ইভ্যালি: পঞ্জি স্কিমের অগ্রদূতের উত্থান ও পতন

অর্থনীতি

16 September, 2021, 11:20 pm
Last modified: 22 September, 2021, 04:41 pm
বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় অর্থ আত্মসাতের মামলা করেছেন ইভ্যালির একজন গ্রাহক; যার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

বিভিন্ন সময়ে চমকপ্রদ ছাড়ের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ই-কমার্স সাইট ইভ্যালিতে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন আরেফ বাকের। চলতি বছরের ২৯ মে থেকে ১৬ জুনের মধ্যে করা এসব অর্ডারের বিপরীতে ইভ্যালিকে তিনি পরিশোধ করেছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। ইভ্যালির অঙ্গীকার ছিলো- পণ্যগুলো অর্ডারের ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

তবে নানাভাবে যোগাযোগের পর 'দিচ্ছি-দেব' আশ্বাসে বিরক্ত হয়ে পণ্য অর্ডারের ৮৫ দিন পর ধানমন্ডির ১৪ নম্বর সড়কে ইভ্যালির অফিসে যান আরেফ বাকের। তখন সেখানে তাকে মুখোমুখি হতে হয় আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির। ইভ্যালিতে পণ্যের জন্য অর্ডার করা আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সেখানে কথা বলতে গেলে ইভ্যালি অফিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু হয় তাদের। এরপর সেখানে আসেন ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল। তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন রাসেল। একপর্যায়ে তিনি তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এ ঘটনায় আরেফ ও তার বন্ধুরা আশ্রয় নেন আইনের। বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় হাজির হয়ে তারা অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন ইভ্যালির সিইও রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে। মামলার এজাহারে তারা এভাবে ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছেন।

মামলাটি নথিভুক্ত করার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব। এরপর সেখান থেকে বিকেলেই তাদের র‍্যাব সদরদপ্তরে নেওয়া হয়।

ক্যাশব্যাক আর ডিসকাউন্টের ফাঁদ পেতে যেভাবে উত্থান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক ছাত্র মোহাম্মদ রাসেল তার কর্মজীবন শুরু করেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরির মাধ্যমে। ৬ বছর ব্যাংকে চাকরির পর সেটি ছেড়ে বাচ্চাদের ডায়াপার বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠা করেন ই-কমার্স সাইট ইভ্যালি। শুরুতেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে তিনি চালু করেন ক্যাশব্যাক অফার। এ অফারের আওতায় পণ্যভেদে ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পেতেন গ্রাহকরা। পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা জমা হত ইভ্যালির ভার্চুয়াল একাউন্ট ই-ওয়ালেটে। এরপর সেই ভার্চুয়াল টাকার সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে নগদ টাকা দিয়ে পণ্যের অর্ডার করতে পারতেন গ্রাহকরা। 

টাকা ক্যাশব্যাকের এমন আকর্ষণীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে প্রচুর পরিমাণে গ্রাহক ইভ্যালি থেকে কেনাকাটা শুরু করেন। এরপর 'সাইক্লোন' নামে একটি অফারের মাধ্যমে বিশাল ছাড়ের ঘোষণা দেন রাসেল। সেখানেও পণ্যভেদে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হতো। 

এরমধ্যে ইভ্যালিকে জনপ্রিয় করতে রাসেল প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পন্সর, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে স্পন্সর করা এবং তারকা ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রতিষ্ঠানটির পণ্যদূত বানানো শুরু করে।

কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের এই ডামাডোলের মধ্যে পণ্যের ডেলিভারি নিয়ে শুরু হয় টালবাহানা। ৪৫ দিনের মধ্যে এসব পণ্য ডেলিভারি করার কথা থাকলেও, তা কখনো কখনো তিন মাস এমনকি ছয় মাসও ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। অর্থনীতির শাস্ত্রে 'পঞ্জি স্কিম' নামে যে প্রতারণার ফাঁদের কথা বলা হয়, সেটিই অনুসরণ শুরু করেন রাসেল। নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে পুরনো গ্রাহক ও মার্চেন্টদের টাকা পরিশোধ শুরু করে ই-কমার্স কোম্পানিটি।

