বাংলাদেশে তুলার বাজার আরও বড় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

অর্থনীতি

টিবিএস ডেস্ক
17 November, 2021, 12:35 pm
Last modified: 17 November, 2021, 02:42 pm
গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮০ লাখ বেলের বেশি তুলা আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৮ লাখ ৩০ হাজার বেল তুলা আমদানি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে নিজেদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তুলা আমদানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ।

তবে, বাংলাদেশের বাজারে তুলা রপ্তানিতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এরমধ্যে কিছু প্রধান সমস্যা হলো আমদানির পর মার্কিন তুলাকে বাষ্পশোধনের (ফিউমিগেট) বাধ্যবাধকতা থাকা, গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় বাংলাদেশে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ পাঠাতে না পারা এবং সমুদ্রবন্দর, শিপিং খরচসহ অন্যান্য লজিস্টিক খরচ বেড়ে যাওয়া।

ফলে, এই খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মজবুত করার জন্য এসব সমস্যা সমাধানে জোর দিচ্ছেন মার্কিন রপ্তানিকারক এবং তাদের প্রতিনিধিরা।

কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের (সিসিআই) তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। দেশে মার্কিন তুলা রপ্তানি আরও বাড়ানোর প্রচেষ্টায় রয়েছে তারা।

পরিদর্শনকালে তারা স্পিনিং মিল মালিকদের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এদিকে, মঙ্গলবার তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সুতির তৈরি পোশাককে দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের দাবি জানিয়েছি। শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরের মতো ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট থেকে তাদেরকে সরাসরি তুলা পাঠাতে অনুরোধ করেছি। এই উপায়ে ৩০ দিনের মধ্যে তুলার চালান পেতে পারি আমরা।"

নগরীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনায় সিসিআই-এর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাপ্লাই চেইন ও বিপণন পরিচালক উইলিয়াম আর বেটেনডর্ফ বলেন, বাংলাদেশের স্পিনিং শিল্প আমদানিকৃত তুলার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ২০২১ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানি বেড়েছে ৪০ শতাংশ।

গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮০ লাখ বেলের বেশি তুলা আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৮ লাখ ৩০ হাজার বেল তুলা আমদানি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সিসিআই প্রতিনিধিদের মতে, ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি বেল তুলা আমদানি করেছে। দেশের মোট আমদানির প্রায় ১৪ শতাংশ এটি।

বিটিএমএ-র তথ্যমতে, বাংলাদেশে তুলার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে অনেক কারখানা এখন স্পিনিং সুবিধা স্থাপনে নতুনভাবে বিনিয়োগ করছে। ফলে আগামী দুই বছরে বিদ্যমান উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে নতুন করে প্রায় ২ কোটি মিলিয়ন নতুন স্পিন্ডেল যুক্ত হবে বলে জানায় তারা।

কিন্তু, এর ফলে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ২০ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে হবে।

বাংলাদেশে তুলা আমদানি বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বেটেনডর্ফ বলেন, মার্কিন তুলার গুণমান, স্থায়িত্ব, স্বচ্ছতা, উদ্ভাবন এবং মূল্যের কারণে এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে বাংলাদেশের।

"প্রতিটি বেল পরীক্ষা করে এর গুণমান নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া, আমাদের তুলা একটি ভালো স্পিনিং কনসিস্টেনসি দেয়," উল্লেখ করেন তিনি।

মার্কিন প্রতিনিধি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো গভীর সমুদ্র বন্দর নেই। ফলে, দেশের পোশাক শিল্প ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
পণ্য পেতে দেরি হওয়ায় এক্ষেত্রে কর্ম পরিকল্পনা আটকে যায়। এছাড়া, ফিউমিগেশন প্রক্রিয়ার জন্যেও তিন দিন সময় লাগে। এমন অনেক সমস্যা রয়েছে যার সমাধান করতে হবে বাংলাদেশকেই, বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে বাষ্পশোধনের মাধ্যমে একটি এলাকাকে জীবাণুমুক্ত বা বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়া হলো ফিউমিগেশন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা বহনকারী কনটেইনারগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিউমিগেট করতে হয়। এতে করে ব্যয় বাড়ছে বলে ধারণা কটন শিল্পে সংশ্লিষ্টদের।

দেশে সফরে আসা প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন সাউথইস্ট কটন অপারেশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ওয়েসলি রেন্টজ, সিসিআই টেকনিক্যাল সার্ভিসের প্রধান জোয়ের্গ বাউরসাচস এবং কটন ইউএসএ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ আলী আরসালান।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.