করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি সিসিসিআই’র

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
12 March, 2021, 01:45 pm
Last modified: 12 March, 2021, 01:55 pm
আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সংক্রান্ত মামলা সংক্রান্ত দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে আলাদা বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাব রাখে সংগঠনটি।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল  আলম করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব বিবেচনায় ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন। একইভাবে নারী এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে আয়কর প্রদানকারীর ক্ষেত্রে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার এবং আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সংক্রান্ত মামলা সংক্রান্ত দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে আলাদা বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাব করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে সিসিসিআই আয়োজিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বন্দর নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে আয়োজিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম।

চেম্বার সভাপতি বলেন, 'ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ধার্য করা আছে। নিয়মানুযায়ী পরবর্তীকালে বাজারজাতকরণ এবং বিক্রির ক্ষেত্রে ওই কর সমন্বয় করার বিধান আছে। ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের হাজার হাজার কোটি টাকা দীর্ঘ দিন ধরে আটকে আছে রাজস্ব বিভাগে, যা ছয় মাসের মধ্যে সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা আছে। এসব প্রতিকূলতার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ৬০ দিনের মধ্যে সমন্বয় করে ব্যবসায়ীদের ফেরত দেওয়ার বিধান করা অত্যাবশ্যক।'

চেম্বার সভাপতি আয়কর অধ্যাদেশ, আয় কর আইন, লোকাল এলসি, ভোগ্যপণ্য আমদানি, উৎসে কর, শিল্পগ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো গ্রুপকে ঋণ খেলাপি করা, গাড়ির ট্যাক্স টোকেন, কোয়ার্টারলি ট্যাক্স টোকেন, কোয়াটারলি অডভান্স ট্যাক্স, আমদানিকৃত এফসিএল কন্টেইনার বন্দর থেকে দ্রুত ডেলিভারি ইত্যাদি বিষয়ে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, 'সরকারি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ও আসন্ন বাজেটে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবনা ও দাবিসমূহ যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হলে কাঙ্ক্ষিত জিডিপি অর্জন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে বলে আমরা দৃঢভাবে বিশ্বাস করি।'

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেছেন, 'শুধুমাত্র টেক্স কালেকশনই সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। স্থানীয় শিল্পের বিকাশ, কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ রক্ষা, স্বয়ংসম্পূর্ণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সরকারের উদ্দেশ্যে। দেশে যে পণ্যের বেশি প্রয়োজন, সে পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। স্থানীয় শিল্পের বিকাশের জন্য অনেক ক্ষেত্রে আমদানি পণ্যে ট্যাক্স বসাতে হয়।'

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'দেশের লবণ চাষীদের রক্ষায় শিল্পের জন্য সোডিয়াম সালফেট আমদানি সীমিত করতে হবে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রনালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে। যতটুকু শিল্পের চাহিদা, সেই অনুযায়ী ইমপোর্ট পারমিট দিতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'অনেক সময় করদাতাদের বুঝতে অসুবিধা হয়। কর নির্ধারণে আন্তর্জাতিক কিছু চুক্তির কারণে বাধ্যবাধকতা আছে। কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং হয়রানি বন্ধ করতে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসছি।' 

টুরিজম সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের প্রত্যাশা জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'টুরিস্টরা বেহিসেবি খরচ করে। এই শিল্প প্রচুর ভ্যালু অ্যাড হয়। তাই এই সেক্টরে প্রচুর রজস্ব আসবে। সেজন্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হয়। কক্সবাজার ঘিরে টুরিজম সেক্টরে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।'

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, 'অডিট রিপোর্টের জন্য আমরা অ্যাপস ডেভেলপ করেছি। অডিটের ডাটা ইনপুট দিলে কোড নাম্বার আসবে। নাম্বার ছাড়া অডিট রিপোর্ট গ্রহণ করব না। হিসাব স্বচ্ছ হলে রাজস্ব, কর নিয়ে ভয় নেই। সরকার কাভিড-১৯ ভ্যাকসিন এনেছে। ব্যবসা, অফিস, দৈনন্দিন কাজ আর বন্ধ করতে হবে না।'

চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (অর্থ) মোঃ কামরুল আমিন তার বক্তব্যে বলেন, 'বন্দরে ৯ হাজার টিইইউস পণ্য নিলামের অপেক্ষায় আছে। এগুলো দ্রুত নিলাম করলে বন্দরে জট কমবে। রপ্তানি কনটেইনারের জন্য ৪টি স্ক্যানার বসানোর কথা। আইএসপিএস কোড কমপ্লায়েন্সের বাস্তবায়নের জন্য এসব স্ক্যানার বসানো দরকার।'

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, মাসুদ সাদিক।

সভায় কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ, বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোরশেদ খোকা, রিহ্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বান্দরবান চেম্বারের অমল কান্তিদাশ এবং চিটাগাং উইম্যান চেম্বার, রাঙামাটি চেম্বার, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতি, ফার্নিচার মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। 

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোঃ ফখরুল আলম, কর কমিশনার সৈয়দ আবু দাউদ, ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন চেম্বারসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও প্রাক বাজেট মতবিনিময় সভায় অংশ নেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.