পরবর্তীতে চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির বকেয়ার পরিমাণ ৪০৩.৮০ কোটি টাকা। অথচ প্রতিষ্ঠানটির চলতি সম্পদ মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল, এত অল্প চলতি সম্পদ দিয়ে কোনোভাবেই এই বকেয়া পরিশোধের সক্ষমতা নেই কোম্পানিটির। এরপরই নড়েচড়ে বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও ইভ্যালির দুঃস্বপ্নের শুরু

বাংলাদেশের ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তা চলতি বছরের জুনে ইভ্যালির কার্যক্রম পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। গত ২২ জুন সেটি প্রথমবারের মতো প্রকাশ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা।

ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ইভ্যালির সকল চলতি সম্পদ দিয়ে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের বকেয়া অর্থের মাত্র ১৬.১৪% পরিশোধ করা সম্ভব হবে। আরও ৩৩৮.৬২ কোটি টাকার সমপরিমাণ বকেয়া টাকা অপরিশোধিত থেকে যাবে।

'ইভ্যালির চলতি দায় ও লোকসান দুটিই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং কোম্পানিটি চলতি দায় ও লোকসানের দুষ্ট চক্রে বাঁধা পড়েছে' উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন বলেছিল, 'ক্রমাগতভাবে সৃষ্ট দায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে না থাকার ঝূঁকি তৈরি হচ্ছে।'

গ্রাহক আকৃষ্ট করতে ইভ্যালির লোকসানে পণ্য বিক্রির কারণে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, 'বিপুল পরিমাণ লোকসানে পণ্য বিক্রির ফলে ই-কমার্স ব্যবসায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে, যা অন্য কোম্পানিগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণে উৎসাহিত করবে। ফলে ভালো ও সৎ ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং এক সময় এইখাতের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।'

এরপর আলাদা সুপারিশে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছিল, ইভ্যালির প্রকৃত বকেয়ার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। কারণ ইভ্যালি তাদের রেপ্লিকা ডাটাবেইজে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলকে অনুসন্ধান চালানোর সুযোগ দেয়নি।

একে একে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সরে যাওয়া

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের পর ইভ্যালি ও একই মডেলে ব্যবসা করা ১০টি ই-কমার্স সাইটের সঙ্গে লেনদেন স্থগিত শুরু করে ব্যাংক এবং আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল- ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউকম, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট এবং নিডস। 

সবার আগে ২২ জুন এসব ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কিনতে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করার জন্য নিজেদের গ্রাহকদের নির্দেশনা দেয় ব্র্যাক ব্যাংক।

এরপর সে তালিকায় যোগ দেয় ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক এবং মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। 

এ ঘটনা আলোচনায় আসার পর ট্রেন্ডজ, রঙ বাংলাদেশ, আর্টিসান আউটফিটার্স, ফিট এলিগ্যান্স, রিও ইন্টারন্যাশনালের মতো ব্র্যান্ডগুলো ইভ্যালির গিফট ভাউচার গ্রহণ স্থগিত করে দেয়। এছাড়া অন্যান্য মার্চেন্টরাও বকেয়া টাকার জন্য চাপ দিতে শুরু করে ইভ্যালিকে।

র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তারের পর ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন। ছবি: সালাহ উদ্দিন আহমেদ পলাশ/ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

এর মধ্যে পণ্য না পেয়ে বারবার ইভ্যালি অফিসে গ্রাহকরা ধর্না দেওয়া শুরু করলে, ইভ্যালি তাদের টাকা রিফান্ডের আশ্বাস দেয়। 

গত জানুয়ারি থেকে ক্রেতারা যেসব পণ্যের অর্ডার দিয়ে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেছেন, সময়মত পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হয়ে যেসব ক্রেতাকে রিফান্ড চেক দেয় ইভ্যালি। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকায় সেগুলো ক্যাশ হয়নি বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান বহু গ্রাহক। কম মূল্যে ইভ্যালির দেওয়া চেক বিক্রির জন্য অনেক ক্রেতা ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দেন।

