এসএমই ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বিকাশে একযোগে কাজ করবে ডি-৮ বিজনেস চেম্বার
বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছে উন্নয়নশীল ৮টি বৃহৎ ইসলামী দেশের সংগঠন ডি-৮ এর শীর্ষ বিজনেস ফোরাম।
অনলাইন ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত দশম ডি-৮ সম্মেলন ২০২১ এর প্রথম দিনে এসব বিষয়ে সম্মত হন ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর প্রধান প্রধান চেম্বারের নেতারা।
সম্মেলনে জোটভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়।
৫ এপ্রিল থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এবারের সম্মেলনের শুরু হয়েছে। চার দিনের এ সম্মেলনের শেষ দিন ৮ এপ্রিল জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হবে। শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্ক এই ৮ টি দেশ নিয়ে গঠিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোট হল ডি-৮।
ডি-৮ এর সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি বৈশ্বিক জিডিপির ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, দেশগুলোর জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিজনেস ফোরামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, "মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রাণবন্ত অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পেযেছে। ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর জন্য এখানে বিনিয়োগের বড় সুযোগ রয়েছে,"
তিনি বলেন, বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ রয়েছে ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর। ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে পরস্পরকে সহায়তার মাধ্যমে তা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ট্যারিফ এবং নন-ট্যারিফ সংক্রান্ত বাধা দূর করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিজনেস ফোরামে ডি-৮ সিসিআই এবং টব প্রেসিডেন্ট তুরস্কের রিফাত হিযারজিক্লোউলো এর কাছ থেকে চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এফবিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
জোটভুক্ত দেশগুলোর মোট জিডিপি ও জনসংখ্যার কথা উল্লেখপূর্বক শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, এটি এ অঞ্চলের গ্রাহক ভিত্তিক পরিষেবা ও পণ্যের পাশাপাশি সহজাত বৃদ্ধির সম্ভাবনার প্রকাশ।
"একারণে আমি বিশ্বাস করি, ডি -৮ সিসিআই নিজস্ব নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা ছাড়াও নিজ দেশের সরকারের সাথে কার্যকর সহযোগিতা এবং অংশীদারত্বের মাধ্যমে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে,"
ইউনিয়ন অব চেম্বারস অ্যান্ড কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অব টার্কির প্রেসিডেন্ট এবং ডি-৮ সিসিআই'র সাবেক চেয়ারপার্সন রিফাত হিযারজিক্লোউলো বলেন, এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিমকে ডি-৮ সিসিআই এর চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব গ্রহণ করায় অভিনন্দন জানাই। চেম্বারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আপনার সফলতা কামনা করছি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, "আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে আগামীতে শিল্প খাতে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে,"
ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। এর সবগুলোই ব্যবহারকারী বান্ধব হিসেবে প্রস্তুত হচ্ছে। কোনো সমস্যা ছাড়াই এখানে বিনিয়োগ করা যাবে।"
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সারা বিশ্ব দুর্ভাগ্যজনক সমস্যায় পড়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় ডি-৮ কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী রুশার পেকান বলেন, ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলো একত্রে কাজ করলে সহজে করোনার আঘাত মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
"তবে এজন্য শুল্ক ও সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়াদি আরও বেশি ব্যবসা বান্ধব করতে হবে। নন ট্যাক্স বাধা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
ইরান চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইনস অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার (আইসিসিআইএমএ)-এর উপ-প্রধান ড. মোহাম্মদ রেজা কারবাসি বলেন, প্রযুক্তি খাতের আদর্শ এখন ইরান।
"আমাদের দেশে চার হাজারের বেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জ্ঞান ভিত্তিক গবেষণার জন্য ৫ হাজার ৮৫৬ টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ দক্ষ জনবল রয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলো।"
উদ্ভাবন, টেক ট্রেড সেন্টার স্থাপন, স্থানীয় ব্র্যান্ডকে শক্তিশালী করা, পর্যটন খাতের উন্নয়ন, হাইটেক প্রোডাক্ট উৎপাদন ও যৌথ প্রযুক্তি তহবিল গঠনে দেশগুলো পরস্পরের সাথে কাজ করতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মালেয়শিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট তান স্রি তার লিওং ইয়াপ বলেন, ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলো জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ তরুণ, তারা স্টার্ট-আপ এবং অন্যান্য অনেক অনন্য ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং হোয়াটস অ্যাপের মতো অন্যান্য সামাজিক অ্যাপে বেশ সক্রিয়। ব্যবসায়িক আইডিয়া বিনিময় এবং ভবিষ্যতে আমাদের ব্যবসার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমরা উপকৃত হব।