কোটি টাকা।

তবে সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৭১.৭৮ কোটি টাকা আর করপূর্ব লোকসান হয়েছে ১০.০২ কোটি টাকা।

আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট আয় ছিল ৯৭.৩৪ কোটি টাকা, যাতে লোকসান হয় ১০.৬১ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির মতে, ২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হলে পর্যটন স্পট বন্ধ হয়। যাতে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে থাকা স্থাপনাও বন্ধ হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে পর্যটন করপোরেশনের আওতায় পরিচালিত স্থাপনা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোট আয় (রাজস্ব) হয়েছে ৭১.৭৮ কোটি টাকা। আর মোট ব্যয় ৮১.৮০ কোটি টাকা।

সেই হিসাবে করপূর্ব লোকসান ১০.০২ কোটি টাকা। সংস্থাটি আয় বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন বিনিয়োগ করে। গত পাঁচ বছরে ৫৫.০১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে সংস্থাটি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সংস্থাটি ১০.২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও কোভিড পরিস্থিতির কারণে কোনো বিনিয়োগ করেনি। পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪.৮১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে।

কোভিডকালে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে পর্যটন করপোরেশন। করপোরেশনের কাছে বিভিন্ন সংস্থার পাওনা কিস্তিতে পরিশোধ করেছে। তবে একটি হোটেল ও মোটেলও সংস্কার করেনি।

কক্সবাজারের চার হোটেল-মোটেলে মুনাফা

কোভিডের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতে মানুষের আনাগোনা কমলেও পর্যটন করপোরেশন পরিচালিত তিনটি মোটেল ও একটি হোটেল থেকে মুনাফা হয়েছে। কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলো হচ্ছে: উপল, শৈবাল, প্রবাল ও লাবণী।

২০১৯-২০ অর্থবছরে মোটেল উপল থেকে আয় হয় ৭.০২ কোটি টাকা। ব্যয় ও অপচয় বাদ দিয়ে করপূর্ব মুনাফা হয় ৫৩.৮৫ লাখ টাকা।

শৈবালের আয় হয় ৩.৯০ কোটি টাকা, ব্যয় বাদ দিয়ে করপূর্ব মুনাফা দাঁড়ায় ১.৫৭ কোটি টাকা।

অন্যদিকে প্রবালে আয় হয় ১.৯৩ কোটি টাকা, যাতে মোট ব্যয় হয় ৮৬.১৪ লাখ টাকা। আর করপূর্ব মুনাফা হয় ১.০৭ কোটি টাকা।

হোটেল লাবণীতে করপূর্ব মুনাফা হয়েছে ৪৩.৮৫ লাখ টাকা, মোট আয় হয়েছে ১.৭৪ কোটি টাকা। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.