গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড থেকে ঋণ নিতে অনাগ্রহ

অর্থনীতি

26 June, 2021, 12:15 pm
Last modified: 26 June, 2021, 04:21 pm
৩,৭২০ কোটি টাকার তহবিল থেকে গেল বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় হয়েছে মাত্র ৭৭৮ কোটি টাকা, যা মোট তহবিলের ২১ শতাংশ।   

পরিবেশবান্ধব রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের জন্য ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) নামে তহবিল গঠন করলেও তা থেকে ঋণ নিতে টেক্সটাইল ছাড়া অন্য খাতের কারখানা মালিকদের আগ্রহ নেই।

৩,৭২০ কোটি টাকার তহবিল থেকে গেল বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় হয়েছে মাত্র ৭৭৮ কোটি টাকা, যা মোট তহবিলের ২১ শতাংশ।   

শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, ঋণ পেতে নানা ধরনের শর্তের কড়াকড়ি, অনেকে খেলাপি হয়ে যাওয়া এবং তহবিলের বিষয়ে অতটা না জানায় এই ঋণে তাদের আগ্রহ কম। 

২০১৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে এই তহবিল গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বর্তমান বিনিময় হারে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১,৬৯৫ কোটি টাকা।

প্রাথমিকভাবে এই তহবিল থেকে টেক্সটাইল ও চামড়া খাতের জন্য ঋণ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা থাকলেও পরবর্তীতে সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। 

গেল বছরের এপ্রিলে গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) কে বর্ধিত করে ২০০ মিলিয়ন ইউরো (২০২৫ কোটি টাকা) যুক্ত করা হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শিল্পায়নে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই তহবিলটির কথা উল্লেখ করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রম শীর্ষক সবশেষ প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, তহবিলের একটি অংশ ২০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে গেল বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০টি আবেদনের বিপরীতে ছাড় হয়েছে ৮৯.৬৯ মিলিয়ন ডলার বা ৭৬০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে তহবিলের আরেক অংশ ২০০ মিলিয়ন ইউরোর মধ্যে গেল ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩টি আবেদনের বিপরীতে ছাড় হয়েছে ১.৮৪ মিলিয়ন ইউরো বা ১৮.৬৪ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ২০০ মিলিয়ন ডলার থেকে সবশেষ হিসাব অনুযায়ী ছাড় হয়েছে ১১২ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ২০০ মিলিয়ন ইউরো থেকে ছাড়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ মিলিয়ন ইউরো।

ওই কর্মকর্তা জানান, স্বল্প সুদের ঋণ সুবিধা থাকলেও এখন পর্যন্ত টেক্সটাইল সেক্টর ছাড়া অন্য কোন খাত থেকে তারা আবেদন পাননি। বিশেষ করে চামড়া ও প্লাস্টিক খাত থেকে ঋণ আবেদন আশা করছেন।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে তাদের হাতে ১০ থেকে ১২টি আবেদন আছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় ওই সব আবেদন এর বিপরীতে তারা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করতে পারছেন না। যে কারণে এই আবেদনগুলোর বিপরীতে ঋণ ছাড় করা যাচ্ছে না।

চামড়া খাত থেকে কেন আবেদন আসছে না জানতে চাইলে খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, তাদের অনেকে এই তহবিলের বিষয়ে জানেন না। অন্যদিকে এই খাতের ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় নতুন ঋণ পাওয়া সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. আবু তাহের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, এই তহবিলের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

তহবিল প্রসঙ্গে জানা থাকলেও চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করতে গিয়ে অনেকে খেলাপি হয়ে যাওয়ায় তহবিল থেকে ঋণ পাওয়া যাবে না।

এমনটা জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকদের সংগঠন ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি আরো বলেন, ঋণ পাওয়ার শর্ত অনেক জটিল।

ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্ল্যাহ বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে তাদের সহায়তা করে না।

প্লাস্টিক খাতের বিষয়ে জানতে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এবং বর্তমানে এফবিসিসিআই এর সভাপতি জসিম উদ্দিনকে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

জিটিএফ থেকে নেয়া ঋণের সুদহার লন্ডন আন্ত:ব্যাংক সুদহারের (লাইবর) সাথে আরো ২ শতাংশ যুক্ত করা হয়। অন্যদিকে ইউরোতে ঋণ নিলে ইউরিবরের (ইউরো ইন্টার ব্যাংক অফার রেট বা ইউরিবর) সাথে আরো ১ শতাংশ সুদ যুক্ত হয়। 

টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তহবিলের সুদহার কম হওয়ায় তাদের জন্য পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন সহজ হচ্ছে। 

ইউরো থেকে স্বল্প ছাড় প্রসঙ্গে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ইউরোতে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত ছিল মেশিনারিজ ইউরোপ থেকে আমদানি করতে হবে। বর্তমানে এই শর্ত কিছুটা শিথিল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে ইউরোর জন্য ঋণ আবেদন বাড়বে। 

কারখানার কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন, পানি, বায়ু ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রূপান্তরিত জ্বালানি, তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনা, কারখানা সংলগ্ন বায়ু মানের উন্নয়নসহ ১০টি খাতের জন্য বিদেশ থেকে মেশিনারিজ আমদানিতে গ্রিন ট্রান্সফরমেশন তহবিল থেকে ঋণ দেয়া হয়।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.