কৃষিতে নতুন বিনিয়োগকারীরা পাবে ১০ বছরের আয়কর অব্যাহতি 

অর্থনীতি

25 May, 2021, 11:15 am
Last modified: 25 May, 2021, 11:17 am
চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যারা এই খাতে বিনিয়োগ করবে তারাই আয়কর অব্যাহতির সুবিধাটি পাবে। 
  • শাকসবজি, ফলমুল, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতে নতুন বিনিয়োগকারী পাবে ১০ বছরের আয়কর রেয়াত সুবিধা
  • বিনিয়োগ করতে হবে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা
  • নিবন্ধন নিতে হবে বিডার
  • কাঁচামাল হতে হবে সম্পূর্ণ দেশে উৎপাদিত
  • উৎপাদনকারী কারখানার পরিবেশ বা পণ্যের মানের কারণে শাস্তি পেলে এ সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে
  • মাছ চাষের আয়কর বাড়ছে

গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কৃষিভিত্তিক চারটি শিল্প স্থাপনে ১০ বছরের জন্য বিশেষ কর অব্যাহতি সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফলমূল, শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন এবং কৃষি যন্ত্র তৈরিতে সম্পূর্ণ নতুন বিনিয়োগকারীরা এই সুবিধাটি পাবে।    

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক উৎপাদনের লক্ষ্যে এসব খাতের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রথম দশ বছর আয়ের উপর কর অব্যাহতির সুবিধা দেয়া হবে।

খাতগুলোতে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এ সুবিধা দিতে যাচ্ছে।

চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যারা এই খাতে বিনিয়োগ করবে তারাই আয়কর অব্যাহতির সুবিধাটি পাবে। 

তবে বর্তমানে যারা এই ধরনের উৎপাদন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারা নতুন কোন ইউনিট তৈরি করে বা পুন:সংযোজিত হয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করলেও সুবিধাটি পাবে না। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে পণ্যের নতুনত্ব তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। শুধুমাত্র তাজা ফলমূল, শাকসবজি রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এ কারণে পণ্যে বৈচিত্র আনতে সরকার নতুন বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করতে চায়, তৈরি করতে চায় নতুন উদ্যোক্তা।    

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬৪.৫ মিলিয়ন ডলারের তাজা সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়েছে।  

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০৬.৮০ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়েছে। যেখানে চাহিদা রয়েছে ১৫২.০২ লাখ মেট্রিক টনের। তবে উৎপাদিত দুধের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহার হয় প্রক্রিয়াজাতকারী শিল্পে। যারা প্রক্রিয়াজাত করে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য বাজারজাত করে। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ, আকিজ, আফতাব, রংপুর ডেইরী উল্লেখযোগ্য।  

আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. মোসলেহ উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'আয়কর অব্যাহতির সুবিধাটা দেয়া হলে সেক্টরে অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করবে। ফলে সেক্টরটাও দ্রুত বাড়বে।'  

উৎপাদিত বাকি দুধগুলো চিরাচরিত পদ্ধতিতে হাটবাজার, মিষ্টি ও নানা মিষ্টান্ন তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রক্রিয়াজাত করে দুধের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে সরকার এই খাতের নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চায়।

উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর আয়কর অব্যাহতির জন্য অবশ্য বেশকিছু শর্ত মানতে হবে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক নিবন্ধিত হতে হবে এবং বিনিয়োগের পরিমাণ থাকতে হবে কমপক্ষে এক কোটি টাকা। 

শর্তারোপ করা হয়েছে কারখানার কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। অবশ্যই এসব কারখানার কাঁচামাল সম্পূর্ণভাবে দেশে উৎপাদিত হতে হবে। তা না হলে উৎপাদনকারী কারখানা এই সুবিধা পাবে না। 

তবে শাকসবজি, ফলমূল প্রক্রিয়াজাতকরণ, দুগ্ধ ও দু্গ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, শিশু খাদ্য উৎপাদনের কারখানাগুলো যদি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে বা মানহীন খাদ্য উৎপাদনের কারণে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জরিমানা আরোপিত হয় তাহলে এই সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে।  

তবে কোন কর বছরের কর নির্ধারণকালে যদি দেখা যায়, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর কোনো বিধান পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে তবে উক্ত বছরে প্রদত্ত অব্যাহতি সুবিধা প্রাপ্য হবে না এবং নিয়মিত হারে কর পরিশোধ করতে হবে। 

এছাড়া কৃষি যন্ত্রের বর্ণনায় বলা হয়েছে, শস্য উৎপাদনে বা যেকোনো প্রকারের কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয় এমন যন্ত্র। এসব যন্ত্র উৎপাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নিজ কারখানায় ন্যূনতম ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজিত হয় এমন জ্বালানি বা বিদ্যুৎ চালিত কৃষি যন্ত্রের জন্য এই প্রজ্ঞাপনের সুবিধা থাকবে। 

একই সঙ্গে নিজস্ব কারখানায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজিত হয় এমন জ্বালানি বা বিদ্যুৎ চালিত কৃষি যন্ত্রের জন্য এই সুবিধা থাকবে। 

দেশে কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারীদের সংগঠন এগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার দেশি মেশিনারিজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা টিবিএসকে বলেন, 'উদ্যোগটা ইতিবাচক। তবে উদ্যোক্তা তৈরিতে এক কোটি টাকা বিনিয়োগের সীমা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ গ্রামীণ পর্যায়ে ছোট উদ্যোক্তার জন্য এক কোটি টাকা বিনিয়োগ অনেক বড় বিষয়'।  

তিনি বলেন, 'যারা ইতোমধ্যে ছোট পরিসরে এসব ব্যবসা শুরু করেছে তাদেরকেও আয়কর অব্যাহতির সুবিধা দেয়া যেতে পারে'।  

বড় 'মাছচাষীদের' আয়কর বাড়ছে

মাছ চাষে ৩০ লাখ টাকার বেশি আয় করলেই তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে আসন্ন বাজেটে। বর্তমানে মাত্র ২০ লাখ টাকার ওপর আয় করলেই তাতে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন খাত থেকে আয়কৃত অর্থ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মৎস খাতের আয় হিসেবে দেখায়। যাতে করে কম আয়কর প্রদান করতে হয়। কারণ ব্যক্তি আয়করের সর্বোচ্চ করহার হলো ২৫ শতাংশ।

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতেই অর্থ মন্ত্রণালয় মৎস খাতের আয়ের ওপর নতুন করে করহার নির্ধারণ (থ্রেশহোল্ড) করছে। 

জানা গেছে, বিদ্যমান আইনে মৎস খাতে আয়ের প্রথম দশ লাখ টাকার ওপর কোন আয়কর দিতে হয়না এবং পরবর্তী ১০ লাখের ওপর ৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও অপরিবর্তিত থাকবে।   

বর্তমান আইনে প্রথম বিশ লাখ টাকার পরবর্তী অবশিষ্ট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দেয়ার বিধান রয়েছে। যা আগামী বাজেটে পরিবর্তন করে নতুন একটি থ্রেশহোল্ড যুক্ত করা হচ্ছে। নতুন থ্রেশহোল্ড অনুযায়ী প্রথম ২০ লাখের পরবর্তী ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী অবশিষ্ট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর ধার্য করা হচ্ছে।  

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.