ধামাকার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের মামলা করবে সিআইডি 

অর্থনীতি

07 September, 2021, 09:55 am
Last modified: 07 September, 2021, 12:52 pm
নভেম্বরে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালীর মতো গাড়ী, বাইকসহ বিভিন্ন পণ্যে ৪০% থেকে ৫০% পর্যন্ত অফার দিয়ে গ্রাহকদের থেকে মোটা অংকের টাকা অগ্রিম হিসেবে তুলে নেয় ধামাকা।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকার বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ এনে মামলা করতে যাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ধামাকার মালিক প্রতিষ্ঠান মাইক্রোট্রেড গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম ও মাইক্রোট্রেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে টাকার একটা বড় অংশ সরানো হয়েছে। বাকি টাকা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, ধামাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর প্রাথমিক তদন্তে এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সন্ধান পাওয়া গেছে।

তবে এর জন্য ঠিক কাকে অভিযুক্ত করা হবে তা প্রকাশে তিনি অস্বীকৃতি জানান। 

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ধামাকা তাদের হাজার হাজার গ্রাহককে "ডাবল টাকা ভাউচার", "সিগনেচার কার্ডস" এবং মোটা অংকের ছাড়ের মতো আকর্ষণীয় সব অফারের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ধামাকা শপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসিম উদ্দিন চিশতির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের হবে; চিশতি মাইক্রোট্রেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকও। ধামাকার চিফ অপারেটিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম রানা এবং চেয়ারম্যান মোজতবা আলীর নামও অভিযুক্তের তালিকায় যুক্ত হতে পারে। 

চিশতি এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের আগস্টের মধ্যে ধামাকা শপিংয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। জুলাই মাসে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দের পর কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স ছিল মাত্র ৯৩,০০০ টাকা।

গত বছরের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে ধামাকা। ইভ্যালীর মতো গাড়ী, বাইকসহ বিভিন্ন পণ্যে ধামাকা ৪০% থেকে ৫০% পর্যন্ত অফার দিয়ে গ্রাহকদের থেকে মোটা অংকের টাকা অগ্রিম হিসেবে তুলে নেয়। পরে প্রতিষ্ঠানটি মার্সিডিজ বেঞ্জসহ নামীদামী বিভিন্ন ব্যান্ডের গাড়ীতে ৩৫% অফার দিয়ে চমক সৃষ্টি করে।

বর্তমানে বাইক এবং গাড়িতে দেওয়া ডিসকাউন্ট কমিয়ে ১০% করা হয়েছে।

এর আগে ইভ্যালির নানা অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত ও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশের ১৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে নিজ উদ্যোগে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে ধামাকা, আলেশা মার্টসহ অন্তত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে নানা অনিয়ম উঠে আসে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অবৈধ কাজে সহায়তা করছে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদীনের প্রদীপ, কিউকম, বুমবুম, আদেন মার্ট, নিডস, দালাল প্লাস, বাজাজ কালেকশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারিতে রেখেছে সিআইডি।

পাশাপাশি ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ব্র্যাক ব্যাংক সহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক ১০টি ই-কমার্স কোম্পানির সাথে অনলাইন লেনদেনের জন্য তাদের ডেবিট, ক্রেডিট এবং প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার স্থগিত করেছে।

মানি লন্ডারিংয়ের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ধামাকাশপিং ডটকমের চিফ অপারেটিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম রানা সোমবার বলেন, "আমার কাছে এই বিষয়ে তথ্য নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহের তথ্য বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা খুঁটিয়ে দেখছে"।  

"বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই আমাদের ঋণ এবং পণ্য ডেলিভারি সম্পর্কে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর সন্তোষজনক জবাব দেব। চলমান সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এজন্যই আমরা ২৪ আগস্ট থেকে রিফান্ড দিতে এবং পূর্বঘোষিত পণ্যের ডেলিভারি করতে পারিনি"। 
  
 
 
 
 
 

 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.