এরপর গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গত ১৫ জুলাই নিজেদের সংগঠন থেকে ইভ্যালির সদস্যপদ স্থগিত করার বিষয়ে নোটিশ পাঠায় ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

নিজ কর্মীদের জিম্মি

অগ্রিম টাকা ও পণ্য নিয়ে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের অনিশ্চয়তায় রাখার মধ্যে নিজ কর্মীদেরও জিম্মি করেছিল বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটি।

প্রত্যেক কর্মীকে মাসে ৫০ লাখ টাকার নতুন সেলার আনার টার্গেট দিয়ে ২৩ আগস্ট এক সভায় ইভ্যালির সিও মোহাম্মদ রাসেল বলেছিলেন, যারা প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকার সেলার আনতে পারবেন না, তারা যেনো চাকরি ছেড়ে চলে যান।

জুলাই থেকে বকেয়া থাকা বেতন-ভাতা আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের আগে হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলেও সেসময় জানিয়ে দেন তিনি।

সরকারের হস্তক্ষেপ

গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি যে পরিমাণ অর্থ নিয়েছে তারমধ্যে ৩৩৮.৬২ কোটি টাকার কোনো হদিস খুঁজে না পাওয়ায়, এই টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা থেকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলা করতে গত ৬ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এরপর ওই টাকার সন্ধানে ৮ জুলাই তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৯ জুলাই সরকারের এই সংস্থাটি ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তার স্বামী ও কোম্পানির সিইও মোহাম্মদ রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তদন্ত চলমান থাকায় একই নিষেধাজ্ঞা আসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকেও।

ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি ও গ্রাহক ভোগান্তি কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে গত ১৯ জুলাই ই-কমার্স কোম্পানিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ইভ্যালি কীভাবে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের বিশাল অংকের এই দায় মেটাবে তার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয় সেই নোটিশে।

এই বিষয়টি ব্যাখা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬ মাস সময় চায় ইভ্যালি। তবে এর জবাবে প্রতিষ্ঠানটিকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সময় দেয় মন্ত্রণালয়।

এরমধ্যে ৮ আগস্ট ইভ্যালির ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে ৯ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
 
ওই কমিটিতে রাখা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য-প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিনিধিদের।

এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সিইও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানান, গ্রাহকদের কাছে ৩১১ কোটি এবং মার্চেন্টদের কাছে ২০৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টার কারণে ইভ্যালির কেলেঙ্কারি যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন নতুন করে 'ছলচাতুরির' আশ্রয় নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুকেও স্ট্যাস্টাস দিয়ে গত ২৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সিইও মোহাম্মদ রাসেল জানান, বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপ ইভ্যালিতে ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে।

তবে পরবর্তীতে যমুনা সরাসরি জানিয়ে দেয়, তারা ইভ্যালিতে কোনো বিনিয়োগ করছে না।

এরপর গত মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওই কমিটি জানায়, ইভ্যালিসহ ১০ কোম্পানি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ভোক্তা অধিকার আইন ও দণ্ডবিধি আইন লঙ্ঘন করেছে।

আইন ভঙ্গের কারণে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করে কমিটি।

কমিটির সদস্য এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "জনগণকে প্রটেকশন দেওয়ার কোনো নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারছি না। তবে সরকার চেষ্টা করবে গ্রাহকদের পাওনা বা পণ্য যাতে বুঝে পায়। মার্চেন্টদের ক্ষেত্রেও তাই। তবে ইভ্যালি যদি টাকা পাচার করে থাকে বা সেই টাকা উদ্ধার করা না যায় তাহলে হয়তো বিষয়টি কঠিন হবে। তবে গ্রাহকদের স্বার্থকেই আমরা অগ্রাধিকার দেবো। অপরাধী যাতে শাস্তি পায় সেটা আমাদের বিবেচনায় আছে।"

এরমধ্যে বুধবার রাতে গুলশান থানায় অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন ইভ্যালির গ্রাহক আরেফ বাকের ও তার বন্ধুরা; যার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.