ফাস্ট ট্র্যাকের ৭ প্রকল্পের ৩টিতে বরাদ্দ বাড়ছে, কমছে ৪টিতে

অর্থনীতি

সাইফুদ্দিন সাইফ
20 January, 2021, 09:50 am
Last modified: 20 January, 2021, 10:00 am
চলতি অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। কিন্তু অর্থবছরের মাঝামাঝি পার হওয়ার পর সেতু বিভাগ মনে করছে, বাকি সময়ে এত টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়। এজন্য বরাদ্দ ২০৯৯ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।  

বাস্তবায়ন গতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি থাকায় সরকারের ৩টি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে মূল বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ চেয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। প্রকল্প তিনটি হচ্ছে-  পদ্মা রেল সংযোগ, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর।

বিপরীতে বাস্তবায়ন গতি ধীর থাকায় ফাস্ট ট্র্যাকের ৪টি প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ, পায়রা বন্দর, দোহাজারি থেকে কক্সবাজার হয়ে গুনদুম পযন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প।

এই সাতটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট বরাদ্দ ছিল ৩৫৭৯১ কোটি। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ২৯৪২৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। 

অগ্রাধিকারের আরেক প্রকল্প, মেট্রেরেলে (এআরটি-6) মূল বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। 

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের এডিপি সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে সংশোধিত এডিপির জন্য প্রকল্পভিত্তিক চাহিদা চাওয়া হয়েছে। 

এডিপি সংশোধনের জন্য বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোতে সহায়তার সংশোধিত বরাদ্দ গত সপ্তাহে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। 

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের যুগ্ম-প্রধান এম ছাইদুজ্জামান বলেন, সংশোধিত বরাদ্দের সব প্রস্তাব পাওয়ার পর এডিপির সংশোধন চূড়ান্ত করা হবে। তবে সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পেগুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা অনুযায়ীই বরাদ্দ দেয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। 

চলতি অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। কিন্তু অর্থবছরের মাঝামাঝি পার হওয়ার পর সেতু বিভাগ মনে করছে, বাকি সময়ে এত টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়। এজন্য বরাদ্দ ২০৯৯ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।  

গত ডিসেম্বরে সবগুলো স্প্যান বসানোর পর সেতুর শতভাগ দৃশ্যমান হলেও, সেতু বিভাগ বলছে স্লিপার বসিয়ে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে আরো বছরখানেক অপেক্ষা করতে হবে। 

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, কোভিড পরিস্থিতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করা যাচ্ছে না। বন্যার কারণেও অর্থ ব্যয় কম হয়েছে। এ কারণে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। 

তবে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি বাড়ায় অর্থের চাহিদাও বেড়েছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরে এই প্রকল্পে ১৮০১ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ চৌধুরী। 

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে মূল বরাদ্দ থেকে ৫৫২৫ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না বলে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। 

চলতি এডিপিতে রূপপুরের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ১৫৬৯১ কোটি টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৬৫৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ১১ শতাংশ। 

এডিপিতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পে ব্যয়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, সংশোধিত এডিপিতে তা বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের জন্য ৫৫৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ আসে ব্যয় হয়েছে ৯৯৫ কোটি টাকা। 

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানীর কর্মর্কতারা জানান, কোভিডের কারণে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ থাকলেও এখন তা আবার শুরু হয়েছে। তবে জাপানের পরামর্শকদের অনেকেই এখনো বাংলাদেশে আসেননি। শীগগিরই তারা আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

কর্মকর্তারা আরও বলেন, এখনো কাজের গতি ধীর হলেও অর্থবছরের বাকি সময়ে গতি বাড়বে। বাড়বে ব্যয়ও। এ কারণে মূল বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়নি । 

এদিকে, দশ বছরেও ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা না কাটায় দোহাজারি থেকে কক্সবাজার হয়ে গুনদুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সামান্য। এই জটিলতার কারণে প্রতি বছরই বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও একই কারণে বরাদ্দ ৫১০ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত বছরের ৫ মাসে এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২২২ কোটি টাকা। 

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, নানা উদ্যোগ নিয়েও ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা দূর করা যাচ্ছে না।

মাতারবাড়িতে ৬০০ মেগাওয়াটের ২টি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ায় বাড়ছে অর্থব্যয়ও। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যেখানে বরাদ্দের মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল, পাঁচ মাস শেষে এসে নভেম্বরে তা ৪২ শতাংশ হয়েছে। কাজের গতি বাড়ায় মূল বরাদ্দের চেয়ে ৫২৮ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। 

এছাড়াও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে মূল বরাদ্দ ৩৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ কোটি এবং পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণে নেয়া পৃথক প্রকল্পের বরাদ্দ ৩৫০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৬০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।  
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.