জনতা ব্যাংক নিয়ে হতাশ অর্থমন্ত্রী ও গর্ভনর

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
22 March, 2021, 10:15 am
Last modified: 22 March, 2021, 10:19 am
গেল বছর শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৯৪ শতাংশের বেশি ঋণ মন্দমানে পরিণত হয়েছে। এত বেশি মন্দঋণ সরকারি-বেসরকারি আর কোন ব্যাংকের নেই। 

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ব্যাংকটির ব্যালেন্স-শিট আশাব্যঞ্জক নয় বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে মূলধন পর্যাপ্ততা বাড়ানো, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও ঋণ বিতরণ বাড়ানোর কথা বলেছেন গভর্নর। 

রবিবার (২১ মার্চ) দুপুরে মতিঝিলে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে মুজিব কর্ণারের উদ্বোধনীতে তারা এসব কথা বলেন।   

অনুষ্ঠানে অনলাইনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'জনতা ব্যাংক একসময় জনমানুষের ব্যাংক ছিল। আমি জানি না এখন তাদের অবস্থা কী। মার্চ মাসে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। এমন উদযাপনের সময় ব্যাংকটির ব্যালেন্স-শিট খুব আশাব্যঞ্জক নয়'।  

অর্থমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে আমাদের সিদ্ধান্ত  হলো প্রতিটি জায়গায় অপচয়, দুর্নীতি রোধ করা। সততার সাথে অপচয় দূর করতে পারলে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। 

এদিকে অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, 'জনতা ব্যাংকের উচিত হবে মূলধন পর্যাপ্ততা বাড়ানোর দিকে নজর দেয়া। পাশাপাশি খেলাপি ঋণও কমিয়ে আনতে হবে'। 

গেল বছর ব্যাংকটির আমানতের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হলেও সেই অনুপাতে ঋণ বাড়েনি। ঋণ বাড়ানো ছাড়াও সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়ার কথা বলেন গভর্নর। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, কোভিড মহামারীতেও ব্যাংকগুলো যেভাবে সেবা দিয়ে গেছে এই অভ্যাস আগামীতেও ধরে রাখতে হবে। জনতা ব্যাংকের সেবার মান বাড়ানোর কথা বলেছেন তিনি।

গ্রাহক সেবায় ঘাটতির কথা স্বীকার করে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস.এম. মাহফুজুর রহমান বলেন, সেবার মান বাড়াতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া মূলধন পর্যাপ্ততা ও খেলাপি আদায়ে পিছিয়ে থাকার কথা উল্লেখ করে জানান এসব বিষয়েও কাজ চলছে।  

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঠিকমত সহায়তা করা যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিডের কারণে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় ব্যবসায়ী সম্মেলন করতে না পারায় তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে।  

গেল পাঁচ বছরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ১৩.৬২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। 

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি এখন জনতা ব্যাংকের। ক্রিসেন্ট লেদার, অ্যাননটেক্সসহ কয়েকটি ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকটির মন্দঋণের পরিমাণও অনেক বেড়েছে। 

গেল বছর শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৯৪ শতাংশের বেশি ঋণ মন্দমানে পরিণত হয়েছে। এত বেশি মন্দঋণ সরকারি বেসরকারি আর কোন ব্যাংকের নেই। 

মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রেও সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ব্যাংকটি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গেল বছরের ডিসেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।  

ব্যাসেল থ্রি অনুযায়ী যেখানে ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততা (সিএআর) থাকার কথা সাড়ে ১২ শতাংশ, সেখানে আছে মাত্র ১.০১ শতাংশ।  

শুধু জনতা নয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব সবগুলো ব্যাংকই মূলধন ঘাটতিতে আছে। 

এছাড়া ব্যাংকখাতে গেল বছর শেষে ৮৮,৭৭৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে সরকারি ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক- ৪২,২৭২ কোটি টাকা।

একুশে পদক পাওয়া আলোকচিত্রী পাভেল রহমানের তত্ত্বাবধানে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ১২তম ফ্লোরে মুজিব কর্ণার উদ্বোধন করা হয়েছে। কর্ণারে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ ও আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।  

মুজিব কর্ণারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হবে বলে জানান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুছ ছালাম আজাদ। ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠানে তিনি তার স্বাগত বক্তব্যে কোন কিছু উল্লেখ করেননি।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.