নগদের মালিকানা বিরোধের অবসান

অর্থনীতি

26 August, 2021, 11:20 pm
Last modified: 27 August, 2021, 11:33 am
সরকারের পক্ষে ডাক বিভাগের হাতে কোম্পানিটির ৫১ শতাংশের মালিকানা থাকবে, বাকি ৪৯ শতাংশ মালিকানা পাবে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস

দ্রুত বিকাশমান মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রোভাইডার নগদ-এর মালিকানা বন্টন নিয়ে একমত হয়েছে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স শর্তপূরণ সাপেক্ষে সরকারের পক্ষে ডাক বিভাগের হাতে কোম্পানিটির ৫১ শতাংশের মালিকানা থাকবে, বাকি ৪৯ শতাংশ মালিকানা পাবে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস।

গত ৩০ জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ বিষয়ে একমত হয়েছেন ডাক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের কর্মকর্তারা।

ওই সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন ও ভেন্ডরস এগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত করার কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, নগদের পরিচালনা পর্ষদ হবে ৯ সদস্যের। যেখানে চেয়ারম্যানসহ ৫ জন নিয়োগ দেবে সরকার। ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বোর্ডের চার সদস্য নিয়োগ দেবে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস।

গত আড়াই বছরে মোট তিনবার কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণের জন্য বর্ধিত সময় পায়- নগদ। তবে মালিকানা ও পরিচালক পর্ষদ গঠন নিয়ে ডাক বিভাগ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে এখনও কোম্পানিটি লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে। 

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) 'নগদ বাংলাদেশ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি' নামে নিবন্ধিত হবে এটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সের শর্তপূরণের অংশ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে 'নগদ লিমিটেড' করা হয়েছে। নগদ বাংলাদেশ পিএলসি নামে কোম্পানিটি নিবন্ধন করার আগে 'নগদ লিমিটেড'-এর নাম পরিবর্তন করে পুনরায় থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১০ আগস্ট নগদ বাংলাদেশ পিএলসি নামে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আরজেএসসি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সব খসড়া দলিলাদি পাঠিয়ে মতামত চেয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

কোম্পানি আইন অনুযায়ী লাভ-লোকসান, সম্পত্তি ও দায়সহ সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে সার্বিক বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনাসহ সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তার অনুমোদনের পর কোম্পানি গঠন করা হবে।

নগদ বাংলাদেশ পিএলসির খসড়া মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, কোম্পানির মোট অনুমোদিত শেয়ার মূলধনের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। এই একশো কোটি টাকার অনুমোদিত শেয়ার- ১০ টাকার ৫ কোটি ১০ লাখ সাধারণ শেয়ার এবং ১০ টাকার ৪৯ কোটি ৯০ লাখ অগ্রাধিকার শেয়ারে বিভক্ত।

সভায় থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. সাফায়েত আলম বলেন, নগদ- এর কার্যক্রম উত্তরোত্তর বাড়ছে। দ্রুত বাড়ছে দৈনিক লেনদেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ধারণা করা যায় যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এমএফএস-এর বাজার বিশাল আকার ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানির প্রয়োজনে বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু ডাক অধিদপ্তর সুনাম ও এর স্থাপনা ব্যবহারের মাধ্যমে কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নতুন পুঁজির প্রয়োজন হলে ডাক অধিদপ্তরেরও শেয়ার অনুপাতে বিনিয়োগ করতে হবে।'

এ বিষয়ে ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, 'নগদ বাংলাদেশ পিএলসি গঠনের পূর্বের থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের কোন ধরনের দায় ডাক অধিদপ্তর বহন করবে না।'

আরজেএসসির ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবু ইসা মোহা. মোস্তফা ভূঁইয়া জানান, কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানির লাভ-লোকসান উভয়ের ভাগ নিতে হবে। শুধু রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠনের সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ডাকঘরের মোবাইল আর্থিক পরিষেবা নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ব্যবসায় গতি আনার জন্য নগদ বাংলাদেশ পিএলসি গঠনের আইনি প্রক্রিয়া চলছে। পর্যালোচনার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যালোচনা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজটি বাস্তবায়ন করা হবে।

'এত দিনে প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে যেত। কিন্তু কঠোর লকডাউন এবং পরবর্তীতে অফিসের নিয়মিত কাজে ধীরগতির কারণে দেরি হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই ইতিবাচক ফলাফল পাবেন'- বলে আশা প্রকাশ করেন তানভীর এ মিশুক।

তিনি বলেন, 'শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে। কোম্পানিতে আমরা নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ চাই। আমার বিশ্বাস, এর ফলে নগদকে শক্তিশালী হবে। মুনাফার দিক থেকে কোম্পানিতে রূপ দেওয়ার পর এটি করতে আরও দুই-তিন বছর সময় লাগবে।'

নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ভবিষ্যতের বাজার বা ব্যবসা সম্প্রসারণ পরিকল্পনার জন্য তাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো নগদের ব্যবসাকে মজবুত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। এবং নাগরিকদের ডিজিটাল জীবনে প্রবেশ করে সেবা বিস্তৃত করা। 

তানভীর এ মিশুক বলেন, 'নগদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো শহুরাঞ্চলের মতো দেশের গ্রামাঞ্চলেও সবচেয়ে ভালো মানের পরিষেবা নিশ্চিত করা।'

তিনি জানান, নগদ বাংলাদেশ পিএলসি গঠনের ফলে কোম্পানির ব্যবসা আরো বৃদ্ধি পাবে। এজন্য দরকারি সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যালোচনার পর দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তার ভিত্তিতে নতুন মালিকানা কাঠামোয় কোম্পানি গঠনের কাজ শুরু হবে। 

বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল মোবাইল আর্থিক পরিষেবা নগদের বর্তমান নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৪০ লাখ। ব্যবসা করার উদ্ভাবনী পদ্ধতি এবং অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ার বিমা করে সহজে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে কোম্পানিটি। 

নগদ-এর দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকা। অ্যাপের মাধ্যমে কোনো ফি ছাড়াই টাকা পাঠানো যায়, বিল পরিশোধও ফ্রি। এ ধরনের ছাড়ে পেমেন্ট ব্যবস্থা নগদই দেশে প্রথম চালু করেছে, যা এই খাতের বাজারে প্রতিযোগিতা নিয়ে এসেছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.