ফের বাড়ল চালের দাম 

অর্থনীতি

29 June, 2021, 09:30 am
Last modified: 29 June, 2021, 03:19 pm
গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০-২৫০ টাকা। চাহিদা না বাড়লেও সরকারি সংগ্রহ কার্যক্রমকে সামনে রেখে পাইকারি বাজারে চালের কৃত্রিম দাম বৃদ্ধি হচ্ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।  

ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে চালের দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। বোরো মৌসুমের ধান উত্তোলনের পর চালের বাজার কমে আসলেও গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। চাহিদা না বাড়লেও সরকারি সংগ্রহ কার্যক্রমকে সামনে রেখে পাইকারি বাজারে চালের কৃত্রিম দাম বৃদ্ধি হচ্ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

দীর্ঘদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত দেড় মাস আগে দেশে চালের দাম কমতে শুরু করে। এর মধ্যে চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। চালের দামের এ নিম্নমুখীতা প্রায় দুই সপ্তাহ স্থিতিশীল ছিল। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম ফের বাড়ছে। এরই মধ্যে বস্তাপ্রতি চালের দাম সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগেও ভারত থেকে আমদানি হওয়া বস্তাপ্রতি নাজির শাইল ২ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১৪০ টাকায়। অর্থাৎ আমদানিকৃত চালটির দাম বেড়েছে ৪৯০ টাকা। দেশীয় জিরাশাইল চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকায়, মোটা সিদ্ধ চাল ১৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকায়, মিনিকেট সিদ্ধ ২৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকার চলতি বোরো মৌসুমে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চালসহ সর্বমোট সাড়ে ১৬ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত ৬ মে খাদ্য মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে আগামী আগস্টের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের দফতরগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এ জন্য ৯ মে এর মধ্যে মিলারদের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনায় ৩০ জুনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ, জুলাইয়ের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং আগষ্টের মধ্যে অবশিষ্ট ১০ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়। অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে লটারীর মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান-চাল সংগ্রহ করতে হবে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আবেদন পাওয়া না গেলে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ধান-চাল সংগ্রহ করার নির্দেশনা রয়েছে।

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২০২১ সালের বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয় যথাক্রমে ২৮ এপ্রিল ও ৭ মে থেকে। নির্দেশনা মোতাবেক ২৩ জুন পর্যন্ত ২ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৩ টন ধান, ৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৭৬ টন সিদ্ধ চাল এবং ৪০ হাজার ৫ টন বোরো আতপ চাল সংগ্রহ করেছে সরকার। অর্থাৎ দুই মাসে সরকার সর্বমোট ৭ লাখ ৬২ হাজার ২১৪ টন ধান-চাল সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ধানের মূল্য পরিশোধ করছে কেজিপ্রতি ২৭ টাকা, আতপ চাল কেজিপ্রতি ৩৯ টাকা এবং সিদ্ধ চাল ক্রয়ে সরকার প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা করে দিচ্ছে।

চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী শেখ সেলিম বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে নতুন মৌসুমের চাল বাজারে আসতে শুরু করে। এর আগে দেশে চালের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ভারত ও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি শুরু হয়। যা দেশের ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে। তবে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু ও বৈশ্বিক দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে চালের দাম ফের বেড়ে যায়। এর আগে টানা ৫ থেকে ৬ মাস অস্থির ছিল চালের বাজার। সর্বশেষ বোরো মৌসুমের ধান কাটার শেষ পর্যায়ে বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করলে বাজার নিম্নমুখী হতে থাকে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের বাজারে ফের অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের চাল মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও চাল ব্যবসায়ী শান্ত দাশগুপ্ত বলেন, নতুন মৌসুমের চালের সরবরাহ শুরু হওয়ায় বাজার কিছুটা সহনীয় হয়ে এসেছিল। কিন্তু চাল সংগ্রহ কার্যক্রম গতি পাওয়ায় খোলা বাজারে চালের দাম বাড়ছে। বিগত বছরে ধান-চালে লাভবান হওয়ায় কৃষক ও বেপারী পর্যায়ে বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের কারণে বাজারে দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানা দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সরকার চাল আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে। তবে আমদানি প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল আমদানি হয়নি। এতে শুল্ক কমানোর সুবিধার পরও দেশের চালের বাজার ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায়। মূলত দেশে খাদ্য ঘাটতি থাকায় বাড়তি উৎপাদন, আমদানি প্রক্রিয়া শুরুর পরও স্থায়ীভাবে দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চালের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।

ব্যবসায়ীদের মতে, সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিলেও দেশের বাজারে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। মূলত চাল আমদানি প্রক্রিয়া উন্মুক্ত না করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে চাইলেই যখন-তখন কেউ চাল আমদানির সুযোগ পাচ্ছে না। যার কারণে মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে চাল আমদানির সুযোগ হওয়ায় বাজারে এখনো আমদানির প্রভাব পড়েনি বলে মনে করছেন তারা। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.