পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে রাজস্ব ফি বাড়ছে ৫০০%

অর্থনীতি

30 August, 2021, 11:50 pm
Last modified: 31 August, 2021, 04:01 pm
গতবছর করোনা সংক্রমণের সময় বিশ্বজুড়ে লকডাউনকালে তৈরি পোশাকসহ দেশের প্রধান পণ্যগুলোর রপ্তানি যখন স্থবির হয়ে পড়ে, তখন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে একমাত্র আশার ঝলক দেখায় পাট ও পাটপণ্য।

তৈরি পোশাক ছাড়া দেশের একমাত্র বিলিয়ন ডলার রপ্তানির খাত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে রাজস্ব ফি ৫০০ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পাট অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এতে অধিদপ্তরের বাড়তি আয় হবে প্রায় ১২-১৭ কোটি টাকা, যা পণ্য রপ্তানির সময়ই উৎসে কেটে রাখবে ব্যাংকগুলো।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে- ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে কাঁচাপাট রপ্তানির ক্ষেত্রে বেল প্রতি ২.০০ টাকা হারে এবং পাটপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানি মূল্যের প্রতি ১০০ টাকায় ০.১০ টাকা হারে রাজস্ব ফি নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এটি বাজেটে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আরোপিত ০.৩৫ শতাংশ উৎসে করের বাইরে 'পরিদর্শন ফি' হিসেবে এই টাকা রাজস্ব আদায় করে পাট অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, রপ্তানির দলিল হস্তান্তর বা ডকুমেন্ট নেগোসিয়েশন এর সময় ব্যাংকগুলো এসব অর্থ কেটে রেখে কর ব্যতীত রাজস্ব হিসেবে পাট অধিদপ্তরে জমা দেয় ব্যাংকগুলো।

গতবছর করোনা সংক্রমণের সময় বিশ্বজুড়ে লকডাউনকালে তৈরি পোশাকসহ দেশের প্রধান পণ্যগুলোর রপ্তানি যখন স্থবির হয়ে পড়ে, তখন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে একমাত্র আশার ঝলক দেখায় পাট ও পাটপণ্য।

তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই রপ্তানিতে বড় পতন শুরু হয়েছে। এই সময়ে পরিদর্শন ফি হিসেবে আদায় করা রাজস্ব ফি'র পরিমাণ বাড়লে- তা পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।

বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এবং দুবাই জুট অ্যান্ড ব্যাগ করপোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. শফিউল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, করোনার প্রভাবে পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা ও দাম আন্তর্জাতিক বাজারে মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফলে গত জুলাই মাসে, আগের বছরের জুলাইয়ের চেয়ে রপ্তানি অর্ধেক কমে যায়।

'এই পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে সরকারের বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চিন্তা করার কথা কল্পনাই করা যায় না। পাট অধিদপ্তর পরিদর্শন ফি'র নামে ৫০০ শতাংশ ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নিলে তাতে রপ্তানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে'- যোগ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১ এপ্রিল পাট অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক হোসেন আলী খোন্দকার কাঁচাপাট রপ্তানির ক্ষেত্রে রাজস্ব ফি বেল প্রতি ২.০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা এবং পাটপণ্য রপ্তানিতে ০.১০ শতাংশের বদলে ০.৫০ শতাংশ নির্ধারনের প্রস্তাব করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছেন।

তিনি বলেছেন, বিদ্যমান হারে পাট অধিদপ্তর বছরে ৩ থেকে ৩.৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। প্রস্তাবিত হারে রাজস্ব পাওয়া গেলে এটি বেড়ে ১৫-২০ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি ও অগ্রযাত্রায় পাট অধিদপ্তর বাড়তি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

চিঠিতে রাজস্ব ফি বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে সরকার ৮-২০ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেছে পাট অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত) মো. এনায়েত উল্লাহ খান ইউছুফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।'

তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে 'পরিদর্শন ফি' নামে রাজস্ব আদায়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।  

অধিদপ্তরের ওই প্রস্তাব অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সার্কুলার জারির অনুরোধ করে গত ২৮ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ করে চিঠি পাঠিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।   

আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবিএম রুহুল আজাদের সভাপতিত্বে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে বাড়তি ফি আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ফি নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি করবে বলে জানা গেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছর পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১.১৬ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর খাতটি থেকে ১.৪২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

কিন্তু, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬০.৭৭ মিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫০ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈচিত্রকৃত পাটপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্য (হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি) রপ্তানিতে ১২ শতাংশ ও পাট সুতা (ইয়ার্ন ও টোয়াইন) রপ্তানিতে ৭ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয় সরকার।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.