তিন মাসে জনতার প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
17 June, 2021, 11:45 am
Last modified: 17 June, 2021, 11:51 am
ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির কোন প্রভিশন ঘাটতি ছিল না। তবে তিন মাসের ব্যবধানে মার্চ শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫,২৫৫ কোটি টাকা। 

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের বিপুল প্রভিশন ঘাটতি পুরো ব্যাংক খাতকেই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির কোন প্রভিশন ঘাটতি ছিল না। তবে তিন মাসের ব্যবধানে মার্চ শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫,২৫৫ কোটি টাকা। 

খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে পাওয়া প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সাধারণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে অর্থ ব্যাংকগুলোকে জমা রাখতে হয় সেটিই প্রভিশন বা সঞ্চিতি নামে পরিচিত। 

বর্তমানে সাধারণ ঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশনের হার ০.২৫ থেকে ৫ শতাংশ। আর খেলাপির ঋণের তিনটি স্তরে এই হার তিন রকম। সাব-স্ট্যান্ডার্ড হলে প্রভিশন হার ২০ শতাংশ, ডাউটফুল হলে ৫০ শতাংশ এবং মন্দঋণ বা ব্যাড/লস হলে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।

কোন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিলে তার মূলধন থেকে সেই ঘাটতি পূরণ করা হয়। এক্ষেত্রে জনতা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ প্রভিশন ঘাটতি হলেও গেল মার্চ শেষে ব্যাংকটির মূলধন পরযাপ্ততা ঘাটতি ছিল মাত্র ৪১৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো সরকারের হয়ে জনসাধারণকে বিনা পয়সায় অনেক সেবা দিয়ে থাকে, সেহেতু এসব ব্যাংককে প্রভিশন ঘাটতি পূরণে বাড়তি সময় দেয়া হয়, যা ডেফারেল হিসেবে পরিচিত। এ কারণেই মার্চে জনতা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ প্রভিশন ঘাটতি হলেও বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি নেই।

প্রভিশন ঘাটতি নিয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালামের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সরকারি ব্যাংকগুলোর মার্চ শেষে প্রভিশন ঘাটতি দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১০,৫৬১ কোটি টাকা। গেল ডিসেম্বর শেষে এই হার ছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে, জনতা ব্যাংকের প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংকখাতেই মার্চ শেষে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫,২৬৪ কোটি টাকা। গেল ডিসেম্বর শেষে এই ঘাটতি ছিল মাত্র ১২৩ কোটি টাকা। মার্চ শেষে সরকারি, বেসরকারি, বিদেশি ও বিশেষায়িত মিলে ১১টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে আছে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পরযালোচানা করে দেখা যায়, মার্চ শেষে মন্দ ঋণের পরিমাণ ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। মার্চে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩,১১৬ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭৭,১৯৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের সিংহভাগই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। মার্চ শেষে মোট খেলাপির ৮৮.১৭ শতাংশই মন্দ ঋণ। গেল ডিসেম্বরে এই হার ছিল প্রায় ৮৭ শতাংশ।

মন্দ ঋণ আদায় করা অত্যন্ত কঠিন। দীর্ঘ আইনী জটিলতা শেষে অনেক ক্ষেত্রে এই ঋণ আদায়ই হয় না। তিন বছরের বেশি সময় মন্দ ঋণ আদায় করতে না পারলে তা অবলোপন করা হয়। অবলোপন (রাইট অফ) হচ্ছে যে মন্দ ঋণ, ব্যাংকের মূল হিসাবের খাতার বাইরে রাখা হয়।

অবশ্য অবলোপন করার আগে ঋণ আদায়ে আদালতে মামলা করতে হয়। বর্তমানে কোন মামলা ছাড়া ২ লাখ টাকা পযন্ত তিন বছরের অনাদয়ী কোন মন্দঋণ অবলোপন করা যায়।

অবলোপন করে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হয়, তাই এটি নিয়ে সমালোচনা আছে। ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংখাতে ঋণ অবলোপন হয়ে আসছে।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.