করোনার প্রভাবে যশোরে মোটরসাইকেল বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে
যশোর জেলায় মোটরসাইকেল বিক্রির হার স্বাভাবিক সময়ে ভালো থাকলেও করোনার প্রভাবে এখন বিক্রি নেমে এসেছে অর্ধেকে। পরিস্থিতি কবে ভালো হবে সেই দুশ্চিন্তায় আছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, করোনাকালে বিক্রি কমলেও শো-রুম ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন তাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে গত এপ্রিল এবং মে মাস পুরোপুরি ব্যবসা বন্ধ ছিল। গ্রাহকরাও বকেয়া টাকা পরিশোধ করছেন না। ফলে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন উভয় সঙ্কটে।
যশোর জেলায় অর্ধশত মোটরসাইকেলের শোরুম রয়েছে; রয়েছে একাধিক সার্ভিস সেন্টারও। এ সব শোরুমে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় সাত শতাধিক মানুষের। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ রয়েছে শত কোটি টাকার বেশি।
যশোর রেলরোডে অবস্থিত টিভিএস মোটরসাইকেলের ডিলার ও খুলনা বিভাগীয় মোটরসাইকেল ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, আমাদের ১৫০ সিসির দামি বাইকগুলোতে ২০ হাজার টাকা ছাড় দিয়েও তেমন বিক্রি হচ্ছেনা। বেশিরভাগ ক্রেতা কম দামের ১০০ সিসি বাইক কিনছেন। এতে আমাদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মোটরসাইকল বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে।
''আগে যেখানে মাসে একশটি মোটরসাইকেল বিক্রি হতো, এখন সেখানে ৪০টি হচ্ছে। আবার বিক্রির পর মূল সমস্যা হচ্ছে কিস্তি আদায়। গ্রাহকরা ঠিকমত কিস্তির টাকা পরিশোধ করছেন না। অনেকে মার্চ মাস থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছেন'', যোগ করেন তিনি।
উত্তরা মোটরসের বাজাজ কোম্পানির ডিলার থ্রি-আর অটোর স্বত্তাধিকারী রাশিদুল হাসান শামিম জানান, একেতো বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে, সেই সঙ্গে মোটরসাইকেল সরবরাহ সংকটে পড়েছি।
''ভারতে করোনার হার বেশি থাকায় সেখানে বাজাজ কোম্পানি বাইক উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে গ্রাহকের চাহিদার পালসার ও ডিসকভার মডেলের বাইক নেই বললেই চলে। একই সঙ্গে গ্রাহকরা কিস্তির টাকাও পরিশোধ করছেন ঢিমেতালে। এতে ব্যবসায়ীক মন্দার মধ্যে পড়েছি'', বললেন রাশিদুল হাসান।
যশোরে হোন্ডার ডিলার ভেনাস অটোর স্বত্ত্বাধিকারী আবু শাহরিয়ার জানান, আমাদের শোরুমে ন্যূনতম ৯৭ হাজার টাকা থেকে চার লাখ ৮০ হাজার টাকার মোটরসাইকল রয়েছে। এর মধ্যে হোন্ডা হরনেট ১৫০ সিসি মোটরসাইকেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যার মূল্য এক লাখ ৮৯ হাজার ৯শ টাকা।
তিনি বলেন, করোনায় আমাদের বিক্রি ২৫ ভাগ কমেছে। শোরুম ভাড়া, কর্মচারী বেতনসহ সবকিছুর ব্যয় বাড়ায় চাপে রয়েছি।
সুজুকি মোটরসাইকেলের ডিলার নিউ যশোর ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী শরিফুল আলম জানান, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মোটরসাইকেল বিক্রি ৪০ ভাগ কমে এসেছে। কারণ করোনায় মানুষ নগদ টাকার সংকটে ভুগছে।
''স্বচ্ছলতা না থাকলে কেউ মোটরসাইকেল কেনে না। আগে সুজুকির চাহিদা ভালো ছিল। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই'', যোগ করেন তিনি।
বিআরটিএ যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা হয় ১২ হাজার ৩৬৬টি, এর মধ্যে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ১১ হাজার ৩৬৭টি। যা থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১৮ টাকা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট রেজিস্ট্রেশন হয় ১৩ হাজার ৮৪২টি, মোটরসাইকেল ছিল ১৩ হাজার ৭৬টি। রাজস্ব আদায় হয় ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ৩১২ টাকা। এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা হয় ১০ হাজার ৯০৩টি, মোটরসাইকেল ছিল ১০ হাজার ৪৪০টি; সরকার রাজস্ব পেয়েছিল ১৪ কোটি ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮৭ টাকা।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও গাড়ি আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান বলেন, এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে করোনার থাবা লাগেনি। সব ধরণের গাড়ি বিক্রিতে ধ্বস লেগেছে। আমাদের দেশে মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়ি বিক্রি হয় বাকিতে। করোনায় গ্রাহকরা কোনো টাকা পরিশোধ করছেন না। এতে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক চাপে পড়েছেন।
গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই মাসে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল এক হাজার ৪০৩টি, আগষ্টে ৬৭৪, সেপ্টেম্বর মাসে ৭১৮, অক্টোবরে ৮৫৩, নভেম্বরে ৭৯২, ডিসেম্বরে এক হাজার ৫৫৪, জানুয়ারিতে এক হাজার ৩৮৬, ফেরুয়ারিতে এক হাজার ৪৪৬, মার্চ মাসে ৯৬৬ এবং জুন মাসে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশ হয়েছে মাত্র ২১০টি।
বিআরটিএ যশোর ও নড়াইল সার্কেল অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) কাজী মো. মুরছালিন জানান, করোনার কারণে আমাদের এখানে সব ধরণের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কমে গেছে। বিশেষ করে কমেছে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন। গত এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে সবকিছু বন্ধ ছিল। এতে আমাদের রাজস্ব আদায়ও কমে গেছে। টাকার প্রবাহ কম হওয়ায় মানুষ গাড়ি কেনেনি।