বিসিকের জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কুটির শিল্পের মালিকেরা বঞ্চিত 

অর্থনীতি

এম জহিরুল ইসলাম জুয়েল, বরিশাল
29 May, 2021, 11:25 am
Last modified: 29 May, 2021, 11:43 am
শিল্প নির্মাণের জন্য প্লট বরাদ্দ নিয়ে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছেন কিছু অসাধু জমির মালিক।

বাংলাদেশ কুটির শিল্প উন্নয়ন (বিসিক) কর্তৃপক্ষ এর বিভিন্ন এলাকাগুলোতে তাদের শিল্পের জমির দাম বৃদ্ধি করায় ছোট ছোট শিল্প উদ্যোক্তারা জমি ক্রয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। 

গত বছর শুরুর দিকে বিসিকের জমির প্রতি শতাংশে মূল্য ছিল ২৯ হাজার টাকা যা বর্তমানে ২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।    

এর ফলে ছোট ছোট শিল্প উদ্যোক্তারা এবং কুটির শিল্পের যারা মালিক রয়েছেন তাদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এত উচ্চমূল্য দিয়ে বিসিক এলাকায় নিজস্ব জমি ক্রয় করতে পারছেন না। পাশাপাশি ৫ কিংবা ১০ বছর আগে অনেকেই বিসিক শিল্প এলাকায় স্বল্প দামে জমি ক্রয় করেছেন কিন্তু সেই জমিতে তারা কোন শিল্প স্থাপন না করে গোডাউন তৈরি করে সেগুলোকে ভাড়া দিচ্ছেন-এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীতে।  

বিসিকের  তথ্য অনুযায়ী, কোন জমির মালিক বিসিকের জমিতে শিল্প স্থাপন না করে পরিত্যক্ত রাখতে পারবে না কিংবা সেখানে শিল্পোৎপাদন ছাড়া অন্য কোন কাজে এই জমি ব্যবহার করা যাবে না।  

হঠাৎ করে এই জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প মালিকরা বিসিক জমি কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। 

যদিও বরিশাল বিসিক এলাকায় অনেক শিল্প মালিকই বিসিকের জমি নিতে আগ্রহী কিন্তু তারা বেশিরভাগই মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক, যেখানে বিসিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য। 

বরিশাল বিসিক এলাকাতে অনেক জমি ফাঁকা পড়ে আছে বছরের পর বছর ধরে আবার সেই একই এলাকাতে ছোট ছোট কিছু শিল্প ভাড়ার জায়গায় কিংবা ভাড়ার বাড়িতে তাদের শিল্পোৎপাদনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।  

ছোট ছোট শিল্প মালিকরা জমির মূল্য কমানোর দাবি করছে যাতে তারা একটি প্লট বা জমি ক্রয় করতে পারে। 

বিসিকের প্রতি প্লটে সর্বনিম্ন প্রায় ৭ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ প্রায় ৩৭ শতাংশ জমি থাকে।  

"ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য আমার এই বিসিকে একটি প্লট খুবই দরকার। কিন্তু জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে প্লট কেনা আমার জন্য অসম্ভব," বললেন হাসিনা কুটির শিল্পের মালিক আরিফুর রহমান। 

"আমি এখন একটি ভাড়া করা জায়গায় বিসিকের মধ্যে আমার ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছি কিন্তু জায়গাটি নিজের না হওয়ায় স্থায়ীভাবে কোনো কিছু করতে পারছিনা। এ কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমার শিল্প উৎপাদন বাড়াতে পারছিনা," যোগ করলেন তিনি। 

বর্তমানে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় একশ'র মত শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এই শিল্পনগরীতে ৪৭০টি জমি রয়েছে।  

এর মধ্যে প্রায় একশটি জমির উন্নয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। জমিগুলো প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথেই দ্রুততম সময়ে শিল্প মালিকদেরকে বরাদ্দ দেয়া হবে। 

বরিশাল বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ বলেন, "যে প্লটগুলো এখনও খালি পড়ে আছে বা যে প্লটগুলোতে গোডাউন নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর মালিকদেরকে লিখিত নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা হয় প্লট খালি করবে কিংবা যে শিল্পের জন্য বরাদ্দ নিয়েছে তা স্থাপন করবে"। 

"এইসব প্লট মালিকদের একটি সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে যদি তারা শিল্প নির্মাণকাজ শুরু না করে তাহলে প্লটগুলো অন্যদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হবে"।

"আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি যাতে বিসিকের জমির দামটা পূর্বের ন্যায় থাকে। নতুবা ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কখনই তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ জমি কিনতে সক্ষম হবে না", বলেন বরিশাল বিসিক মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান।   

বিসিকের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ জমির দাম কমানোর আশ্বাস দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

"জমির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা পুনরায় বিবেচনা করছি। ইতিমধ্যে আমরা প্রতি শতাংশে ৩০ হাজার টাকা কমিয়েছি। ২৩০০০০ টাকা থেকে এখন এটা ২০০০০০ টাকা করা হয়েছে", বললেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি।  

তিনি বলেন, "বর্তমান সরকারের আমলে শিল্পবান্ধব এবং শিল্প উন্নয়নের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত"।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.