এপ্রিলে আবারও ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে রেমিট্যান্স আয়
জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কম থাকলেও এপ্রিলে আবারও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
এর আগে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চার মাস রেমিটেন্স প্রবাহ ছিল ২০০ কোটি ডলারের বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছে ২.০৭ বিলিয়ন ডলার। গেল বছরের এপ্রিলে এই প্রবাহ ছিল ১.০৯ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস (জুলাই-এপ্রিল) সময়ে মোট রেমিট্যান্স আয় হয়েছে ২০.৬৭ বিলিয়ন ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি।
গেল অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে রেমিট্যান্স আয় ছিল ১৪.৮৭ বিলিয়ন ডলার।
রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেশন মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, করোনায় কিছু মানুষ দেশে ফিরে আসলেও, যেসব প্রবাসীরা বিদেশে আছেন তাদের তুলনায় ফেরত আসার সংখ্যা খুব কম।
তিনি বলেন, "প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়ে দিয়েছেন। হুন্ডি বন্ধ থাকায় এখন বৈধ পথের বিকল্প নেই,"
হুন্ডি বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, দেশে ব্যবসা মন্দা থাকায় আমদানি কম হচ্ছে, তাই এর বিপরীতে পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে যে হুন্ডি হতো তার প্রয়োজন পড়ছে না।
এছাড়া স্বর্ণ চোরাচালান ও ভিসা কেনাবেচা কমে যাওয়াতেও হুন্ডি বন্ধ হয়ে গেছে। এই দুটি ক্ষেত্রেই হুন্ডির ব্যবহার হতো বলে তিনি জানান। তাছাড়া ২ শতাংশ প্রণোদনা যুক্ত হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে বলে জানান তিনি।
এরপরও রেমিট্যান্সের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রোজা এবং ইদকে সামনে রেখেই প্রবাসীরা দেশে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। তারই প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্স আয়ে।
তবে গেল বছরের এপ্রিলের তুলনায় এই বছরের এপ্রিলে প্রায় দ্বিগুণ বেশি রেমিট্যান্স আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর একমাত্র কারণ অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বন্ধ হওয়া।
তবে আসন্ন কোরবানি ইদের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মানসুর।
তিনি বলেন, রেমিট্যান্সের এই উচ্চ প্রবাহ টেকসই নয়। "পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এর পরিমাণ কমে আসবে,"
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, "সরকার রেমিট্যান্স এর বিপরীতে প্রণোদনার হার বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করবে বলে শোনা যাচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে সরকারকে রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাবদ খরচ বাড়াতে হবে।"
মহামারির সময় দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
১ এপ্রিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গেল বছরের মার্চ থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন। তাদের মধ্যে ৪৭ ভাগই বেকার।
কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে তারা সামাজিক এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
রেমিট্যান্সের প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদেও। রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গেল বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) রিজার্ভের স্থিতি দাঁড়িয়েছিল ৪৪.৯৫ বিলিয়ন ডলার।
রোববার (২ মে) যদি বড় কোন আমদানি ব্যয় পরিশোধ না করা হয়ে থাকে, তাহলে ওই দিনই প্রথমবারের মত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। সোমবার এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গেল বছরের ৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইল ফলক ছুঁয়েছিল। এরপর চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এবার ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইল ফলক ছুঁতে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে না বললেই চলে, তার প্রভাব পড়ছে রিজার্ভে। "শুধু রিজার্ভ বাড়লেই সামষ্টিক অর্থনীতি (ম্যাক্রো ইকনোমি) স্থিতিশীল থাকবে এটি বলা ঠিক নয়। বরং বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।"
অন্যদিকে আহসান এইচ মনসুর বলেন, "করোনার কারণে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া বন্ধ। এছাড়া সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এমনকি ভারতের চিকিৎসা নিতেও যেতে পারছেন না অনেকে। এসবের প্রভাবে ব্যাপক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে না, যার প্রভাবে রিজার্ভ বাড়ছে।"