পণ্য জাহাজীকরণে হিমশিম খাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা
কাভার্ড ভ্যান এবং ট্রাক ধর্মঘটের কারণে টানা চার দিন রপ্তানি পণ্য আটকে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। সময়মতো পণ্য চালানে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। এমনকি অতিরিক্ত খরচে এয়ার ফ্রেইটে পণ্য পরিবহনের পরেও সময়মতো চালান দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে পোশাক শিল্পের নেতারা জানান, বিমানযোগে পণ্য পরিবহনের ফলে খরচ আরও বেড়ে গেছে। এছাড়া সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হওয়ায় অনেক কারখানায় কাঁচামালের ঘাটতি রয়েছে বলেও জানান তারা।
এমবি নিট ফ্যাশন লিমিটেডের মালিক মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ০.২৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য এয়ার ফ্রেইটের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য তাদেরকে চাপ দিচ্ছে একজন সুইডিশ ক্রেতা। তাদের মোট রপ্তানি মূল্যের ৫৫ শতাংশ এটি। তারা আরও জানায়, ইতোমধ্যে তারা এক মার্কিন ক্রেতার পণ্য সময়মতো চালান দিতে ব্যর্থ হন। অর্ডার বাতিল বা পণ্যের উপর ডিসকাউন্ট এড়াতে তাদের পাশাপাশি অনেক পোশাক রপ্তানিকারকই এয়ার ফ্রেইটের মাধ্যমে পণ্য চালানে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোঃ শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, "পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় এয়ার ফ্রেইটের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া, বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে আমাদেরকে।" বন্দরে অতিরিক্ত সময় মজুদ থাকার ফলে জরিমানারও পরিমাণ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
বন্দর কর্মকর্তাদের মতে, সাধারণত, একটি জাহাজকে বন্দরে এক দিন অতিরিক্ত থাকার জন্য ১০ হাজার ডলার থেকে ১২ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়। পাশাপাশি কন্টেইনারের আকারের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় এই পরিমাণ। "আমরা কাভার্ড ভ্যান এবং ট্রাক ধর্মঘটের বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন সরকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করছি," বলেন তিনি।
এর মধ্যে সোমবার, রপ্তানি পণ্যের ১,৪০০ কন্টেইনার ছাড়াই ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে দুটি জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
এছাড়া, কলম্বো বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া তিনটি জাহাজকে তাদের নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করতে হয়। রপ্তানি পণ্যের বক্স জাহাজে লোড করতে না পারায় এই পরিস্থতি দেখা দেয়।
সাম্প্রতিক ধর্মঘটে পণ্যবাহী যানবাহন বন্দরে প্রবেশ করতে পারে নি। ফলে, অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোগুলোতে বিশ-ফুটের প্রায় দশ হাজার ৭২০ টি কন্টেইনার আটকা পড়ে।
এদিকে, সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠকের পর কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক মালিকরা ধর্মঘট স্থগিত করেন। এছাড়া, ভাড়া নির্ধারণের জন্য দু-একদিনের মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-র সঙ্গে তারা আলোচনায় বসবেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাকের সভাপতি মকবুল আহমেদ। তিনি আরও বলেন, সরকার যমুনা ও মুক্তারপুর সেতুতে বর্ধিত টোল প্রত্যাহার করেছে।
এর আগে, বর্ধিত জ্বালানি মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে, যমুনা ও মুক্তারপুর সেতুতে টোল বাড়ানো এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার টোল প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার ধর্মঘটে যান ট্রাকচালকরা।
যেখানে গত ৪ নভেম্বর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ১২৫ টিইউই, সেখানে সোমবার টিইউই নেমেছে ২ হাজার ৪৭২ এ।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত চার দিন ধরে কনটেইনার পরিবহন না হওয়ায় আগামী দিনগুলোতে কনটেইনার যানজটের সৃষ্টি হতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক বলেন, "বন্দরে এখন আরও ৩ হাজার ৪৩১টি কনটেইনার রয়েছে। আমরা আশা করি ধর্মঘট বাতিল হলে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।"
অপরদিকে বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক প্রাইম মুভার গুডস ট্রান্সপোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমেদ বলেন, তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে পণ্য পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
রপ্তানির অপেক্ষায় মোংলায় ৩ শতাধিক কন্টেইনার
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিকদের ডাকা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, প্রাইম মুভার পণ্যপরিবহন মালিক সমিতি।
দ্রুত ট্রাক, লরি ও কার্গো ভ্যান চালু না হলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতে পড়বে মোংলার আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বন্দরে জেটিতে রপ্তানির অপেক্ষায় পণ্যবোঝাই প্রায় ৩ শতাধিক কন্টেইনার পড়ে আছে।
তবে লঞ্চ ও মোংলা-ঢাকা মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হওয়ায় ভোগান্তি কমেছে এ অঞ্চলের সাধারণ যাত্রীদের।
আজ সোমবারও মোংলা বন্দরে দেশের কোথাও থেকে রপ্তানিযোগ্য কোন পণ্যবাহী পরিবহন আসেনি। এছাড়া জেটির অভ্যন্তর থেকেও কোন ট্রাক বা লরি ছেড়ে যায়নি, বন্ধ রয়েছে বন্দরে আমদানি-রপ্তানিযোগ্য সকল পণ্য পরিবহন। ফলে রপ্তানি পণ্য পরিবহনে একপ্রকার অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে মোংলা বন্দরে।
একদিন পরেই মোংলা বন্দরে কন্টেইনার শিপ আসার শিডিউল রয়েছে; অথচ ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত করতে পারেনি রপ্তানিযোগ্য কন্টেইনার। এছাড়া এ বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন শহরের আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই কয়েক শতাধিক কন্টেইনার ট্রাক ও লরির অভাবে বন্দর থেকে বেরও হতে পারছেনা। ফলে ব্যবসায়ীদের দৈনিক বড় অংকের একটা অর্থ (লেন্ডিং চার্জ) দিতে হচ্ছে বন্দরকে।
ধর্মঘটের কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে যেমন জেটিতে রপ্তানি পণ্য আনা যাচ্ছে না, তেমনি পণ্যবাহী কন্টেইনার প্রস্তুত করে সময়মতো বন্দর থেকে জাহাজে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না।