করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত রাঙামাটির পর্যটন খাত, পাঁচ মাসে ক্ষতি ২৫ কোটি টাকা

অর্থনীতি

23 August, 2020, 01:10 pm
Last modified: 23 August, 2020, 03:32 pm
সাজেক, রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত সেতু, পলওয়ে পার্ক, রাঙামাটি পার্কের মতো স্পটে আগে যেখানে দৈনিক কয়েক লাখ টাকা আয় হত সেখানে বর্তমানে আয়ের পরিমাণ একেবারে শূন্য। গত ছয় মাস ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুরোপুরি বিপর্যস্ত রাঙামাটির পর্যটন খাত। পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে দীর্ঘ হচ্ছে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের লোকসানের তালিকা।

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের তথ্যমতে, গত পাঁচ মাসে রাঙামাটির পর্যটনসহ পর্যটন নির্ভর অন্যান্য ব্যবসা খাতে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ২৫ কোটি টাকা।

সাজেক, রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত সেতু, পলওয়ে পার্ক, রাঙামাটি পার্কের মতো স্পটে আগে যেখানে দৈনিক কয়েক লাখ টাকা আয় হত সেখানে বর্তমানে আয়ের পরিমাণ একেবারে শূন্য। গত ছয় মাস ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি টেক্সটাইল মার্কেটের বনানী টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপক তানসেন বড়ুয়া বলেন, পর্যটন মৌসুমে শুধু আমাদের দোকানে দৈনিক ৫০/৬০ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি হতো। তখন দোকানে ছয়জন কর্মচারীর প্রয়োজন হতো।

''বর্তমানে কোনো বেচাবিক্রি নেই। স্টাফ সবাইকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। দোকানপাট খুললেও পর্যটক না আসায় বেচাবিক্রি একেবারে নেই'',  বলেন তানসেন বড়–য়া।

রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতুর ঘাটে বোট ইজারাদার রমজান আলী বলেন, পর্যটক ছিল না গত পাঁচ মাস। ফলে তাদের আয় পুরোপুরি কমে গেছে। বর্তমানে কোনো কোনো বোট চলছে।

''রাঙামাটি শহরে এক হাজারের বেশি বোটের মালিক পর্যটক বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে। গত পাঁচ মাসে তাদের সবার আনুমানিক তিন কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে'' যোগ করেন তিনি।

''প্রতিমাসে আমার অন্তত একলাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আমার চেয়েও আরো বড় বড় হোটেল রয়েছে। তাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। সবারই একই অবস্থা। আয় না থাকায় হোটেলের অনেক স্টাফকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠাতে হয়েছে। বর্তমানে হোটেল দেখাশুনা করার মতো দুজন লোক রাখা হয়েছে'', বললেন রাঙামাটি শহরের হোটেল মতি মহলের মালিক সাইফুল আযম। 

শহরের হোটেল সুফিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচ মাস ধরে হোটেলের কোনো আয় নেই। কিন্তু শুধু স্টাফদের বেতন দিতে হয়েছে মাসে ৫০ হাজার টাকা। 

''এ অবস্থায় আয়কর বিভাগের লোকজন টাকা টাকা করতেছে। কোনো কথা মানে না তারা। আয়কর দিতেই হয়েছে আমাদের। এখন পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হলেও বাইরে থেকে কোনো মানুষ আসবে না। ফলে আয় শূন্যই থাকবে'', বললেন সাইফুল ইসলাম।

রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, বর্তমানে রাঙামাটি শহরে আবাসিক হোটেল রয়েছে ৪৫টি। বিগত পাঁচ মাসে এসব হোটেলে ক্ষতি প্রায় তিন কোটি টাকা। এখন প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে আমাদের।

রাঙামাটির সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মন বলেন, সাজেকে বর্তমানে ৮৪টি কটেজ রয়েছে। পর্যটক না আসায় বর্তমানে তারা লোকসান গুণছেন। গত পাঁচ মাসে সাজেকে শুধু কটেজ খাতে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকা।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়–য়া বলেন, করোনাকালে শুধু পর্যটন কমপ্লেক্সের ক্ষতি দেড় কোটি টাকার ওপরে। প্রতি মাসে গড়ে আমাদের ক্ষতি হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। বর্তমানে আমরা সীমিত আকারে মোটেল চালু করেছি। কিন্তু পর্যটক নেই।

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বেলায়েত হোসেন ভুইয়া বলেন, রাঙামাটি পর্যটন শহর হওয়ায় এখানে পর্যটনের ওপর অনেক ব্যবসা নির্ভর করে। কিন্তু করোনার কারণে এসব ব্যবসায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত পাঁচ মাসে জেলায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতে ক্ষতির পরিমান ২৫ কোটির টাকার ওপরে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, করোনার কারণে শুধু পর্যটন খাতে নয় জেলায় সব খাতে ক্ষতি হয়েছে। আমরা জেলার করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হলে পর্যটন কেন্দ্রগুলো সবার মতামতের ভিত্তিতে খুলে দেওয়া হবে এবং সেটি খুব শিগগির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.