প্রণোদনার ঋণ বিতরণে ব্যর্থতা: ১৪ ব্যাংক এবং ২ নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তলব

অর্থনীতি

শাখাওয়াত প্রিন্স
05 September, 2021, 01:45 pm
Last modified: 05 September, 2021, 03:14 pm
এই অর্থবছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে কোভিড-১৯ প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ১৪টি ব্যাংক এবং ২টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে (এনবিএফআই) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

এগুলো হলো- জনতা ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, উরি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি এবং জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমান অর্থবছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।   

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বছর সিএমএসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল; কিন্তু গত ৩০শে জুন পর্যন্ত এই ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণের হার ৫০ শতাংশেরও নিচে।

উল্লেখ্য, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সিএমএসএমই খাতে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজে ঘোষণা করে। এ প্রণোদনা ঋণ সফলভাবে বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বীকৃতি পেয়েছে ১৩টি ব্যাংক ও চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে ১৬ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়ে ঠিকমতো প্রণোদনা ঋণ বিতরণ না করার ব্যাখ্যা তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা তহবিলের ঋণ বিতরণ গত জুনে শেষ হয়েছে। এ তহবিল থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে। এ সময়ে মাত্র ১৩ ব্যাংক ও ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, ব্র্যাক, উত্তরা, অগ্রণী, দি প্রিমিয়ার, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ইস্টার্ন, প্রাইম, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, মধুমতি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন। অন্যদিকে, আইডিএলসি, আইপিডিসি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্স নামের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে। 

এছাড়া যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এসএমই ঋণ বিতরণের হার ৫০ শতাংশের নিচে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়, 'সিএমএসএমই প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে আপনাদের যাচিত চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সকল নীতি সহায়তা প্রদান করা সত্ত্বেও প্যাকেজের প্রথম পর্যায়ে (২০২০-২০২১) আপনাদের লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী অর্জন মোটেও সন্তোষজনক নয়। এমতাবস্থায়, সিএমএসএমই প্রণোদনা প্যাকেজের দ্বিতীয় পর্যায়ে (২০২১-২০২২ অর্থ বছরে) আপনাদের ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ত্রৈমাসিক ও অঞ্চল ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণপূর্বক প্রধান কার্যালয় থেকে মাসিক ভিত্তিতে মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আপনাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হলো। ভবিষ্যতে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে আপনাদের ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে'। 

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিএমএসএমই প্রণোদনা প্যাকেজের যে লক্ষ্যমাত্রা আমাদেরকে দিয়েছে আমরা শতভাগ বাস্তবায়ন করেছি। চলতি অর্থবছরেও আমরা লক্ষ্যমাত্রা পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করবো। একইসঙ্গে সিএমএসএমই প্যাকেজ ছাড়াও সব ধরণের প্যাকেজ আমারা গুরুত্বসহকারে দেখছি"।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান  সৃষ্টি, জিডিপিতে ইতিবাচক  অবদান ইত্যাদি বিবেচনায় সিএমএসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি  টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। যে ব্যাংকগুলো শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে সেগুলো প্রশংসার দাবিদার। কারণ নির্ধারিত  সময়ে  নিজ নিজ  লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করে তারা অন্যান্য  ব্যাংকের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

দেশের অর্থনীতিতে করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় গত বছর বিভিন্ন খাতে প্রায় সোয়া এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ অন্যতম। গত বছরের ৫ এপ্রিল এ প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর একই বছরের ১৩ এপ্রিল এ তহবিল বরাদ্দের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে অক্টোবরের মধ্যে এই তহবিলের ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর, তৃতীয় দফায় ৩১ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ পঞ্চম দফায় জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও এ তহবিলের ঋণ বিতরণ শেষ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৬.৯৩ শতাংশ। এর মানে ওই তহবিলের চার হাজার ৬১২ কোটি টাকার তহবিল পড়ে রয়েছে। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পর দ্বিতীয় পর্যায়ে এ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.