জরিমানাসহ কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখছে সরকার

অর্থনীতি

23 June, 2021, 05:50 pm
Last modified: 23 June, 2021, 05:55 pm
অপ্রদর্শিত ব্যাংক আমানত এবং সঞ্চয়পত্র বৈধকরণের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য হবে

পয়লা জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখছে সরকার। তবে সেক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ করসহ প্রদেয় করের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা প্রদান করতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

অপ্রদর্শিত ব্যাংক আমানত এবং সঞ্চয়পত্র বৈধকরণের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া, ফ্ল্যাট বাড়ির মতো অপ্রদর্শিত সম্পদ বৈধ করার সুযোগও দেবে সরকার। সেক্ষেত্রে জরিমানার পাশাপাশি ফ্ল্যাটের আকার এবং অবস্থান অনুযায়ী প্রতি বর্গমিটারের জন্য ২০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও অন্যান্য অংশীদারদের দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত মঙ্গলবার এই প্রস্তাবনা পাঠায়।

এছাড়া, রাজস্ব বোর্ড অর্থবিল সংশোধনীতে কালো টাকার উৎস সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলা থেকে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে বিরত রাখতে একটি আইনি দায়মুক্তি বা ইনডেমনিটি বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।

রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাব অনুসারে, অপ্রদর্শিত অর্থের ওপর প্রযোজ্য করহার হবে ২৫ শতাংশ। যা ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের সর্বোচ্চ করহার। এছাড়া, নিয়মিত করদাতাদের প্রতি ন্যায় নিশ্চিত করতে করের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। 

এছাড়া, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এক বছরের মধ্যে কেউ অর্থ উত্তোলন করলে তাকে অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ জরিমানা প্রদান করতে হবে বলেও জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

দেশের বাইরে অর্থ পাচার ঠেকানোর পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কালো টাকা যুক্ত করতেই সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

তবে, গত ৩ জুন সংসদে উত্থাপিত অর্থবিলে কালো টাকা বৈধ করার কোনো বিধান ছিল না।

প্রস্তাবিত বিধান অনুসারে পুঁজিবাজার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং বন্ডের মতো সিকিউরিটিতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ৩০ দিনের মধ্যে মোট ২৭.৫ শতাংশ কর (২৫ শতাংশ নিয়মিত কর এবং করের পরিমাণের ওপর ১০ শতাংশ জরিমানা) প্রদান করতে হবে।

বিদায়ী অর্থবছরে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছিল।

তবে, আসন্ন বাজেটে নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুসারে সিকিউরিটি বিনিয়োগ এবং অপ্রদর্শিত সম্পদ ও নগদ অর্থের জন্য বিশেষ কর ব্যবস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার বর্তমান বিধানগুলো বাদ পড়তে চলেছে।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বিদ্যমান সুযোগের আওতায় ১০ হাজার ৩৪ জন ব্যক্তি ১৪২.৯৫ বিলিয়ন টাকা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও সম্পদ বৈধ করেন। এর বিপরীতে রাজস্ব বোর্ড এক হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা কর পায়।

এদের মধ্যে, মোট ৯ হাজার ৬৯৩ জন ব্যক্তি নগদ, ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট, সঞ্চয়পত্র সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য সম্পদ মিলিয়ে ১৩৮.৬০ বিলিয়ন টাকা সাদা করেন। বিপরীতে ১৩.৯০ বিলিয়ন টাকা কর প্রদান করেন।

অন্যদিকে, ৩৪১ জন ব্যক্তি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে ৪.৩৫ বিলিয়ন টাকা বৈধ করেন এবং কর হিসেবে ৪৯০ মিলিয়ন টাকা প্রদান করেন।

দেশে বর্তমানে কালো টাকার পরিমাণ সম্পর্কে জানার মতো কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের একটি প্রতিবেদনে কালো টাকার পরিমাণ বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৩৭ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় যে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়। এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার করা হয় বলে সংস্থাটির অনুমান।

২০১৮ সালের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির পরিচালিত জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থের বার্ষিক সঞ্চালনের পরিমাণ ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রহমান বলেন, 'জরিমানা আরোপ করে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া একটি ভালো উদ্যোগ। তবে জরিমানার পরিমাণ একেবারেই কম, যা গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের উচিত নিয়মিত কর হার এবং করফাঁকি দেওয়া অর্থ বৈধকরণের জরিমানার মধ্যে যৌক্তিক পার্থক্য সৃষ্টি করা।'

বিল্ড বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান বলেন, 'কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে অন্তত ৩৫ শতাংশ জরিমানা নির্ধারণ করা উচিত। কেননা, সম্পদের ওপর কর দেওয়ায় উচ্চ-আয়ের করদাতাদের করের বোঝা ৩৫ শতাংশের বেশি হয়।'
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.