তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড: ৫ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে সর্বাধিক

অর্থনীতি

25 February, 2021, 02:00 pm
Last modified: 25 February, 2021, 02:10 pm
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে তৈরি পোশাক ও শিল্প কারখানায় ৫ হাজার ৮৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্প কলকারখানা।

২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। ভোর ৫টা ৫৫ মিনিট। রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনের লেলিহান শিখায় কারখানার মধ্যে পুড়ে মারা যান ৪১ জন। আগুনে ক্ষয়ক্ষতি হয় কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।

শুধু টাম্পাকো ফয়েলস কারখানা নয়, গত কয়েক বছরে  গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানায় ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।  এসব ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকা। 

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানায় ৫ হাজার ৮৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্প কলকারখানা।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রমতে, গত ১০ বছরে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানায় বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পর সরকারের উচ্চ মহল থেকে ফায়ার সেফটির জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

নিয়মিত প্রশিক্ষণ, মহড়া ও শিল্প কারখানাগুলো কপ্লায়েন্স হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেক কমেছে বলে দাবি করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

তবে ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিল্প কলকারখানায় আগুনের ঘটনা কমলেও, গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ২০১৭ সালের পর কিছুটা কমলেও গত বছর আবার বেড়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে সারাদেশে শিল্প কলকারখানায় ১ হাজার ১৬৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরের বছর আগুনের ঘটনা ছিল ১ হাজার ১৯টি। ২০১৮ সালে এসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কিছুটা বেড়ে যায়। সে বছর ১ হাজার ১৩১টি দুর্ঘটনা ঘটে। পরবর্তী দুই বছর ধারাবাহিকভাবে কমেছে আগুনের ঘটনা। ২০১৯ সালে ৯৯৭ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২০ সালে অর্ধেকের বেশি কমে গিয়ে আগুনের ঘটনা ঘটে মাত্র ৩৮৩টি।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালে সারাদেশে গার্মেন্টসে ২৫৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরের বছর সেটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৭০-এ।  এরপর টানা ২ বছর আগুনের ঘটনা কমেছিল। ২০১৮ সালে ছিল ১৭৩ এবং ২০১৯ সালে ছিল ১৬৫টি। কিন্তু ২০২০ সালে অগ্নিকাণ্ড বেড়ে যায়। সে বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ২৭৩টি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শিল্প কলকারাখানায় ফায়ার সার্ভিস নিয়মিত পরিদর্শন করছে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মহড়া করা হচ্ছে। সরকার ও বিদেশি বায়ারদের চাপে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান কপ্লায়েন্সসহ নানা ফায়ার সেফটি ম্যাজারমেন্ট নিয়েছে। ফলে আগুনের ঘটনা কমেছে। কমেছে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহাণির ঘটনা।'

গার্মেন্টস কারখানায় আগুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এখনো অনেক শিল্প ও গার্মেন্টস কারখানা নন কপ্লায়েন্স রয়েছে। আর এসব শিল্প কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। যেসব প্রতিষ্ঠান যথাযথ ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাদের  ফায়ার সার্ভিস থেকে কোনো লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না।'

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে। মোট অগ্নিকাণ্ডের ৩৯% ঘটনা ঘটে এই বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ঘটে।

অন্যদিকে সারাদেশে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ঢাকা বিভাগে। অগ্নিকাণ্ডের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। আর সবচেয়ে কম আগুনের ঘটনা ঘটেছে সিলেটে।  

গত ১০ বছরে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানায় বড় বড় অগ্নিকাণ্ড:

গত ১০ বছরে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানায় অনেকগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে পুরান ঢাকার নিমতলীতে। এতে ১২৪ জন নিহত হন।

এর পরের বছর সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১১ জন। আর ২০১৬ সালে টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানার অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ৪১ জন।

এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডে গরীব অ্যান্ড গরীব গার্মেন্টসে ২১ জন, হামীম গ্রুপের গার্মেন্টসে ২৯ জন, মোহাম্মদপুরে স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেডে ৭ নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হন।

বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জন এবং চুড়িহাট্টায় ৭১ জন মারা যান।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.